ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাইক্কা বিলের আশপাশে অবাধে চলছে পাখি শিকার    

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৯
বাইক্কা বিলের আশপাশে অবাধে চলছে পাখি শিকার     বাইক্কা বিলের পার্শ্ববর্তী বিল থেকে উদ্ধার করা পাখিশিকারের অবৈধ জাল। ছবি : বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বাইক্কাবিল মৎস্য অভয়াশ্রমের আশপাশে অবাধে পাখি ধরার জাল দিয়ে চলছে শিকার। এক শ্রেণীর অপরাধীচক্র এ অসাধু কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বিশেষ কৌশলে পেতে রাখা জালেই আটকা পড়ছে পরিযায়ী জলজ পাখিরা। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যত নীরব। 

পাখি গবেষকরা বাইক্কা বিলে পাখির পায়ে রিং পরাতে গিয়ে নিজেরা সেই অবৈধ জালের সন্ধান পেয়েছেন। পরে ওই অবৈধ জালগুলো বিলের পানি থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছেন।

বাইক্কাবিলে জলচর পাখির পায়ে রিং পরানোর সময় পাখি গবেষকরা বাইক্কাবিলের পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে পাখিধরার এমন সূক্ষ্ম জালের সন্ধান পেয়েছেন।  

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বাংলানিউজকে বলেন, বাইক্কার বিলের পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে এক শ্রেণীর অপরাধীচক্র পাখি ধরার অবৈধ জাল ফেলে রাখছেন। এতে জলচর হাঁসগুলো ধরা পড়ছে। আমরা বাইক্কা বিলে কিছুদিন ধরে জলজ পাখির রিংগিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি; তখনই এ ব্যাপারটি আমরা দেখতে পাই।  

তিনি আরো বলেন, বাইক্কা বিলে কোনো শিকার হয় না। তবে বাইক্কা বিলের আশপাশে জাল পেতে অবাধে পাখি ধরা হচ্ছে। সারাদিন বাইক্কা বিলে আমরা যে সমস্ত পাখিদের দেখি, তারা সন্ধ্যার পর খাবারের জন্য পার্শ্ববর্তী বিলের দিকে চলে যায়। যাওয়ার সময় এবং আসার সময় ওই জালগুলোতে আটকা পড়ে। কুয়াশার মধ্যে পাখিগুলো জাল দেখতে পায় না।  বাইক্কা বিলে বালি হাঁসের পায়ে পরানো হচ্ছে রিং।  ছবি : বাংলানিউজসারোয়ার আলম দীপু আরো বলেন, বাইক্কা বিল তো একটি ছোট বিল। তাই পাখিগুলো অতিরিক্ত খাবারের সন্ধানে অন্য বিলগুলোতে চলে যায়। ভোরের দিকে আবার বাইক্কা বিলে ফিরে আসে। সন্ধ্যার পর পাখিদের অন্যত্র যাওয়ার বিষয়টি আমরাও আগে জানতাম না; গবেষণার পর ধরা পড়েছে।

জলচর হাঁসগুলো সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যার পর যখন নতুন করে খাদ্যের সন্ধানে পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে যায় তখনই পাখি ধরার জালে তারা আটকা পড়ে যাচ্ছে। একটা অসাধুচক্র এ কাজে জড়িত। আমরা পাখি ধরার এমন ১০০ জাল দেখেছি। কিছু জাল আমরা নিজেরাই পুড়িয়েছি।  

বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিচালিত ‘বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন’ এর সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিবছর এমন জাল পানি থেকে তুলে পুড়িয়ে থাকি। এবারও পুড়িয়েছি। বাইক্কা বিল বা এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবৈধভাবে জাল দিয়ে পাখি ধরার বিরুদ্ধে আমাদের তদারকি চলছে।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু মুসা সামসুল মুহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাইক্কা বিলের পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে অবৈধভাবে জাল দিয়ে জলচর পাখি ধরা বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গত দু’সপ্তাহ দিন ধরে বাইক্কা বিলে পাখির জলচর পাখিদের পায়ে রিং পরানোর কাজ চলেছে। এ কার্যক্রম শনিবার (২ মার্চ) শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জলজ পাখির পায়ে রিং পরানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।