ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু ‘রাণী মাছ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬
বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু ‘রাণী মাছ’ ছবি:একে জহুরুল ইসলাম-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বেশি দিন আগের কথা নয়। পাঁচ-সাত বছর আগের কথা।

হেমন্ত-শীত মৌসুমের সকালগুলোতে মৎসজীবীরা আমাদের পাড়ায় মাছ বিক্রি করতে আসতেন। তাদের কাছ থেকে প্রচুর তরতাজা সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। পাড়াবাসী বিলের সেই মাছগুলো জন্য অধীর প্রতিক্ষায় থাকতেন। সেই মাছগুলোর ভীড়ে রাণীমাছগুলোও থাকতো।  
 
এখনো অবশ্য মৎসজীবীরা মাছ বিক্রি করতে আসেন, তবে রাণী মাছগুলোকে আর দেখা যায় না। রাণীমাছগুলো দেখতে দেখতে প্রায় চোখের আড়ালই হয়ে গেল!  আমাদের অতীত স্মৃতির সঙ্গে বাংলার এ চিরন্তন রাণীমাছটি ভালোলাগার উজ্জ্বল উদাহারণ হয়ে মিশে রয়েছে হৃদয়ে।
 
যেভাবে হাওর-বিলগুলো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হচ্ছে তাতে অচিরেই হয়তো প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ সুস্বাদু মিঠাপানির মাছগুলো।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ মাছটিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভূক্ত করেছে। অনেক স্থানে এ মাছটিকে বউ মাছ, বেটি মাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী মাছ প্রভৃতি আঞ্চলিক নামে ডাকা হয়।
 
মৎস্য গবেষক এবং জুনিয়র ল্যাবেরেটরি স্কুল, ধানমন্ডি, ঢাকা এর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক একে জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাণীমাছের ইংরেজি নাম Bengal loach বা Queen loach। চলনবিলসহ আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় এক সময় এ মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।
 
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে রাণী মাছের দু’ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia dario এবং অপরটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia lohachata। Botia dario প্রজাতির রাণমাছের দেহের রং হলুদ এবং দেহে কালচে রঙের লম্বা দাগ থাকে।
 
আর Botia lohachata  প্রজাতির রাণীমাছের দেহও হলুদ বা হলদেটে। তবে এর দেহে ইংরেজি ‘ওয়াই’ বর্ণমালার মতো কালো দাগ থাকে এবং দু’টি দাগের মধ্যবর্তী অংশে একটি কালো দাগ অবস্থিত।
 
 
তবে Botia lohachata প্রজাতির চেয়ে Botia dario প্রজাতির রাণীমাছ আমাদের দেশে অনেক বেশি পাওয়া যেত। উভয় প্রজাতির মাছের আইশ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির-যা প্রায় সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝাই যায় না বলে জানান এ গবেষক।  
 
দৈহিকগঠন, প্রাপ্তি ও প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, রাণীমাছ প্রায় ৬-৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে সর্বোচ্চ ১৫ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হবার রেকর্ডও রয়েছে। এরা খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওর ইত্যাদির তলদেশে পরিষ্কার পানিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে প্রজনন করে থাকে। অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যখন বিলের পানি কমে যেতে থাকে তখন এরা জালে ধরা পড়ে বেশি।
 
রাণী মাছসহ অন্যান্য মাছের বিলুপ্তির কারণ প্রসঙ্গে এই গবেষক বলেন, আমাদের দেশে এক সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এ মাছটি পাওয়া গেলেও বর্তমানে এ মাছটির উপস্থিতি অনেকাংশেই কমে গেছে। শুধু রাণীমাছই নয়, মিঠাপানির অনেক সুস্বাদু মাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
 
এর অন্যতম কারণ-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ পালন না করে মাছ শিকার, মাছ ধরার ধ্বংসাত্মক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যত্রতত্র মাছ আহরণ, মা-মাছ কিংবা ছোট-বড় মাছ বিবেচনা না করে মাছ ধরা, রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি কিংবা মাছের কৃত্রিম খামার তৈরি করতে গিয়ে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো সমূলে ধ্বংস প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।