ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

বিসিসি নির্বাচন: ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা রুপনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা রুপনের

বরিশাল: প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে এসে ৩০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।

শনিবার (১০ জুন) বেলা ২টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হল রুমে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, আমার পিতা বরিশালের সাবেক সফল মেয়র মরহুম আহসান হাবিব কামাল দীর্ঘদিন আপনাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তার নীতি আদর্শ বুকে ধারণ করে আপনাদের সেবক হিসাবে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারার কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য নিয়ে আমি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছি। পারিবারিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত নীতি আদর্শের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নগরবাসীর দুঃখ দুর্দশা লাঘব করে সবার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটাতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমি শতভাগ নিষ্ঠা, সততা ও অর্জিত মেধা দিয়ে একটি আধুনিক পরিবেশ বান্ধব, ডিজিটাল, মানবিক বরিশাল নগর উপহার দিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হবে আমার মূল কর্মপ্রেরণা।

এ সময় তিনি ৩০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। যার মধ্যে রয়েছে- বরিশাল সিটি করপোরেশনকে মানবিক ও সবুজ নগরীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। সাধারণ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ত্রৈমাসিক 'মেয়রের জবাবদিহিতা, নগরবাসীর অধিকার' কর্মসূচি চালু করা। সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা। নগরীর হাট বাজারের ইজারা, সিটি করপোরেশনের দরপত্র ও সম্পদ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা। সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি পৌরকর আরোপ না করা ও যাদের ওপর অধিক কর ধার্য করা হয়েছে, তা পুনরায় নির্ধারণ করা। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও আধুনিকায়ন করা। প্রতিটি ওয়ার্ডে যথাসময়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করে নগরকে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখা এবং আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ ও নগরী থেকে ময়লা অন্যত্র স্থানান্তর করা। পানযোগ্য সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনায় পানি শোধনাগার চালুসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও অনুমোদিত ডিপ টিউবওয়েল সিটি করপোরেশনে যে অর্থ জমা দেওয়া হয়, তা বাতিল করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বরিশাল নগরীর প্রতিটি খাল দখলমুক্ত করে প্রবহমান পানির সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করা।

এছাড়া আরও আছে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা অর্থাৎ নগরীর প্রতিটি সড়ক ও ড্রেন জনগণের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বাধুনিক উপায়ে নির্মাণ করা। সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে নগরীর সব ব্যাটারি চালিত যানবাহনগুলোকে একটি আধুনিক ও মানবিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা। প্রতিটি সড়কে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি স্থাপন করা। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও নগরীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা। নগরীতে সৌন্দর্য বর্ধনে স্থাপনা নির্মাণ করা। ইভটিজিং ও মাদকমুক্ত নগরী গড়ার লক্ষ্যে আন্তরিক প্রচেষ্টা ও যুদ্ধ ঘোষণা করা। অসচ্ছল নারীদের কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগর মাতৃসদন হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা। প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অংশগ্রহণে মাসিক মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা।

সব ধর্মের মানুষের সমান ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোসহ পবিত্র মাহে রমজানে নগরীর প্রতিটি মসজিদ ও মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপসানালয়গুলোয় (স্ব স্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহে) সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া।

মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে সহায়তার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিবহন সুবিধার ব্যবস্থা করা। নগরীর মধ্যে কোনো বেওয়ারিশ লাশ যদি পাওয়া যায় তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নগরীর মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বাৎসরিক শিক্ষা ভাতা ও বৃত্তি চালু করা। তরুণ বেকার যুবক-যুবতীদের কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সিটি করপোরেশনে 'আইসিটি ও আউটসোর্সিং সহায়তা কেন্দ্র' সেল প্রতিষ্ঠা করা। হকারদের পুনর্বাসন ও হোলি ডে মার্কেট চালু করা। অনুন্নত কলোনি ও বাস্তুহারাদের সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেওয়া। বর্ধিত এলাকায় জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়কবাতিসহ সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতীয় বীর সন্তানদের পৌরকর ও পানির বিল সম্পূর্ণ মকুফ করা। দখল হয়ে যাওয়া খেলার মাঠ উদ্ধার করা ও বিশেষ অঞ্চল ভিত্তিক শিশু পার্ক নির্মাণ করা। বিসিক শিল্পনগরীর আধুনিকায়নসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।

উল্লেখ্য, সাবেক কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন। বিএনপির কোনো কমিটিতে পদ না থাকলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে ছাত্রজীবনে জড়িত ছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এমএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।