ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হঠাৎ বৃষ্টিতে উপকার চায়ের

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
হঠাৎ বৃষ্টিতে উপকার চায়ের চা বাগানের সেকশনে বৃষ্টিপাত। ছবি : বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি চায়ের দেশে জন্য বয়ে এনেছে সুফল। কখনো কখনো মুষলধারে ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়া চা গাছের স্বাস্থ্যের জন্য উর্বরতা দান করছে। বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সুদূরপ্রসারী উৎকৃষ্ট ফলাফল।  ইতোমধ্যে ঠাণ্ডা আমেজ বইতে শুরু করেছে চা বাগানের এলাকাজুড়ে।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (১০ অক্টোবর) থেকে বৃহস্পতিবার ( ১১ অক্টোবর) পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে ১৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

শ্রীবাড়ি চা বাগানের ব্যবস্থাপক এবং টি-প্লান্টার উত্তম কৃষ্ণ মহারত্ন বাংলানিউজকে বলেন, চায়ের জন্য এই সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত অবশ্যই মঙ্গলজনক এবং তা আগাম সুফল বয়ে আনবে।

এই সুফলটা হলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে যে খরা হয় সেই খরা কাটতে সাহায্য করবে এই বৃষ্টি। চা গাছের মাটিতে ময়েশ্চার তৈরি হয় তা ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরো বলেন, তারপর আরেকটি উপকারে আসবে এই বৃষ্টি সেটা হলো যারা ইয়াং-টি বা নতুন চা গাছ লাগিয়েছে সেই গাছের জন্য অধিক উপকার বয়ে আনবে। ইরিগেশন (সেচ) করতেই হবে। কিন্তু বিশাল এলাকা ইরিগেশন দিয়ে ইয়াং-টি বা নতুন চা গাছের পানি দেওয়া কাভার করা খুব কঠিন ব্যাপার। আর রিমুট এরিয়ার জন্য ইরিগেশন তো আর জটিল ব্যাপার। তাই প্রাকৃতিক এই বৃষ্টিপাত সেচের জন্য অতি উত্তম।
.
স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং পানি ছিটিয়ে সেচ দেওয়ার পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চা গাছে প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত এবং ইরগেশনের মাধ্যমে পানি ছিটানো এই দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতে ড্রপিঙের একটি কন্টিনিউয়েশন থাকে। এই ড্রপিং-কন্টিনিউয়েশন থাকার ফলে চা গাছগুলো তার প্রয়োজনীয় পানিটুকু শোষণ করে নিতে পারে। কিন্তু ইরগেশনে সেটা সম্ভব হয় না।

হরিণছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও টি-প্লান্টার হক ইবাদুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যে ইয়াং-টি লাগিয়েছি এটার জন্য এই বৃষ্টিপাত খুব সাপোর্ট দেবে। তাদেরকে পানিশূন্যতার হাত থেকে বাঁচাবে। বড়চেয়ে বড় উপকার হবে আমাদের চা বাগানের পাহাড়ি ছড়াগুলোর। কারণ এই মৌসুমে চা বাগানের ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা বাগানের ছড়াগুলোতে পানি জমা হবে এবং প্রায় মাসখানেক তা আমাদের সাহায্য করবে। এই পানিগুলো আমরা আমাদের ইরিগেশনে ব্যবহার করতে পারবো।  

এই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে এবং ঠাণ্ডা পড়বে। এ তাপমাত্রা কমায় চা গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। কমপক্ষে ২৭-২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা না হলে চা গাছ বাড়ে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

তিনি আরো বলেন, এই বৃষ্টিপাতের সুদূরপ্রসারী উপকারিতার অন্যতম উপকারটি হলো, এই বৃষ্টিপাতের ফলে পরবর্তী মৌসুমে তাড়াতাড়ি কুঁড়ি গজাবে। এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এর ফলে চা গাছের মাটি পানি ধরে রেখে পরবর্তী খরা পর্যন্ত চা গাছগুলোকে খরা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাবে। ইয়াং-টি, ম্যাচিউর-টি বা নার্সারি-টি সব চা গাছের জন্যই এ বৃষ্টিপাত উপকারী।

শীতকালে আমরা যখন উইন্টার প্লান্টিং করি বা এখন যে চারা লাগিয়েছি সেগুলোতে শীতকালে আমরা যখন ইরিগেট করবো, মাটিতে রস থাকতে থাকতে আমরা যখন মার্জিন (চা গাছের মাটিকে কচুরিপানা চা গাছের মৃতপাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া) করবো তখন এই বৃষ্টিপাত আমাদের প্রচুর সার্পোট জোগাবে বলে জানান টি-প্লান্টার হক ইবাদুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।