ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’

ঢাকা: বাংলাদেশের ১৫৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। ভারতের কিংবদন্তি নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত এই সিনেমায় জাতির জনকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটিতে দেশবিদেশের দুই শতাধিক অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় মুক্তি পেয়েছে মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। তাদের পক্ষ থেকেই দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহের তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেটা সাম্প্রতিক সময়ে ঢালিউডের যে কোনো সিনেমার মুক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এবং রেকর্ড।

এ বিষয়ে জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেন, হল মালিকরাই সিনেমাটি চালাতে আগ্রহী। বিশেষ করে ট্রেলার দেখার পর তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সিনেমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো কান্না আর আবেগ। যে সিনেমা দেখে দর্শক কাঁদে, সেটি হিট। ‘মুজিব’র ট্রেলার দেখে হল মালিকদের মনে হয়েছে যে, এটা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সিনেমাটির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় জানানো হয়, এটি নির্মাণ করবেন বলিউডের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। এর চিত্রনাট্যকার হিসেবে যুক্ত হন বলিউডের অতুল তিওয়ারি।

ঘোষণার সময়ই নিশ্চিত করা হয়েছিল যে, এই সিনেমার বেশিরভাগ শিল্পী বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ধরে অডিশনের মাধ্যমে বাছাই করা হয় শিল্পী। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের জন্য ১৫ জন শিল্পীর অডিশন নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচবার অডিশন শেষে আরিফিন শুভকে চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে দুবার অডিশন দিয়েছিলেন ভারতে, তিনবার বাংলাদেশে।

এ বিষয়ে শুভ বলেন, অডিশন দেওয়ার অনেক দিন পর জানতে পারি আমি বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে নির্বাচিত হয়েছি। খবরটা শোনার পরের অনুভূতি একেবারেই ভিন্ন। মনে হচ্ছিল আমি কানে ভুল নাকি ঠিক শুনছি!

২০২১ সালে মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর শুটিং শুরু হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুজন। কৈশোরের খোকা (বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার ডাক নাম) হয়েছেন দিব্য জ্যোতি। আর তরুণ মুজিব থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে চরিত্র সেটি করেছেন আরিফিন শুভ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যধারণের আগে শুটিং ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন আরিফিন শুভ। এ অভিনেতার ভাষ্য, শিল্পীরা অনেক শিশুসুলভ হয়। মনে হয়েছিল, আমি যদি শুটিং না করি তাহলে ১৫ আগস্টের দৃশ্যধারণ হবে না। আর আমি পালিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু মারা যাবেন না। এটা আসলে একটা অনুভূতি, জানি না বোঝাতে পারলাম কি না! দৃশ্যটা আসলে করতে চাইনি। গান আছে না, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই। ’ এখনো মনে হয়, যদি দৃশ্যটার শুটিং না করতাম! বঙ্গবন্ধু না মারা যেতেন...অন্তত পর্দায়।

মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনজন। ১৩ বছরের আগ পর্যন্ত পর্দায় তার চরিত্রে দেখা যাবে একজন শিশুশিল্পীকে। কিশোরী বয়সী (১৩-১৭ বছর) চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। এরপর থেকে নুসরাত ইমরোজ তিশা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯-৩৫ বছরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, শেখ রেহানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। এতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ভূমিকায় শহীদুল আলম সাচ্চু, খন্দকার মোশতাক চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আব্দুল হামিদ খান ভাসানির চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে দিলারা জামান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খানসহ শতাধিক অভিনয়শিল্পী সিনেমাটিতে কাজ করেছেন।

যেসব হলে মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’

২০২২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিনেমাটির প্রথম পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এরপর প্রথম ভিডিও ঝলক প্রকাশ্যে আসে একই বছরের মে মাসে, বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানকার বাণিজ্যিক শাখায় সিনেমাটির ট্রেলার উন্মোচন করা হয়। এরপর গেল ১ অক্টোবর সিনেমার আরও একটি ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়।

দেশে মুক্তির আগে গেল ১৩ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর বাণিজ্য শাখায় ‘মুজিব’ সিনেমার প্রথম প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গেল ৩১ জুলাই দেশে সেন্সরে ছাড়পত্র পায় সিনেমাটি। আর মুক্তির প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে অনুষ্ঠিত সে প্রিমিয়ারে অভিনেতা, অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও। একইদিন সন্ধ্যায় মহাখালীর স্টার সিনেপ্লেক্সে আরেকটি প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিনেমাটির অভিনয়শিল্পীরা ছাড়াও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এনএটি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।