ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচন গণতন্ত্রের অনিবার্য অংশ: সিইসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
নির্বাচন গণতন্ত্রের অনিবার্য অংশ: সিইসি

সিলেট: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অনিবার্য অংশ, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়, এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সরকার। প্রতিটি সরকারই কিন্তু সরকার, যদি তারা জনগণের ভোটে নির্বাচন হন।

নয়তো প্রকৃতপক্ষে তারা সরকার হবেন না। এরমধ্যে ইথিক্যাল ও লিগ্যাল ইলিম্যান্ট আছে।

শনিবার (১০ জুন)দুপুরে নগরের মেন্দিবাগস্থ জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা ১৬ মাস হয় দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। কোথাও মোটা দাগে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ঘটেনি। বরং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে চেষ্টা করছি।

সিইসি বলেন, দায়িত্বের ক্ষেত্রে পারস্পরিক অবস্থান দয়া করে অনুধাবন করবেন। সিলেটে যদি আচরণবিধি মেনে চলার একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলেন, তাহলে নির্বাচন আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হবে। আর স্থানীয়ভাবে বড় ধরনের অভিযোগ থাকলে সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কাছে যেতে প্রার্থীদের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। কেউ যদি বড় আকারে আচরণবিধি ভঙ্গ করেন,এমন আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই এমন কিছু করবেন না, যে কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের দিন ভোটাররা ভোট দিতে না আসলে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে আসা নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের তাগিদ দেন। আর সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে না। এখানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকে। তবে আমি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই নিশ্চতয়তা আপনারাও দিতে হবে। আজকে এখানে সরাসরি এসেছি সাক্ষী হতে, আপনারা আমাকে এবং আমি আপনাদের কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

তিনি প্রার্থীদের সংযম ধারণ করে অহিংস পদ্ধতিতে প্রচারণা চালাতে অনুরোধ করে বলেন, প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। কোনো ধরনের সহিংসতা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসিক নির্বাচনে যেন পেশিশক্তির ব্যবহার না হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এছাড়া একটি অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে কমিশন। আর ভোটের দিন এক অর্থে ভোটারের চেয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বেশি থাকবে।

সিইসি বলেন, আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকায় বসে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটের দিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। কোন ভোটার যদি সঠিক ভাবে ভোট দিতে না পারেন, তাহলে আপনারা চিৎকার করে দিবেন। আমরা সেখান থেকে বসে ব্যবস্থা নিব।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে অনেকেই অনেক কথাই বলেন। এটার কিন্তু পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর ভেতরে জিন-ভূত-প্রেত থাকে বলেও অনেকে বলেছেন। কিন্তু আমরা উজা-ঝাঁড়ফোক করেও কিছুই পাইনি।

সিইসি বলেন, আমরা দুইটা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। শরিয়ত ও মারিফত। শরিয়তের পদ্ধতিতে ভোট কোথাও যায় না। কিন্তু এখন মারিফতের পদ্ধতিতে এখানে ভোট দিলে ওখানে চলে যায় নিশ্চয়তা আমি বলতে পারবো না। কারণ আমি মারিফত বুঝি কম। কাজেই শরিয়তের পদ্ধতিতে কোনোভাবেই একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি নিজেই এর দায়ভার নিবো। তাই আপনারা সময় মতো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। কোনো বিলম্ব করবেন না।

এক প্রার্থীর ভুয়া ভোটার সম্পর্কে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, চূড়ান্ত ভোটার লিস্টে পরিবর্তন সাধন করতে হলে, আদালতে যেতে হবে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগে যখন খসড়া হয়, তখন কেন অভিযোগ করলেন না, প্রার্থীর কাছে পাল্টা জানতে চান সিইসি।

পলিথিনে মোড়ানো ব্যানার-পোস্টার নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা এত নিষ্ঠুর হতে পারবো না। এটা নিয়ে আইন আছে। পুলিশ চাইলে পলিথিনে মোড়ানো ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলতে পারে। আর এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। কেননা পলিথিন ব্যবহারে বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই জিনিসটা করা যাবে না।

প্রচারণায় ব্যাপারে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভবিষ্যতে প্রচারণার ধরন পাল্টে যেতে পারে। এটা সময়ের প্রয়োজনে হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি এতে যোগ হবে। প্রার্থীরা ফেসবুকে প্রচারণা চালাবে। এটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে আগামীতে কিভাবে প্রচারণার ধরন আনা যায়।

সিলেট নগরের ৭ নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খানের সশস্ত্র মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তার বিষয়ে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহম্মদ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইলিয়াস শরীফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদের, সিলেটের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ অন্যান্য মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল প্রার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

মতবিনিময় সভায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা বক্তব্য রাখেন। সভার শুরু থেকে ৪২টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ, অনুযোগ ও পরামর্শের জবাব দেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশন সচিব। সভায় নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশনে আগামী ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।