ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আরো একটি ‘নতুন পাখি’ পেলো বাংলাদেশ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৯
আরো একটি ‘নতুন পাখি’ পেলো বাংলাদেশ  বাংলাদেশের নতুন পাখি ‘খয়রা-লেজ চুটকি’। ছবি: নাঈম ইসলাম

মৌলভীবাজার: পাখ-পাখালির দেশ বাংলাদেশ। নানা প্রজাতির নানা পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বাংলার প্রকৃতি। তবে বর্তমানে গাছপালা কাটা, বন উজাড়ের ফলে নানাভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে আমাদের পরিবেশ। 

পাখি আমাদের পরিবেশের এক উপকারী প্রাণী। বাংলাদেশে বিচরণকারী পাখি-প্রজাতির রেকর্ড করা সংখ্যা প্রায় ৭শ।

সম্প্রতি যোগ হলো নতুন আরো একটি পাখি। এর ইংরেজি নাম  Rusty-tailed Flycatcher। এ পাখিটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে- ‘খয়রা-লেজ চুটকি’।  

নাঈম ইসলাম নামে এক সৌখিন পাখি আলোকচিত্রী সম্প্রতি পাখিটির ছবি ধারণ করেন।  

নাঈম ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বগুড়ার জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রাম থেকে গত এপ্রিল মাসে পাখিটির দুটো ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি যে আমার তোলা এই Rusty-tailed Flycatcher এর এ ছবিটি নতুন পাখির রেকর্ড করা ছবি হিসেবে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। পাখি গবেষকদের মধ্যে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হলো আমার ছবিই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পাওয়া Rusty-tailed Flycatcher পাখির ছবি। এ আনন্দ শুধু আমার একার নয়; আমি যাদের সঙ্গে বার্ডিং করি তাদেরও।   

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আনন্দের খবর এই যে- বাংলাদেশের পাখির তালিকায় আরো একটি নতুন পাখি যোগ হলো। আমাদের দেশের অন্য ‘চুটকি’র (Flycatcher) সঙ্গে মিল রেখে আমি এর বাংলা নামকরণ করেছি ‘খয়রা-লেজ চুটকি’। এর লেজ যতটা খয়েরি রঙের ততটা আমাদের দেশের কোনো চুটকির (Flycatcher) নেই। Rusty-tailed Flycatcher এই ইংরেজি নামটিও বর্ণনামূলক। সেই জন্য ইংরেজি নামের সঙ্গে মিল রেখে এই বাংলা নামকরণ করলে পাখিটি শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।  

তিনি আরো বলেন, ৩০টির মতো চুটকি (Flycatcher)  বাংলাদেশে দেখা যায় এবং এরা সবাই পরিযায়ী। আমাদের দেশে শীতে তারা থাকে এবং গ্রীষ্মে ডিম পাড়তে চলে যায় উত্তরের দিকে। সবচেয়ে কাছের যারা তারা নেপাল-ভুটানের পাহাড়ের উচ্চতায় বাসা করার জন্য চলে যায়। অন্য চুটকিরা (Flycatcher) উত্তরের আরো দূরে আফগানিস্তান, ইরানসহ প্রভৃতি দেশে চলে যায়।

উল্লেখযোগ্য তথ্য যোগ করে ইনাম আল হক বলেন, চুটকির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো– এই পাখিগুলো পরিযায়ী পাখি। শীতের আবাস এবং গ্রীষ্মের আবাস। নীলগিরি পর্বত অর্থাৎ, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে সে শীতটা কাটায়। আর গ্রীষ্মে চলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের শেষ মাথা অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের পর্বতের উপরে বাসা করে ছানা ফোটায়।
বাংলাদেশের নতুন পাখি ‘খয়রা-লেজ চুটকি’।  ছবি: নাঈম ইসলামমজার ব্যাপার হলো- চুটকির যাতাযাতের পথে কিন্তু বাংলাদেশ পড়ে না।  বাংলাদেশ তো অনেকখানি পূর্ব দিকে। কারণ, আপনি যদি পশ্চিম ভারত থেকে কাশ্মীর যান, তাহলে বাংলাদেশ হয়ে তো যেতে হয় না। এমনি পশ্চিমবঙ্গ হয়েও যেতে হয় না। তার অর্থ দাঁড়ায়- আমাদের কাছে চুটকি পাখিটি জানা তথ্যগুলো রয়েছে তা অসম্পূর্ণ। অর্থাৎ, চুটকিরা শুধু পশ্চিম ভারতেই শীত কাটায় না; ওরা বাংলাদেশেও কাটায়।  

