ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

গহনা তৈরির অ্যাসিডে বিপর্যস্ত নাটোরের পরিবেশ

স্বপন দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৩
গহনা তৈরির অ্যাসিডে বিপর্যস্ত নাটোরের পরিবেশ

নাটোর: সোনার গহনা তৈরির জন্য একপ্রকার অ্যাসিড ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সোনা থেকে খাদ বের করার জন্য তাকে পোড়ানো হয় নাইট্রিক এসিড দিয়ে।

আর সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক এসিড।

নাইট্রিক এসিড দিয়ে সোনা খাঁটি করার সময় যে ধোঁয়া বের হয়, তা বাতাসে মিশে বিষাক্ত অম্লীয় বাষ্পে রূপ নেয়। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডযুক্ত ওই বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

অ্যাসিডের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় চালের টিন, এমনকি লোহাও বিনষ্ট হয়। মরে যায় পুকুরের মাছ।

এমনটিই প্রতিনিয়ত ঘটছে নাটোর পৌরসভার লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, পিলখানাসহ কয়েকটি মহল্লায়। নাটোরে সোনার কারখানা স্থাপনের আগে বা পরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।   অধিকাংশ স্বর্ণ ব্যবসায়ী ভ্যাট ও আয়কর দেন না। যে কয়েকজন দেন তার সংখ্যাও অনেক কম।

এ ব্যাপারে নাটোর নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নাইট্রিক অ্যাসিডে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড আছে, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সালফিউরিক অ্যাসিডেও প্রায় একই রকম ক্ষতি হয়। এর প্রভাবে মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ছাড়াও হার্টের সমস্যা হতে পারে।

নাটোর শহরে অর্ধশতাধিক সোনার দোকান আছে। নাটোর স্বর্ণকার কারিগর সমিতির সভাপতি ইন্দ্রকুমার সরকার জানান, সোনার কাজে যে অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় তার ধোঁয়ায় শরীরের কিছু সমস্যা হয়। চালের টিনও ছিদ্র হতে দেখা গেছে।

অ্যাসিড বিক্রির জন্য নাটোরে চারটি দোকানের লাইসেন্স রয়েছে। অ্যাসিডের ক্রেতা ৬৫ জন স্বর্ণ ও ব্যাটারি ব্যবসায়ী এবং ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

অ্যাসিড বিক্রেতা চলনবিল ট্রেডার্সের মালিক ইউসুফ আলী বাংলানিউজকে জানান, তার দোকানে সালফিউরিক, নাইট্রিক, কার্বলিক, হাইড্রোক্লোরিক প্রভৃতি এসিড আছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ক্রেতার কাছে অ্যাসিড বিক্রি করা হয় না। স্বর্ণকারেরা কেবল নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিড কেনেন।

নাটোর শহরের লালবাজার, কাপুড়িয়া পট্টি ও পিলখানা ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মিত হয়েছে। এই মহল্লার মানুষ সোনার কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাফরউল্লাহ জানান, এলাকার জনসাধারণ সোনার কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সুবিধাজনক স্থান ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।  

নাটোর জেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন কুমার পোদ্দার অ্যাসিডের ব্যবহার ও এর ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কারখানাগুলিতে লম্বা পাইপ দিয়ে ধোঁয়া বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দোকান ও কারখানার জন্য লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।


বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৩
এএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।