ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কালিয়ার অরুণিমায় পরিযায়ী পাখির সমাহার

এম এম ওমর ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
কালিয়ার অরুণিমায় পরিযায়ী পাখির সমাহার

নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। এলাকাবাসী যাকে ইকো পার্ক নামেই জানে।

প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে এসেছে লাখো পরিযায়ী পাখি।

শীতকালে দেশের যে কয়েকটি স্থানে বৃহৎ পরিসরে পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম অরুনিমা। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে ২০০৯ সালে ৫২ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি যেন পাখিদের এক আপন রাজ্য। শীতের শুরুর আর শেষের প্রায় নয় মাস এখানে থাকে বিদেশি পাখি। তবে বছরের ১২ মাসই এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির।

শীতের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখিরা ছুটে এসেছে অরুণিমায়। দিন যত যাচ্ছে শীতের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। দেখে মনে হবে যেন পাখির মেলা বসেছে। পার্কটিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে।  

বিকেলের দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া নানান প্রজাতির অতিথি পাখিরা সন্ধ্যার আগেই রিসোর্টে ফিরতে শুরু করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা এসব পাখিরা বসছে রিসোর্টের লেকের পাড়ে অবস্থিত ছোট-বড় গাছের ডালে। পাখিদের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির শব্দের টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। পাখি দেখতে নৌকা করে ছুটছেন কেউ কেউ। পড়ন্ত বিকেলে লেকের পানিতে পড়া সূর্যের লাল আভা বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে দর্শনার্থীদের। অনেকেই মুঠোফোনে বন্দি করছেন প্রাকৃতিক এসব দৃশ্য।

পুরো এলাকা জুড়ে চোখে পড়ে বক, পরিযায়ী, হাঁস, পানকৌড়ি, শালিক, টিয়া, দোয়েল, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বর্তমানে দেশের একমাত্র এই কৃষি পর্যটন কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে পাখির অভয়ারণ্যে।

এখানে শুধু পাখিই নয় বরং পাখিদের বাসস্থান হিসেবে রয়েছে নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ। এছাড়া রয়েছে দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু পশুপাখি এবং অনন্য সাধারণ একটি প্রাকৃতিক লেক।

মাগুরা থেকে আসা বাকের শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, ইউটিউবে এই পার্কের অনেক ভিডিও দেখেছি। এখানে অনেক পাখি দেখা যায়। সেজন্য কয়েক বন্ধু মিলে এসেছি পাখি দেখতে। এখানে অসংখ্য পাখির বিচরণ। বিভিন্ন দিক থেকে যখন পাখিরা এসে এখানে পড়ে তখন পাখির যেই ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির কলরব এটা আসলে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়াও এখানকার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও তার কাছে চমৎকার লেগেছে।

সপরিবারে ঢাকা থেকে পাখি দেখতে আসা সাজ্জাদ রহমান বাংলানিউজকে বলেন,  ঢাকা শহরে আমরা যারা বড় হচ্ছি বা জীবন-যাপন করছি, আমরা আসলে যান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছি। মনোরম পরিবেশ বলতে যা বোঝায় তা ঢাকার মধ্যে পাওয়া যায় না। ঢাকার অদূরে নড়াইলের এতো সুন্দর একটা জায়গা যেখানে আমরা প্রচুর পাখি দেখতে পাচ্ছি। পাখিদের সঙ্গে সময় পার করা এবং আশেপাশের যে গাছপালায় পাখিরা ছোটাছুটি করছে তা দেখার মধ্যে একটা আনন্দ কাজ করে। বাচ্চারা এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি।

অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ম্যানেজার মুনিব খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ রিসোর্ট। একটা রিসোর্টে যা যা থাকা প্রয়োজন তার সব সুযোগ-সুবিধা এখানে রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এখানকার পাখি। প্রায় নয় থেকে দশ মাস এখানে বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি পাখির সমন্বয় ঘটে। এখানে নৌকায় করে পাখির খুব কাছে চলে যাওয়া যায়। বাংলাদেশে আর কোনো রিসোর্ট নেই যেখানে এরকম পাখি দেখা যায়। পাখিকে ঘর দিতে হয়, নিরাপত্তা দিতে হয়। তারা এখানে নিরাপদ। আমরা চারদিক থেকে নিরাপত্তা দিই।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।