ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

শিল্পী সমিতির ব্যর্থতা, কাঞ্চন-নিপুণকে নিয়ে নূতনের ক্ষোভ

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
শিল্পী সমিতির ব্যর্থতা, কাঞ্চন-নিপুণকে নিয়ে নূতনের ক্ষোভ ইলিয়াস কাঞ্চন, নিপুণ আক্তার ও নূতন

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কমতি নেই। নির্বাচন থেকে শুরু করে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখল নিয়ে এখনো আলোচনায় এই সমিতি।

এরইমধ্যে শিল্পী সমিতির ১ বছর অতিক্রম করেছে।

কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে আইনি জটিলতা শেষ না হলেও নানা রকম সমালোচনায় ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তার। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ছিল অভিনেত্রী রোজী আফসারীর মৃত্যুবার্ষিকী। এই অভিনেত্রী দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

তাছাড়া এই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জন্ম হয়েছে রোজী আফসারীর বাসায় বলে জানিয়েছেন তার স্বামী নির্মাতা মালেক আফসারী। তবে তার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে শিল্পী সমিতি স্মরণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার স্বামী নির্মাতা মালেক আফসারী।  

সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তার আপনাদের এই শিল্পী সমিতির জন্ম হয় রোজীর বাসায়। ইতিহাস জানা না থাকলে নায়ক আলমগীর ভাইয়ের কাছে জেনে নিবেন। ৯ মার্চ তার মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। সমিতির পক্ষ থেকে একটু দোয়া করে দিলে কি ক্ষতি হতো?

এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নূতন। শিল্পীদের সম্মান, ক্ষমতা ও নানা প্রসঙ্গে শনিবার (১১ মার্চ) সকালে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

কথা বললেই সম্মান হারানোর ভয়ে আমরা সিনিয়র শিল্পীরা এখন বোবা হয়ে গেছি। সঙ্গে আবার ক্ষমতার দাপটও আছে উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী লেখেন, আমি মৃত্যু ছাড়া বোবা হতে চাই না। আর ছোট থেকেই ভয় একটু কম তার ওপর আবার সাপের সিনেমার নায়িকা। তবে আবেগ অনেক, একটু ব্যথা পেলেই কান্না করি।

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নির্মাতা মালেক আফসারী কাঞ্চন-নিপুণকে সমর্থন করেছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নূতন লেখেন, মালেক আফসারীকে আমি এই প্যানেলের পক্ষে কথা বলতে দেখেছি। যদিও সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে কেন কথা বলেছে আমি জানি না। তবে আমি কথা বলছি তা কাঞ্চনের জন্য। কাঞ্চন আমার পরম আত্মার বন্ধু। যদিও আমাকে নিপুণ আক্তার শাড়ি উপহার দিয়েছিল যা এখনো আমার বাসায় সেভাবেই আছে। তবে কাঞ্চন না থাকলে আমি যতটুকু কথা বলেছি তাও বলতাম না। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি।

একজন রোজীকে নিয়ে না ভাবা বর্তমান শিল্পী সমিতির জন্য ব্যর্থতা উল্লেখ করে নূতন বলেন, কাঞ্চন একজন গুণী সিনিয়র শিল্পী, আমার বন্ধু। সে সবসময় রাগী একরোখা, সততার একটা মনোভাব নিয়ে থাকে। যা সে লালান করে তবে, তার এই গুণের পাশাপাশি তাকে আবেগী হওয়া উচিৎ। তা না হলে তার এই একরোখা স্বভাব মূল্যহীন হয়ে যাবে।

নির্বাচনে না এলে নিপুণ হারিয়ে যেত বলে মনে করেন নূতন আক্তার। সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নিপুণ সে অনেক ছোট এবং চলচ্চিত্র ইতিহাস বা আমাদের আগের শিল্পীদের মর্ম তার না জানারি কথা। আপু বলে আমায়, আমি ছোট বোন জানি। আমি তাকে আমার শেষ মুহূর্তে দেখেছি তাও খুব সামান্য। কিছু ভালো সিনেমা সে করেছে, মেধাবী, শিক্ষিত। নির্বাচন কেন্দ্র করে আলোচনা না হলে আরো ৮/১০ জনের মতো হারিয়ে যাওয়া তালিকায় তার নাম থাকতো। নেত্রী হিসেবে শেষ নির্বাচনে বা তার আগেই তার নাম আমার কানে অধিকবার বেজেছে।  

