ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

শ্রীবরদী থেকে এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান ও জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুরের শ্রীবরদী পৌরসভা থেকে ফিরে: পাকা সড়কের দু’দিকেই পতিত ক্ষেত। ক্ষেতের এক পাশে চাতাল।


 
আর এ চাতালে জীবনযুদ্ধে নিবেদিত অঙ্গমালা, ফাতেমা, নুরেজাসহ জনাদশেক নারী শ্রমিক। পঞ্চাশের কোঠায় প্রত্যেকের গড় বয়স। বাড়ি পৌরসভার ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামে।

তাদের আমরণ আপসহীন সংগ্রামের এ চিত্রের দেখা মিললো শেরপুর সদর থেকে শ্রীবরদী পৌরসভায় প্রবেশের পর মতুরহাটি গ্রামে। স্থানীয় তারা মিয়ার ধানের খলায় মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) শীতের মিষ্টি দুপুরে চোখ আটকে গেলো এসব নারী শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞে। চাতালের ধান সিদ্ধ, শুকানো, বস্তাবন্দী থেকে শুরু করে ঘরে তোলার কাজ সব সামাল দিচ্ছেন তারা।

পৌরসভা নির্বাচনের ঢাকঢোল বেজে উঠলেও ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই তাদের। পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করা এসব নারী শ্রমিকদের কাছে গিয়ে ভোটের আলাপ তুলতেই প্রথমে একজন বললেন, ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন। ’

পরিচয় দিয়ে ভুল ভেঙে দেয়ার পর নিজের নাম জানালেন অঙ্গমালা। তবুও মুখ ভার করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান (মেয়র) ও মেম্বর (কাউন্সিলর) প্রার্থীরা আইয়া খালি দোয়া আর ভোট চায়। কাউরেই তো ফিরাই দিবার পাই না। অহনতুরি কারো লগেই ভোটাভুটির কথা স্বীকার গেছি না। ’

৯ টি ওয়ার্ড ও ১৮ হাজার ৭৬১ জন ভোটারের এ পৌরসভায় নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। ৯ হাজার ২৯০ জন পুরুষ ভোটারের বিপরীতে নারী ভোটার ৯ হাজার ৪৭১ জন। ফলে আসন্ন এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে হার-জিত নির্ধারণে বড় ভূমিকা থাকছে এ নারী ভোটারদেরই।

এ চাতালে অঙ্গমালার সঙ্গে ভোটের হালহকিকত নিয়ে আলাপ চলাকালেই ভোট নিয়ে নিজের মতামত জানাতে আগ্রহ দেখালেন নুরেজা (৫০)। বলেন, ‘প্রার্থীরা আইয়া কয়, দেহেন আমগরে। ভোট দেন। গরিবরে দেখপো।

পাস দিলে তো আর খবর নেয় না। যার মাথায় তেল থাহে তারেই দেহে। গরিবের খোঁজ তারা কেমনে লইবে। ’ এ সময় আবারো ক্যামেরা ক্লিক করতেই অঙ্গমালা নিচু স্বরে বলে উঠেন, ‘আপনারা বার বার কিয়ের ফডো তুলেন। ’ কিছু বলার আগেই নুরেজা বলেন, ‘হেরা সংবাদিক। ফডো তুললে সমস্যা হইতো না। ’
sherpur_01
অঙ্গমালা,নুরেজাদের চলতে থাকে ভোটের আলাপ। এ আলাপে যোগ দিতে সাগ্রহে এগিয়ে এলেন বয়ো বৃদ্ধ আমির উদ্দিন ও যুবক আমিরুল ইসলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হঠাৎ মুখ খুললেন, ‘দশজন যেনো চাইবো সেইহানেই ভোট দিওন লাগবো। ’ বলেই আবার উত্তর দিকে ছুটলেন।

এবার আমিরুলের উচ্চারণ, ‘মংরাদি থেইকা সেকদি খাল তুরি খালি নৌকা। এ পার্টির সাঈদের মাঠ ভালা। এইবার ইলেকশনে সাঈদরে কেউ হারাইবার পাইতো না। ’

আমিরুলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে নুরেজা বলতে শুরু করলেন নিজের ক্ষোভের কথা। ‘বর্তমান মেয়র (আব্দুল হাকিম) আব্দুল হাকিম গরিবরে দেহে নাই। গত ৫ বছর খাতিরে খাতিরে অনেক মানুষরে কল দিছে। আমি অভাবী মানুষ।

তার কাছে একটা কল চাইছিলাম। আমারে কয় আমি এইগুলা দেই না। হেগরে ভোট দিলে লাভ কী। তারা তো খাতিরের মানুষরেই চিনে’ যোগ করেন নুরেজা।
sherpur_02
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন তারা। এমনটি জানিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনারে (নৌকা) ভোট দিয়া আইছি। নৌকার সাঈদ এলাকার। খুব ভালো পোলা। এইবার মনে হয় পার হইয়া যাইবো। ’

পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হবার পর ২০০৪ সালে এ পৌরসভায় বিএনপি’র আব্দুল হাকিম প্রথম পৌর প্রশাসক নিয়োগ পান। ২০১১ সালের নির্বাচনে এখান থেকে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু গোটা পৌরসভায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে না পারায় এ নারী ভোটারদের মতো আরো অনেক পুরুষ ভোটারও তার কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট।

৩০ ডিসেম্বরের এ পৌর নির্বাচনে এখান থেকে মেয়র পদে লড়ছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী মো. আবু সাঈদ (নৌকা), বিএনপি’র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুল হাকিম (ধানের শীষ) ও বিএনপি দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী আবু রায়হান মো. আল বেরুনী (নারকেল গাছ)।

** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
আরআই/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।