ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কমছে বাংলাদেশের আয়তন!

নূসরাত খান, এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৩
কমছে বাংলাদেশের আয়তন!

ঢাকা: গত দশ বছরে আমাদের দেশে মেঘনা নদীর মোহনা ও হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চর জেগে ওঠায় অনেকের মধ্যে এমন ধারণা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড বোধহয় বাড়ছে।

বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার ফলাফলে উঠে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে ভূখণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে।

তবে এসব নতুন জাগা দ্বীপ বা চরের ব্যবহারযোগ্যতা কোনোভাবেই ডুবে যাওয়া ভূমির সমপরিমাণ হতে পারে না। ভূ-খণ্ড বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে তা মোট আয়তন বাড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

সম্প্রতি একটি অস্ট্রেলিয়ান বৈজ্ঞানিক সাময়িকী জার্নাল অব কোস্টাল কনজারভেশনে ‘বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে উপকূলীয় রেখা পরিবর্তনের হার’ শিরোণামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গবেষক ড. মো. গোলাম সারোয়ার তার গবেষণার ফলাফল ভিত্তি করে তুলে ধরেছেন, বাংলাদেশের ভূ-সীমা প্রতিবছর ১২০ মিটার হারে ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে, অর্থাৎ ভূমি ক্ষয় হচ্ছে।

তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদে গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। গবেষক ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সালের স্যাটেলাইট ছবি নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন, বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ২০ বছরে ২.৪ কিলোমিটার কমে গেছে। নাফ নদীর তীরে বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের টেকনাফ উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত শাহপরী দ্বীপকে মূল গবেষণার স্থান ধরে নিয়ে তিনি হিসেব কষে দেখান।

মূলত ডিজিটাল সোরলাইন সিস্টেমের (ডিএসএএস) সাহায্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ব্যবহার করে প্রযুক্তিভিত্তিক এ গবেষণা চালান তিনি। আমাদের দেশে এভাবে ভূমি ক্ষয় হতে থাকলে পাশের দেশ মায়ানমারের আয়তন বেড়ে যাবে। কারণ, সমুদ্রসীমা নির্ণয় করা হয় ভূমির অবস্থানের ভিত্তিতে। আর তাতে করে আন্তর্জাতিক সীমারেখা নির্ধারণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।
 
পুরো পৃথিবীতে উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ভূমি গঠন অনেক সাধারণ একটি ঘটনা হলেও একটি দেশের দৈর্ঘ্য হ্রাস ভূ-খণ্ডের আয়তন হ্রাস পাওয়ার ঘটনা বিরল।

কি কারণে এই ভূমি ক্ষয় হচ্ছে জানতে চাইলে গবেষক ড. গোলাম সারোয়ার বলেন, মূলত নদী ভাঙন ও একইসঙ্গে মানুষের অতিরিক্ত বসতি স্থাপন এক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব ফেলছে। কারণ, বাংলাদেশের এ অঞ্চলের উপকূলীয় ভূমির ভূতাত্ত্বিক গঠন কিছুটা অস্থিতিশীল। তাছাড়া সমুদ্রমসীমার উচ্চতা বৃদ্ধিও এতে কিছুটা প্রভাব ফেলছে।

 কক্সবাজারের মহেশখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে খুব দ্রুতহারে ভূমি জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও টেকনাফ অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের হারই বেশি। যা মূল ভূমির সীমানা নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের পুরো উপকূলীয় অঞ্চলকে ছ’টি ভাগে ভাগ করে গবেষণা করেন তিনি। আর সেখান থেকে বের হয়ে আসে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা করার মতো এ তথ্য।   হাতিয়া, ভোলার নদীক্ষয় একটি বড় কারণ উপকূলীয় অঞ্চলকে অস্থিতিশীল এলাকা হিসেবে পরিগণিত করার ক্ষেত্রে।

এক্ষেত্রে সমুদ্রের উপকূলকে সী-ডাইক পদ্ধতিতে রক্ষা করার পরিকল্পনা হাতে নিলে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় ঘটতে থাকা এই ভূমিক্ষয়কে কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে বলে গবেষকের ধারণা। তবে, বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সী-ডাইক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গাতেও কিছুটা অংশে সামুদ্রিক রক্ষাবাঁধ বা সী-ডাইক নির্মাণ কিছুটা হলেও সমুদ্রের উপকূল রক্ষায় কাজে দিয়েছে। তাছাড়াও উপকূল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে পরবর্তী গবেষণাসহ মাঠ পর্যায়ে কাজের ব্যাপারে সরকারি মহলকে আরও তৎপর হতে হবে বলেও অভিমত দেন ড. সারোয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৩
এনকে/এএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।