ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ডেপুটি স্পিকারের আসনে উপ-নির্বাচন: কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
ডেপুটি স্পিকারের আসনে উপ-নির্বাচন: কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? বাঁ থেকে বুবলী, রিপন, পারভেজ, সুশীল, রঞ্জু, ফারুক

গাইবান্ধা: শূন্য ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পেতে পারেন, তা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে তুমুল আগ্রহ-গুঞ্জন।

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন-প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের মেয়ে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন তারা।

দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, সাঘাটা-ফুলছড়ি দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় এ আসন গঠিত।  

এলাকায় হাট-বাজারের চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত পর্যন্ত যেখানেই জনসমাগম, সেখানেই চলছে একই আলোচনা। অতীতে কোনো প্রার্থী-প্রার্থীর পরিবার এলাকায় কি অবদান রেখেছেন, ভবিষ্যতে সাঘাটা-ফুলছড়ির মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, এসব নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মূলত তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দুই প্রার্থীরই রয়েছে শক্ত অবস্থান।

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ে আরও রয়েছেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ ও যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার।

বাবার স্মৃতিচারণ করে ফারজানা রাব্বী বুবলী বলেন, যে মানুষটা জীবনের পুরোটা সময় নিবেদিত প্রাণ হিসেবে সাঘাটা-ফুলছড়ির সর্বস্তরের মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন, এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে তিনি সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বাবার সম্মানে আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই।  

তিনি আরও বলেন, ফুলছড়িতে তার শ্বশুরবাড়ি, সাঘাটায় বাবার বাড়ি। নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার ভোটার তার আত্মীয়স্বজন। তাই নির্বাচনে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন।

মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবন থেকে দলের প্রতি অনুগত থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশ নেব।

ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, 
নির্বাচিত হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টানেল নির্মাণে উদ্যোগী হব। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করব। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে গাইবান্ধা শহর থেকে সোনাতলা হয়ে মোকামতলা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ এবং বোনারপাড়া রেলজংশন আধুনিকায়নসহ দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করব।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। যে কোনো পরিস্থিতিতে অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা হইনি। দলকে ভালোবাসি, দলীয় সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। এর আগেও দুইবার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম, এবারও করব। দল মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় অবদান রাখতে চাই। সে লক্ষ্যে আসন্ন উপ-নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশ ও মানুষের কল্যাণে যে অবদান রেখেছে, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষ বুঝতে পেরেছে, আওয়মী লীগ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয় সুনিশ্চিত।

অপরদিকে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার ও জাপা থেকে সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

বিএনপি নেতা ফারুক আলম সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রার্থী হব। তবে অতীতের ধারাবাহিকতায় ভোটের আগের রাতে সব ভোট কেটে নেওয়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির সংশয় থেকেই যায়।

জাতীয় পার্টির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ভোট নিয়ে সংশয় আছে। তা ছাড়া ইভিএমে ভোট হলে পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। তাই পার্টির সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচনে লড়ব।  

আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে গত ২৩ জুলাই।  

প্রসঙ্গত: অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া টানা নয় মাস ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে গত ২২ জুলাই দিনগত রাত ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশর পাড়ি জমান। এর পরদিন তার আসন শূন্য ঘোষণা করে ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।