ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসিতে অগ্নিকাণ্ড: ওয়্যারিং ত্রুটিপূর্ণ ছিল

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
ইসিতে অগ্নিকাণ্ড: ওয়্যারিং ত্রুটিপূর্ণ ছিল আগুনে পুড়ে যায় অনেক গুরুত্বপূণ নথি ও ইভিএম মেশিন

ঢাকা: নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণ দেখিয়েছে প্রতিবেদনে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ত্রুটিপূর্ণ ছিল। যে কায়দায় তারের ব্যবহার, সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে তা করা হয়নি।

গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার পরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফারায় সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে রাত ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে ৪ হাজার ৫শ’ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) রাখা ছিল। সেখান থেকে ৩ কোটির বেশি টাকার এই ভোটযন্ত্রের ক্ষতি হয়েছে; যেখানে ৪ হাজার কোটি টাকার ইভিএম, সংরক্ষণের জায়গা নেই, এমন শিরোনামে বাংলানিউজে আগেই সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।

নির্বাচন ভবন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেখানে শুধু ইভিএমই নয়, রয়েছে ১০ কোটির বেশি নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার। সেদিনের অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ রূপ নিলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারতো। এখানে রয়েছে নির্বাচনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও।

ভবনের বেজমেন্টের অগ্নিকাণ্ড ঘটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা একটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তা হলো-ওয়্যারিং।

তাদের মতে, বৈদ্যুতিক তার, সুইচসহ ফিটিংসগুলো নিন্মমানের ছিল। এছাড়া তারের সংযোগ, সামগ্রিকভাবে সুরক্ষিত ছিল না। এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ৩শ’ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভবন। উদ্বোধনের চার বছরও হয়নি। এতো তাড়াতাড়ি শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কথা নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, ওয়্যারিংয়ের কাজে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, সেটাও দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারে কমিশন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসবে আগামী সপ্তাহে। ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে যে পাঁচ সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে ওয়্যারিং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সিস্টেম লাগানোর কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন ভবনে ইভিএম কাস্টমাইজ  কক্ষের মতো অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলোতে সার্বক্ষণিক স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখা, কাস্টমাইজসহ অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলো সম্পূর্ণরুপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় আনা,  বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, যেকোনো পূর্ত এবং ইএম (বিদ্যুৎ) কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে অধিকতর সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, ইভিএম কাস্টমাইজেশন কক্ষটির অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজের ক্ষেত্রে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাল্টিপ্লাগ, তার, সুইচ, সকেট ব্যবহার করা এবং নতুন বৈদ্যুতিক সংযোগ ও প্রাত্যহিক ব্যবহার ক্যালকুলেশন করে ঠিক করা।

এছাড়াও প্রতি ছয় মাস পরপর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (বিইসি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক লাইন ও ফায়ার সিস্টেম পরীক্ষা করা, অত্যাধুনিক ইন্টেগ্রেটেড বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থাকরণ ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসও একটি প্রতিবেদন দেবে। এসবের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।