তিনি আরো জানান, আমাদের জানা ছিল না যে- ‘খয়রা-লেজ চুটকি’ পাখিটি শীত কাটাতে বাংলাদেশেও আসে। সুতরাং, এই পাখিটি সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বছরের একবার এক প্রজাতির পাখির ছবিই যথেষ্ঠ নয়। আমাদের তাহলে পরবর্তী বছরে ওই এলাকাগুলোকে পাখিগবেষকদের অনুসন্ধান চালাতে হবে। যদি আমরা আগামী বছরও আরো ‘খয়রা-লেজ চুটকি’ পাখি দেখি, তাহলে পাখি বিজ্ঞানে একটি নতুন তথ্য সংযুক্ত হবে যে- এই পাখিটি শুধু পশ্চিম ভারতেই শীত কাটায় না; ভারতের একদম পূর্বে এসে বাংলাদেশেও শীত কাটায়।  

‘এমনকি এই পাখিটিকে আসামেও পাওয়া যেতে পারে। একটি নিশ্চিত তথ্য পেলে সুবিধে হয় হয় কি তখন পাখিগবেষকরা সেই পাখিটি খুঁজতে থাকেন। কারণ এটি খুব ছোট পাখি। পাখি বিজ্ঞানী বা পাখি গবেষকদেরও চোখ এড়িয়ে যায়। ’  

সৌখিন পাখি-আলোকচিত্রীদের প্রসঙ্গে ইনাম আল হক বলেন, বাংলাদেশের পাখি গবেষণায় আমাদের দেশের নতুন নতুন সৌখিন আলোকচিত্রীদের তোলা ছবি খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। আমরা তাদের কারো কারো কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছি। যেমন ধরুন- সে শখের বসে সারাদিন বনজঙ্গলে ঘুরে একটি নতুন পাখির ছবি তুলে আমাদের দিলো, সে হয়তো এ নতুন পাখিটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আমরা এই পাখি নিয়ে গবেষণা করে করে তারপর বলে দিতে পারি- এটা নীল-গলা চুটকি, বা ছোট-নীলমণি। কারণ ছোট-নীলমণিরও কিন্তু খয়রা লেজ। আমরা হঠাৎ করে ‘খয়রা-লেজ চুটকি’ পাখিটিকে দেখে হয়তো বলতাম- ‘ও এটা ছোট-নীলমণি। ’ তাই ছবি তোলার ফলে পাখিগুলো যথার্থ পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।  

এ গবেষক আরো বলেন, ‘বড় পাখিগুলো সহজে চোখে পড়ে; কিন্তু ঝোপ থেকে ঝোপে উড়ে যাওয়া ছোট পাখিগুলো খুঁজে বের করে ছবি ধারণ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। আমাদের জন্য একটি নতুন কাজ হলো আগামী শীত মৌসুমে এই পাখির অস্তিত্ব পুনরায় অনুসন্ধান করা। যদি পাখিটিকে আগামী শীতেও রাজশাহীর বগুড়াতে পাওয়া যায়, তাহলে এই এলাকার নামটি সংযুক্ত হয়ে যাবে খয়রা-লেজ চুটকির আবাসস্থল হিসেবে।

খয়রা-লেজ চুটকির উচ্চতা মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার। এরা পাহাড়ি পরিবেশে বসবাস করা পাখি। হিমালয়ে প্রজনন করে এবং শীতকাটায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের নীলগিরি পর্বতে বলে জানান পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।