ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শিশির যেন প্রিয়ার মুক্তার মালা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
শিশির যেন প্রিয়ার মুক্তার মালা প্রকৃতিতে শিশিরের শৈল্পিক রূপ, ছবি: তারিক হাসান 

মৌলভীবাজার: বিন্দু বিন্দু জলজ শিল্পকণাই আসলে শিশির। এটি রাতের শুদ্ধতার অন্যতম প্রতীক। হিম প্রকৃতির সতেজ অনুভূতি সে। অপরদিকে, শিশির হৃদয়ভাঙা মানুষের বেদনার অশ্রু হয়ে ক্রমশই ঝরে। ঝরতেই থাকে। যা প্রতীক অর্থে প্রকৃতিতে, কাব্যে, গীতে বহুবার বহুভাবে ব্যবহৃত। 

অনেক মানুষেরই ভালো লাগার প্রিয়বস্তু হলো প্রাকৃতিক শিশির। সবুজ পাতায় জমে থাকা তার অজস্র কণার রূপ দেখে তার হৃদয়জুড়ায়।

হৃদয়ের গভীর এক ভালোলাগা তৈরি হয়। আঙ্গুলের স্পর্শ তার একটুখানি ছোঁয়ায় তাকে অমর করে রাখতে চায় মন।  

‘তোমায় ভালোবেসেছি আমি তাই/ শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই/ তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে/ চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে। ’ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তোমায় আমি’-তে এভাবেই শিশিরকে তার প্রিয়তমার সঙ্গে মিলিয়েছেন।  
প্রকৃতিতে শিশিরের শৈল্পিক রূপ, ছবি: তারিক হাসান শিশিরমালার এরূপ বিস্ময়কর সৌন্দর্য প্রিয়ার অপরূপ মুখশ্রীর কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রকৃতির এই নিবিড় শুদ্ধতাটুকু যেন তার গলাতেই অমরত্ব লাভ করবে। তার মুখশ্রীর সহাস্যতার সঙ্গে শিশিরমালার এমন কাল্পনিক অভিব্যক্তির নিভৃত প্রার্থনাকে সতেজ করে রাখে- অনাদি কালের তরে। শিশির যেন সত্যিই প্রিয়ার মুক্তার মালা।  

ঋতুচক্রে শীত আসে তার শিশিরকে প্রকৃতিতে দারুণভাবে বিলিয়ে দিতে। শিশিরের কণায় কণায় শীতের গভীর সতেজতা। ফসলসহ নানান খাদ্যসম্ভারকে শিশির তরতাজা রাখে। প্রেমিকযুগল শিশিরের নৈকট্য লাভের পর মনের আনন্দ, হৃদয় স্বস্তিতে পূর্ণ হয়।  

রাতের নির্জনতায় শিশির টুপটাপ ছন্দের ঝরে পড়ে। টিনের চালে শিশিরের মৃদুগুঞ্জরন দারুণ অনুভূতির এক প্রতিধ্বনি। যেন অনাহুত কারো চির আহ্বান। প্রকৃতির পরতে পরতে জমে থাকা শিশির সকালের সূর্যকিরণে মাখামাখি হয়ে হাসতে থাকে। কেবলি দারুণভাবে হাসতে থাকে।  
প্রকৃতিতে শিশিরের শৈল্পিক রূপ, ছবি: তারিক হাসান 

প্রিয় শিশিরকে খুঁজে পাওয়া গেল দারুণ শৈল্পিক রূপে। রাতের শিশির তখন মুক্তার মালার মতো। মাকড়সার জালে তার চিরন্তন শোভা বৃদ্ধি করে রয়েছে।  

পর্যটননগরী এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে এই শিশিরের এ মুক্তার মালার ছবি ধারণ করলেন সৌখিন আলোকচিত্রী তারিক হাসান।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রেয়সীকে হয়তো হীরা-মুক্তার হার উপহার দেওয়া যায় তবে পৃথিবীর সেরা হার উপহার কখনো দেওয়া যায়না। আর তাই হয়তো হাজারবার 'ভালোবাসি' বলার পরও ভালোবাসার প্রকাশ সম্পূর্ণ হয়না কখনো। যদি শীতের ভোরের মাকড়সার জালে শিশির দিয়ে গাঁথা হারখানি প্রেয়সীর গলায় পরিয়ে দেওয়া যেতো, 'ভালোবাসি' বলাও হয়তো পূর্ণতা পেয়ে যেতো। ’ প্রকৃতিতে শিশিরের শৈল্পিক রূপ, ছবি: তারিক হাসান 
এ আলোকচিত্রগুলো ক্যামেরাবন্দীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সকালে শ্রীমঙ্গলের শহর সংলগ্ন চা বাগানের সড়ক ধরে যাচ্ছিলাম। পথের মধ্যে হঠাৎ শিশিরের এমন সৌন্দর্য দেখে দারুণ ভালো লাগলো। তখন এই ছবিগুলো ধারণ করলাম। ’ 

কতভাবেই না প্রকৃতিতে শিশির তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। একটু যত্ন করে তাকালেই আমাদের সবার চোখেই এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটি ধরা পড়বে বলে জানান সৌখিন আলোকচিত্রী তারিক হাসান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭ 
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।