ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দৃষ্টিনন্দন ‘নন্দিনী’

শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
দৃষ্টিনন্দন ‘নন্দিনী’ ফুল নন্দিনী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: গোলাপের মতো দেখতে বিভিন্ন রঙের বাহারি ফুল ‘লিসিয়েন্থাস’। ফুলদানিতে বেশিদিন সতেজ থাকায় ফুলটির চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। পাইকারি বাজারে এ ফুলের দাম গোলাপের তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি বলে জানা গেছে।

সরকারি সহযোগিতার অভাবে বাংলাদেশের কৃষক পর্যায়ে ফুলটি চাষের পরিধি বাড়েনি বলে মনে করছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ফুলটির গবেষক জামাল উদ্দিন।

গবেষক জামাল ফুলটির বাংলা নাম দিয়েছেন ‘নন্দিনী’।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি এই ফুলটি নিয়ে গবেষণা করছেন।

ফুলটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত একটি ফুলের দাম নির্ধারিত হয় ফুলটির রং ও ফুলদানিতে ফুলটির স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। ‘নন্দিনী’ ফুলদানিতে সাধারণত ১০-১৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। তাছাড়া এই ফুলের পাপড়ি কখনও ঝরে পড়ে না। তাই অন্যান্য ফুলের তুলনায় এই ফুলটির চাহিদা যেমন বেশি তেমনই এর দামও কয়েকগুণ বেশি।

কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে এ ফুলের অবস্থান বিশ্বে দশম। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বর্ণ বৈচিত্র্য ও স্থায়িত্বের কারণে এ ফুলটি আর্ন্তজাতিক ফুল বাজারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে বলে জানান ফুল বিশেষজ্ঞরা।

‘নন্দিনী’ গবেষক ড. জামাল বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ‘নন্দিনী’ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফুল চাষিরাও এই ফুলের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাহায্য ও লোকবলের অভাবে ব্যাপকহারে এই ফুলের চারা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষক পর্যায়ে এখনও সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারেনি ‘নন্দিনী’।

ড. জামাল উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) আর্থিক সহায়তায় যশোরে ২০ জন ফুলচাষিকে একটি কর্মশালার মাধ্যমে ‘নন্দিনী’ ফুলের চারা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে তারা বেশ ভালো লাভবান হয়। কিন্তু ‘নন্দিনী’ ফুলের চারা উৎপাদন জটিল হওয়ায় পরবর্তীতে তাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী চারা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ফুলটির গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, বারবার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সাহায্য চেয়েও পাচ্ছি না। তবে কোনো একদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ফুলের অপার সম্ভাবনার কথা বুঝতে পারবে। স্বীয় গুণের জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুলবাজারে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ফুল হবে ‘নন্দিনী’। ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র আমি এবং আমার কিছু ছাত্র ছাড়া ‘নন্দিনী’ ফুলের চারা উৎপাদন পদ্ধতি আর কেউ জানে না। ফলে পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা এবং লোকবল না থাকায় আমি ফুল চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী চারা দিতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি সংস্থার সাহায্য চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নন্দিনীর টিকে থাকার ক্ষমতা রয়েছে। গাছটির কাণ্ড শক্ত বলে বেঁকে বা নুয়ে পড়ে না।

জানা যায়, ‘নন্দিনী’ ফুলটির আদি বাস যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বত এলাকায়। জাপান, মেক্সিকো, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে ফুলটি জন্মায়। ১২ মাসই  উৎপাদন যোগ্য এ ফুল গাছটি লবণ ও খরা সহনশীল। তাই খরা ও লবণাক্ত প্রবণ এলাকার চাষিদের জন্যও দৃষ্টিনন্দন ‘নন্দিনী’ সম্ভবনার এক নব দিগন্ত উন্মোচিত করবে। এমনটাই সংশ্লিষ্ট গবেষকদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।