ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূলে

রাস্তা ডুবেছে পানিতে, ভোগান্তি উঠেছে চরমে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৩
রাস্তা ডুবেছে পানিতে, ভোগান্তি উঠেছে চরমে

মোবারকপুর, (তালা, সাতক্ষীরা) থেকে: যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, ভ্যান, মোটরবাইক ছাড়াও সব ধরনের যানবাহন চলছে অনুমানের ওপর। পানির ভেতরে খাদ আছে, নাকি গর্ত আছে, তা দেখার কোনো সুযোগ নেই।



পানিতে ডুবে থাকা সড়ক দিয়ে সবাই ছুটছে গন্তব্যে। দু-একটি যানবাহন আবার আটকে যাচ্ছে গর্তে, উল্টে পড়ছে রাস্তার ওপর। যাত্রীরা নেমে পড়ছেন রাস্তার ওপর হাঁটু সমান পানিতে। বাহন ছেড়ে কখনো হাঁটতে হচ্ছে বাড়তি কিছুটা পথ।

এমনই অবস্থা জলাবদ্ধ এলাকা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অনেক সড়কের। দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় সড়কে ছোট খাদগুলো বড় গর্ত হয়ে উঠেছে। কোথাও বা সড়ক ভেঙে এপাশ থেকে পানি যাচ্ছে ওপাশে।

যানবাহন চলাচলের জন্য স্থানীয়ভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে লাগছে খুব সামান্যই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন তালা-পাইকগাছা সড়ক ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১১টি সড়কের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।

তালা উপজেলা প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কির্ত্তনীয়া বাংলানিউজকে বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তাগুলো উঁচু করার কাজ চলছে নিয়মিত বিরতিতেই। এসব রাস্তা প্রতি বছরই এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করা হচ্ছে। রাস্তা আরও উঁচু করা প্রয়োজন হলেও সেভাবে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তাগুলো চালু রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা থেকে তালা সদরে পৌঁছানোর আগে বাসে বসেই এখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল চিত্র সরেজমিনে চোখে পড়ে। পাটকেলঘাটা থেকে তালা শহরে আসার পথে ঢাকা-তালাগামী যাত্রীবাহী বাসটি যেন উল্টেই রাস্তার পাশে পড়ে যাচ্ছিল। আর তখনই যাত্রীর‍া সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকেন। স্থানীয় একজন বাংলানিউজকে বলেন, ভোট তো দিছিলাম। কাজ কিছুই হয়নি। আবার তো ভোট আইছে। এবার কী বলবে।

বাংলানিউজ সরেজমিনে চোখে পড়েছে, জলাবদ্ধতার কারণে তালার রাস্তাঘাট ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলা সদর থেকে খুলনার পাইকগাছার দূরপাল্লার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে রাস্তা খারাপ থাকার কারণে। তালার মোবারকপুর থেকে খলিলনগর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর অবধি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ মোটরবাইক ও হেঁটে গিয়ে শুধুই সড়কটির বেহাল চিত্র চোখে পড়ে।

পিচঢালা এ রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় পানি ওঠা ঠেকাতে দুপাশে মাটির বেড়ি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ছাড়াও যেকোনো স্থান থেকে পাইকগাছা যাওয়ার মূল পথ তালার এ সড়ক। এর প্রায় আট কিলোমিটার অত্যন্ত খারাপ থাকায় তালা সদর থেকে বিকল্প পথ ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু সেপথে গিয়েও বেশ কিছু বিধ্বস্ত রাস্তা পার হতে হয়। ইঞ্জিন-ভ্যানে এ পথে পাইকগাছা যাওয়ার পথে চালক বললেন, পা তুলতে হবে। না হলে কাদাপানি উঠবে। রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ, ইঞ্জিন-ভ্যানও ঠিকভাবে চলতে পারছে না।

ঢাকা থেকে আসা বহু যাত্রী গত কদিন ধরে তালার মোবারকপুরে আটকা পড়তে দেখা যায়। বাস পাইকগাছা অবধি যাবে বলে যাত্রী উঠানো হলেও বাসগুলো তালার পরে আর কোনোভাবেই যেতে পারছে না। ফলে এখানে বাসের লাইন পড়ে যায়। সেই সঙ্গে ভোগান্তিতেও পড়েন যাত্রীরা।

মোবারকপুরে আটকা পড়া যাত্রী মো. সেলিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঈগল পরিবহনে উঠেছিলাম। বলেছিল বাস পাইকগাছায় যাবে। কিন্তু এখানেই নামিয়ে দিয়েছে। মালামাল নিয়ে এখন কীভাবে যাবো জানিনা। এমন আরও অনেক যাত্রী মোবারকপুর অবধি গিয়ে নিরুপায় হয়ে আবার তালা উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে বিকল্প পথে ইঞ্জিন-ভ্যানে কপিলমুনি হয়ে পাইকগাছা যান।     

সরেজমিনে দেখা গেছে, তালা উপজেলা সদরের রাস্তাঘাট গ্রাম্য হাটবাজারের রাস্তার চেয়েও অনেক খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। জলাবদ্ধতায় পানি বাড়লে সে সমস্যা আরও প্রকট হয়।

তালা সদর ছাড়াও জলাবদ্ধ ইউনিয়ন জালালপুর, খলিলনগর, ইসলামকাঠি, ধানদিয়া, নগরকাটা, সরুলিয়া, কুমিরা, তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু কাঁচা-পাকা রাস্তা এখন পানির নিচে। গ্রামের ভেতরের অনেক রাস্তা পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য।

ইসলামকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ওই ইউনিয়নের চার কিলোমিটার ইট বিছানো আর কাঁচা রাস্তা জলাবদ্ধতা কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিন কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ছয় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের ভবানীপুরসহ বেশ কটি এলাকার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার মানুষের দুর্ভোগের নজরে আসে।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেল, গ্রামের ভেতরে এঁকেবেঁকে যাওয়া সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় জালালপুর ইউনিয়নের কানাইদিয়ার বহু মানুষ বাড়িতে যেতে পারছেন না। অবলম্বন নৌকা কিংবা সাঁকো।

কানাইদিয়ার মক্তবের মাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে এলাকার মানুষ জলমগ্ন রাস্তায় কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে এমন কিছু এলাকা দেখালেন, যেখানে রাস্তা থাকলেও চলাফেরার কোনো সুযোগই নেই।

ধানদিয়া হয়ে কলারোয়া, সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে সুরিকাটা বাজার, তালা থেকে দলুয়া হয়ে কলারোয়া, ধলবাড়িয়া থেকে তেরসি বাজার, নওয়াপাড়া থেকে তেঁতুলিয়া বাজার, কাজিডাঙা ডা. আমিন উদ্দিনের বাড়ি হয়ে খরাইল ভবানীপুর, কুমিরা থেকে মাগুরা বাজার, মাজিয়ারা এজাহার ফকিরের বাড়ি হয়ে দেওয়ানী বাজার, তালা ইউনিয়ন পরিষদের দপ্তর থেকে জাতপুর, মাজিয়ারা বাজার থেকে ঘোনা বাজার এবং ভৈরবীনগর থেকে আখড়াখোলা অবধি উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রাস্তার বিভিন্ন অংশ জলাবদ্ধতায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তালা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৩
আরআইএম/এসএইচ/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।