ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সংরক্ষিত বনে মাইক বাজিয়ে উৎসব শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
সংরক্ষিত বনে মাইক বাজিয়ে উৎসব শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় ড. ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ড

কড়া রোদ জ্বলা বসন্তের দুপুরে নিকেতনের বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে গরমের অস্বস্তির চেয়ে বড় ভাবনা কাঁচা প্রশ্ন শুনলে না আবার ক্ষেপে যান। সঙ্গে বন্যপ্রাণী গবেষক অনিমেশ ঘোষ অয়ন। গেট গলিয়ে বেরিয়ে এলেন রোদে পোড়া চেহারার সপ্রতিভ একজন দীর্ঘদেহী মানুষ।  নিজেই আগ বাড়িয়ে হাত মেলালেন। কে বলবে ইনিই পৃথিবীব্যাপী বন্যপ্রাণ আর নৃতাত্ত্বিক গবেষণার একজন অগ্রণী ড. ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ড!

নিজেই নিয়ে গেলেন পেইং গেস্ট হিসেবে ওঠা এক কামরার ফ্ল্যাটে।  আজই বাংলাদেশে তার শেষ দিন।

 আগেই জানা ছিল মোটামুটি আধঘণ্টার মতো সময় পাবো।  উষ্ণতা মাখা চাহনিতে অনর্গল বলছেন।  যেন কতদিনের পরিচয়। একটুও বোঝার উপায় নেই এই মানুষটিই জীববিদ্যা বন্যাপ্রাণী সংরক্ষণে কত উল্লেখযোগ্য গবেষণা এবং বই লিখেছেন।  

তার অসাধারণ কয়েকটি বই হচ্ছে বায়োলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি, দ্য লাস্ট টরটেইজ, দ্য ওয়ার্ল্ড উইথআউট অ্যাপস। মোট ১৬টি বইয়ের রচয়িতা তিনি। বিশ্বব্যাপী গবেষক এবং জীববিদ্যা ও নৃ-তত্ত্বের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য এসব বই। সহকারী হিসেবে পৃথিবীর শিম্পাজি রক্ষার কিংবদন্তি গবেষক জেইন গডালের সঙ্গে তানজানিয়ার গোম্বি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেছেন। এখন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে।

প্রথম জীবনে বন্যপ্রাণ নিয়ে গবেষণায় উৎসাহী হন সরীসৃপদের নিয়ে কাজ করে। এক সহপাঠীর বইয়ে শিম্পাঞ্জির ছবি তাকে কৌতূহলী করে প্রাইমেটদের সম্পর্কে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই অসাধারণ মানুষটির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ১৯৮৬ সালে পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে এসেছিলেন চশমা পরা হনুমানদের নিয়ে গবেষণা করতে।  সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি।

‘সেই সময় মধুপুর ছাড়াও বান্দরবান সিলেটের কয়েকটি বনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। এদেশে মানুষের কারণে বন্যপ্রাণীরা কেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেখেছিলাম। দেখলাম একটি সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানে লোকেরা মাইক বাজিয়ে পিকনিক করছে। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, পৃথিবীর প্রায় সব দেশের। এ ধরনের অবস্থান থেকে উত্তরণে ইকো ট্যুরিজমের ধারণা তৈরি হয়। কিন্তু দেখা গেছে এটিও দু’মুখো তলোয়ারের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। এখান থেকে হয়তো অর্থ আসছে। কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্যটিও আমাদের বুঝতে হবে। ’

তবে ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ড বলছেন জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতায় বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অনন্য।  এই অঞ্চলর বন্যপ্রাণ রক্ষার তাগিদ তার। ক্রমবর্ধমান বন ধ্বংস, শিকার, শিল্পায়নের এই আগ্রাসনের মধ্যেও কীভাবে সম্ভব পৃথিবীর এসব অমূল্য সম্পদ রক্ষা।  দিয়েছেন উদাহরণ, সমাধান বাতলেছেন ক্রেইগ।  

‘আমেরিকা আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু সেখানেও একই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সংরক্ষিত অঞ্চল করে বন্যপ্রাণ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে জায়গা কম কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি। জমি এখানে অনেক মূল্যবান। তাই যে কোনো মূল্যে বিদ্যমান সংরক্ষিত অরণ্য ও ভূমির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন জায়গা সৃষ্টি করেই কেবল এই দেশের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষ করতে হবে। ’

‘এসব ব্যাপার এতো সহজ নয়, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তাই সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক উদ্যোগটাও জরুরি। ’

কচ্ছপ সংরক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য রাখছেন ক্রেইগএসবের ফাঁকে নিজের গবেষণাকর্মের নানা অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন ক্রেইগ। নিজের শিম্পাঞ্জি গবেষণার ব্যাপারে বলতে গিয়ে প্রথম এই প্রাণীটিকে দেখার মজার স্মৃতিচারণা করলেন। জঙ্গলে পাথর ভেবে ভয়ংকর দর্শন এই প্রাণীটির একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন তিনি। বন্যপ্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষা এবং গবেষণার কাজে কোনো উচ্চ ডিগ্রির তেমন প্রয়োজন নেই বলে মত এই তুখোড় অধ্যাপকের। নবীণ বন্যপ্রাণী গবেষক এবং এ ব্যাপারে উৎসাহীদের দিয়েছেন পরামর্শ।  

‘সংরক্ষণের কাজ করবার জন্য পিএইচডি ডিগ্রির তেমন প্রয়োজন নেই।  এ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানটুকু থাকলেই চলবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মাঠে-ময়দানে কাজ করা। একমাত্র হাতে-কলমে কাজই হচ্ছে এক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ’

কথায় কথায় আধঘণ্টার জায়গায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু পরিবেশ আর বন্যপ্রাণের কথা ফুরোয় না ড. ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ডের। উঠতে হলো।  রাতে ঢাকা ছাড়ার আগে রাজধানীতে ওয়াইল্ড টিমের একটি অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী কচ্ছপ সংরক্ষণের উপর একটি বক্তৃতা দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।