ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সবে শুরু, লক্ষ্য বহুদূর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৬
সবে শুরু, লক্ষ্য বহুদূর ছবি- শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজ

ইনানী থেকে: কর্মপরিকল্পনার বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যর মধ্যে প্রধান দিক ছিলো- বনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিকল্প ও টেকসই জীবিকার ব্যবস্থা করা।  

এগুলো বাস্তবায়নে দুই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তিন দিনের জ্ঞান বিনিময় কর্মশালা হলো, বান্দরবানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা হলো ১৩ জন ম্রো, ঢাকা থেকে পেশাদার ডিজাইনাররা গেলেন, ঐতিহ্য-আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটলো।

আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় কর্মশালাও শেষ হয়ে গেলো। এরপর?
 
দুই প্রতিষ্ঠানের একটি ক্রিয়েটিভ কন্সারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ)। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে কাজ করছে। বন বাঁচাতে পাহাড়িদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করার ভাবনা তাদেরই।
 
সিসিএ বলছে, পরিকল্পনা অনেক বড়। এটির বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কর্মশালা ছিলো শুরু মাত্র। এর মধ্য দিয়ে অনেক কিছু উঠে এসেছে। তারা কী পারেন, আমরা কী করতে পারি, কোন কোন জায়গায় ইনপুট দেওয়ার আছে, তাদের সঙ্গে কাজ করলে কী কী সীমাবদ্ধতা-সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে- এসব বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়েছে। এতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।
 
কর্মশালায় প্রথম ১৩ জনকে এমনভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে যেনো তাদের পরবর্তীতে প্রশিক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাদের এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেনো তারাই পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে অন্যদের শেখাতে পারেন। এরপর তাদের নিজস্ব এলাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাকিরাও যেনো আগ্রহী হয় সেভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
 
বাকিরা কেন আগ্রহী হবে? এর উত্তর দিচ্ছে সহযোগী অন্য প্রতিষ্ঠান বি ক্র্যাফট, কর্মশালা ছিলো একটি টেস্ট কেস। ভিন্ন পেশায় যেতে তারা এখন কোন অবস্থায় রয়েছেন সেগুলো দেখে নেওয়া হলো। আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাদের উৎসাহ দিতে এখনই বাঁশের জিনিস, পুঁতির গয়না, তাঁতের কাপড়ের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তারা যেনো সবদিক দিয়ে লাভবান হন সেদিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাজ শুধু চাহিদা অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করা। এরপর পণ্যের প্রচার-প্রচারণা, ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে সব করবে বি ক্র্যাফট। এই কাজ করেই যদি দেখা যায়, কোনো ম্রো পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে, তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে- তাহলে দেখাদেখি অন্যরাও নিশ্চয় আগ্রহী হবেন।
 
উদ্যোক্তাদের দাবি, এটি শুধু লাভ-ক্ষতির ব্যাপার নয়। এতে দিনশেষে যে তাদেরই লাভ সেটিও তাদের বুঝতে হবে এবং বোঝানো হবে। কারণ, এটি তাদের অস্তিত্বসংকটের প্রশ্ন। জুমচাষ তথা বনের উপর নির্ভরশীলতা তাদের ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে, বনকেও।
 
বি ক্র্যাফট টিম আরও জানায়, তাদের কাজের দক্ষতা, দিনপ্রতি পণ্যসংখ্যা প্রভৃতি হিসাব করে প্রাথমিকভাবে কিছু পণ্য অর্ডার করা হয়েছে। ডিজাইন, পণ্যের মাপ, কৌশল সব এঁকে এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে যে-বিষয়ে পারদর্শী তাকে সেই কাজেই লাগানো হবে। আগামী ডিসেম্বরে ন্যাচারাল ডাই নিয়ে কাজ করতে আমরা তাদের ওখানে যাচ্ছি। সেখান থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে ধীরে ধীরে বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও পণ্যগুলো তুলে ধরা হবে।
 
এছাড়া একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, বাঁশের কাজগুলো প্রধানত করে থাকেন ম্রো পুরুষরা। তাদের অধিকাংশই বছরের নির্দিষ্ট সময়জুড়ে জুমচাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কাজেই শুরুর দিকে বাঁশের জিনিসপত্রগুলো নির্দিষ্ট সিজনকেন্দ্রিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, রাতারাতি জুমচাষ বন্ধ হবে না। ধীরে ধীরে তাদের এদিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে, যোগ করে বি ক্র্যাফট।
 
এইটুকুর মধ্যেই থেমে থাকছে না। পরবর্তীতে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী অন্য পেশায়ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে তোলা হবে। টেকসই ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কোনো পেশায় তাদের সাবলম্বী করে তুলতে পারলেই পাল্টাবে জীবনযাত্রার মান। সেই পথ ধরেই আসবে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বাড়ানো, বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ- আশাবাদ উদ্যোক্তাদের।
 
**হস্তশিল্পে ভবিষ্যৎ দেখছে ম্রো জনগোষ্ঠী
**প্রজন্মের মধ্যে হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি
** ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়ের কর্মশালা

** কক্সবাজারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কর্মশালা 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৬
এসএনএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।