যদিও অনেক গুণীরা আবার তাকে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াতে গুণী শিল্পী বলে, সুচরিতাকেও হেয় করা হয়েছে। আমি একবার পেয়েছি তাও সহশিল্পী হিসেবে। যাই হোক সে উত্তর প্রয়োজন হলে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিবো। -যোগ করলেন নূতন।

নিপুণ লোভ দেখানো সম্মান করে জানিয়ে বলেন, তার প্রতি আমার রাগ নেই, আমার ছোট বোন, সম্মান করে। এখন তা মনে হয় দেখানো সম্মান। তার এই মহানেত্রী সুলভ আচরণে বা অধিক ক্ষমতায়ণে তার এসব নিয়ে ভাবার সময় নাই থাকতে পারে। তার ধারণা, সারা বাংলাদেশ তার সঙ্গে যদিও কাঞ্চন না থাকলে আর জায়েদের ভুল না হলে নিপুণ তার নাম সেভাবে আসতো না।

তবে আমি তাকে অনুরোধ করব ছোট বোন হিসেবে বড়দের সম্মান করা, মনে লালন করতে হবে। নেতৃত্ব গুণ নিয়ে সবাই জন্মায় না, তা লালন করতে হয়। অভিনেত্রী, আলোচনা, ভালোবাসা, যোগ্য নেতা-নেত্রী হওয়া এক নয়। কিন্তু কাঞ্চন সাহেবের রোজী আফসারীকে মনে রেখে একটা মিলাদ মাহাফিল করার দরকার ছিল। এই ভুলে যাওয়া বুঝে না বুঝে সম্মান ঘাটতির খেসারত দিতে গিয়ে আজ চলচ্চিত্র ধ্বংস। -বললেন ‘ওরা এগার জন’র এই অভিনেত্রী।

রোজী আফসারীর ব্যাপারটি ইলিয়াস কাঞ্চনের মাথায় রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন নূতন। তার ভাষায়, সিনিয়ররা মৃত প্রায় চলচ্চিত্রে নির্বাচনে অনীহা বলেই অনেকে এই সুযোগ নেয়। তা সত্য। কাঞ্চন সাহেব নেতা হওয়ার আগে একজন অভিনেতা, বন্ধু, সেই সোনালী যুগের সাক্ষী। তাকে তা মাথায় রাখা উচিৎ। তাছাড়া একজন সিনিয়র শিল্পীও এ ব্যাপারে কথা বললো না?

আজ রোজী নাই তাই কথা নাই, স্বার্থ নাই। কাল আমি না থাকলে, কাঞ্চন আপনি না থাকলেও কোন কথা হবে না। আমি আমার, আমাদের সহশিল্পী, বন্ধুকে মনে না রাখলে আমাকে মনে রাখবে তা ভাবা ভুল। সময় সবার এক রকম থাকে না। অসম্মানিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কাদের গুছানো চেয়ারে কারা বসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইয়ুব বাচ্চুর একটা গান মনে পড়ে গেলো- এক পুরুষে করে ধন, আরেক পুরুষ খায়।  

সবশেষ ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নূতন লেখেন, দয়া করে কারো মিথ্যা আদর আর দেখানো সম্মানে আপনার অবচেতন মনে কারো স্বার্থে ব্যবহার হবেন না। আমাদের একটু সম্মান দিলেই ব্যবহার করা যায় কারণ, আমরা সম্মানিত হতেই জন্মাইছি। তাও আপনি সভাপতি গুণী তাই একটু সচেতন হওয়ার অনুরোধ।

কাঞ্চনের উদ্দেশ্য নূতন আরো বলেন, বন্ধু এই সব কথা আমি আমার স্বার্থে বলেছি। যেন আমি মারা গেলে কেউ আমার-আমাদের নাম নেয়। কেউ যেন স্বীকার করে আমরাই চলচ্চিত্র। দয়া করে মূর্খতা সুলভ আচরণ করবেন না যে, আপনি কি জায়েদের পক্ষে, হেন-তেন। আমি জায়েদ-নিপুণ এদের জন্মাইতে দেখছি। আমি আমার সময়ের বন্ধু, আমার সহকর্মীদের পক্ষে। এইসব শিল্পী সমিতি ছোট-খাটো কারো পক্ষে-বিপক্ষে থাকার জন্য আমি নায়িকা হইনি বা জন্মাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।