ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শ্বেত কড়ইয়ের ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
শ্বেত কড়ইয়ের ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা চা বাগানের শ্বেত কড়ই ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: একটা ফুলের বিষয়ে একটুখানি ঋতুভিত্তিক দ্বন্দ্ব হয়তো দেখা দিতে পারে। ফুলটা কী আসলে বসন্তের ফুল? নাকি গ্রীষ্মের? তারপরও নিজের মতো করে সমাধান খুঁজে নেয় মন।

কেউ কেউ নিঃশব্দে যেন বলেন, ফুলটিকে যেহেতু গ্রীষ্মে দেখা গেছে তাই ধরে নিতে হবে গ্রীষ্মকালই তার মাতৃপটভূমিস্বরূপ প্রকাশ ঋতু। আবার কেউ কেউ সেই দলে আছেন যারা ফুলটির প্রকাশকালীন যাবতীয় তথ্য বের করে উদ্ভিদতাত্ত্বিক প্রমাণিত যোগসূত্রটি খোঁজার চেষ্টা করবেন।  

হোক বসন্ত নয়তো হোক গ্রীষ্ম – বাংলার এই বিশেষ ফুলটি নিজের মতো করেই প্রকৃতিতে প্রকাশিত হয় আবার নিজেকে গুটিয়ে নেয়। যেভাবেই বলা হোক না কেন – এ ফুলটি তার শুভ্রশোভা দিয়ে চা বাগানের সবুজ প্রকৃতি ভরিয়ে রেখেছে-এটাই বড় কথা।  

লোমশপাপড়িময় এ ফুলটির নাম একটি নয়, একাধিক। ‘শ্বেত কড়ই ফুল’, ‘শিরীষ ফুল’, ‘কড়ই ফুল’, ‘সৃষ্টিকড়ই’ প্রভৃতি নানান নামে মানুষ তাকে স্মরণ রেখেছেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Albizia lebbeck এবং এরা Mimosaceae পরিবারভুক্ত বৃক্ষ। চা বাগানে গেলেই এখন চোখ জুড়ায়। গাছে গাছে অপূর্বভাবে শোভাবৃদ্ধি করে আছে কড়ই ফুল।

বাংলা সাহিত্যে নানান কবি-সাহিত্যিকরা এই ফুলের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে কী উচ্ছ্বাসে, ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা’ -এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ফুলটিকে তার কাব্যসম্ভারে অমর করে রেখেছেন। ‘ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানো’ এই শব্দাবলিতে গেঁথে কবিগুরু বুঝাতে চেয়েছেন – একটি-দুটি বা কয়েকটি ফুল ফুটিয়েই ওরা থেমে থাকে না, বরং প্রতিটি গাছে গাছে ফুল ফোটানোর সম্মিলিত উৎসব শুরু করে দেয়।

ফুটন্ত শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে থোকায় থোকায় ফুল ধরে এবং সারাগাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফুলের রং সাদা থেকে হালকা হলুদ। ফুলের সৌন্দর্য গুচ্ছ-কোমল পরাগকেশরে বিদ্যমান এবং পরাগকেশরের অগ্রভাগ সবুজ। গন্ধ দূরবাহী ও উগ্র। ফুল ফোটার ব্যাপ্তি বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। ফল লম্বায় ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। চওড়া ৪ থেকে ৬ সেন্টিমিটার ও চ্যাপ্টা। পরিপক্ব ফলের রং খয়েরি।

চা বাগানে ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষদের অন্যতম কড়ই গাছ। চা বাগানের শ্বেত কড়ই গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বাংলাদেশীয় চা সংসদ এর সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান জিএম শিবলি বলেন, প্রখর সূর্যের উত্তাপ থেকে চা বাগানের চা গাছগুলোকে রক্ষা করে শেডট্রি বা ছায়া প্রদানকারী গাছ। সরাসরি সূর্যের আলো চা গাছের জন্য ক্ষতিকর। তাই চা বাগানে চা আবাদের সময় শেডট্রি লাগাতে হয়। আমাদের দেশের চা বাগানের সাধারণত শিরীষ বা কড়ই জাতীয় উদ্ভিদ লাগানো হয়। এগুলোর নানান প্রজাতির রয়েছে। যেমন- চাম কড়ই (Albizzia odoratissima), শিরীষ (Albizzia lebbeck), কালা শিরীষ (Albbizzia chinensis) প্রভৃতি।  

শেডট্রিগুলো চা বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশকে নাতিশীতোষ্ণ রাখে। শুধু সূর্যের প্রখর রোদই নয়, ঝড় ও বাতাস থেকেও চা গাছগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও এরা সহজেই বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।

ওইসব বৃক্ষের পাতা মাটিতে পড়ে পঁচে গিয়ে মাটির পুষ্টিদান করে বলে জানান ওই অভিজ্ঞ টি প্লান্টার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।