ঢাকা: দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরও কোনো ধরনের আশ্বাস পাননি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাতেও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ সংলগ্ন সড়কে অবস্থান করবেন।
সোমবার রাত ১১টা নাগাদ দেখা যায়, শিক্ষকদের অনেকেই শীতের মধ্যে পথে শুয়ে পড়েছেন। সড়কের ওপর বস্তা-পলিথিনের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর পাতলা কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে আছেন। এরমধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন। কেউ কেউ এখনো বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের জন্য শিক্ষকেরা সরকারকে পুনরায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এরমধ্যে কোনো সমাধান না হলে তারা পুনরায় কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নূরুল আমিন বলেন, আজ সারা দিন আমাদের কোনো সমাধান দেওয়া হয়নি। আমরা হতাশ। গতকাল আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষাসচিব ও মাদরাসা অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আজ আমাদের সমাধান দেওয়া কথা ছিল।
তিনি বলেন, আমরা আজ রাতেও অবস্থান করছি। আগামীকাল দুপুর ২টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে জাতীয়করণ করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, আগামীকাল সমাধান আসতে পারে।
আরেক সংগঠক এজাজ কায়সার বলেন, অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আমরা আশা করছি, আগামীকাল ভালো কোনো সমাধান আসবে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকেরা রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তারা প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দিকে পদযাত্রা করেন।
আরও পড়ুন: ফের শাহবাগে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা, দিলেন ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
এ সময় শাহবাগে শিক্ষকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হন। তাদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। এতে অনেকেই আহত হন। তবে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহারের পর এখনো শিক্ষকরা সড়কে অবস্থান করছেন।
কী চান ইবতেদায়ির শিক্ষকেরা?
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় দুই ধরনের ইবতেদায়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে সংযুক্ত ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন পান। কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সরকারি বেতন পান না।
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য এজাজ কায়সার বলেন, ১৯৮৪ সালের ৭৮ অর্ডিনেন্স ১৭ এর ২ ধারা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাদরাসা বোর্ডের স্বীকৃতি পায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। তখন থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এনসিটিবির পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে শিক্ষকেরা ৫০০ টাকা ভাতাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয়করণ হয়েছে কিন্তু ইবতেদায়ি শিক্ষকদের জাতীয়করণ হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয়। সে ভাতাও সময়মতো পাওয়া যায় না।
নুরুল আমিন বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুরূপ। তবুও জাতীয়করণ করা হয়নি।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ির শিক্ষকেরা ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) স্টাডি রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষণা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন স্থগিত আদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা।
আরও রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন পাওয়া কোডবিহীন মাদরাসাগুলোকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা, পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন করা।
এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা করা; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলার অনুমোদনের ব্যবস্থার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫
এফএইচ/আরএইচ