রাজশাহী: করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে গেল শুক্রবার (১১ জুন) থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এর প্রভাবে রাজশাহীতে আমের দাম ও ক্রেতা কমতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন জাত আমখ্যাত গোপালভোগ ও খিরসাপাত (হিমসাগর) এবং ল্যাংড়া জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্য গোপালভোগ আম প্রায় শেষ। পুরোদমে বাজারে রয়েছে হিমসাগর আম। আর চলতি সপ্তাহেই উঠতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম। কিন্তু হাটে আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এমনিতেই দেশে লকডাউন চলছে। তার ওপর রাজশাহী শহরে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুন) আমের হাট বানেশ্বরে দেখা যায়, গাছ থেকে নামানো আম বিক্রির জন্য হাটে আনছেন বাগান মালিকরা। গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়াসহ বাহারি জাতের আমের সরবরাহ বেড়েছে আমের হাটে। সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাহনে ক্যারাটে ভরা আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষায় বাগান মালিকরা। তবে ক্রেতা না আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচায় ছেদ পড়েছে। লকডাউন ঘোষণার আগে ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও এখন বানেশ্বর হাট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।
সোমবার বানেশ্বর হাটে ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া খিরসাপাত ১ হাজার ৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ এবং গোপালভোগ আম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রধানতম এই আমের মোকাম থেকে ঢাকা বা রাজশাহীর মূল শহরে নিয়ে যারা আম বিক্রি করছেন তারা আবার আম বেশি দরেই বিক্রি করছেন।

তিনি আরও বলেন, পুঠিয়ার এই বানেশ্বর হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে দূর-দূরান্তের ক্রেতা নেই, আবার রাজশাহী শহর থেকেও কেউ আসতে পারছেনা। তাই আড়তদাররা কম দামে আম কেনার সুযোগ নিচ্ছেন।
আম ব্যবসায়ী নাহিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনে দূরের পাইকাররা আসতে পারছেন না। এতে পড়ে গেছে দর। লকডাউনের আগে দৈনিক ৩০-৪০ মণ আম বিক্রি করতাম। বর্তমানে ১২-১৫ মণ আম বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে আমের দাম মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আমের বাগান মালিক জুয়েল রানা বলেন, ১০ বিঘা আমের বাগান কিনেছিলাম। আমের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে ক্রেতা সঙ্কটে আমের দাম পাচ্ছি না। দাম পড়ে যাওয়ার কারণে আম বিক্রির যে টাকা আশা করেছিলাম তা সম্ভবত পূরণ হবে না।
পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের ইজাদার ওসমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, একদিনে কঠোর লকডাউন আরেক দিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি! সব মিলিয়ে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এই আমের মোকামে এখন আমের ক্রেতা কম। তাই ব্যবসায়ীরা কম দামেই আম বিক্রি করছেন।

এদিকে বানেশ্বর হাটের মত রাজশাহীর অন্যসব আমের বাজারেও বেচাকেনায় মন্দা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহানগরের বিনোদপুর এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল জহির বাংলানিউজকে বলেন, পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট থেকে আম কিনে এখানে আম বিক্রি করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে খুব সমস্যা হয়ে গেছে। মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তাই ব্যবসাও খুব খারাপ যাচ্ছে।
শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার আম ব্যবসায়ী শফিউর রহমান বলেন, লকডাউনের কারণে বেশিক্ষণ দোকান খোলা রাখতে পারছেন না। লকডাউনের পর থেকে ক্রেতা নাই। বাজারে ক্রেতা না থাকায় অনেক আম ব্যবসায়ীরাই এখন ভ্যানে করে শহরে কম দামে আম বিক্রি করছেন। তাই আমের দোকনগুলোতে চাপ কম। এখন আম নিয়ে বিপদে আছেন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন, করোনা সংক্রমণের কারণে আম বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আর জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিলেও আম ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সব ধরনের ছাড় রয়েছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বিঘ্নে আম পরিবহন ও বিক্রি করতে পারবেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশের ক্রেতারা এখন খুব সহজে আম কিনতে পাচ্ছেন। লকডাউন থাকলেও বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস, পিকআপভ্যান ও ট্রাকে করে আম পরিবহন করা যাচ্ছে আগের মতই। তবে, মানুষ বাইরে বেরোতে না পারায় সাধারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই এখন আমের দামও কিছুটা কম।
এখনও আম মৌসুমের অনেকটা সময় আছে। আর গতবারের তুলনায় এবার তুলনামূলকভাবে আমের দামও ভালো। লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বয়বসায়ীরা আমের ভালো দাম পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
এসএস/এএটি