ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু আইড় মাছ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু আইড় মাছ

মৌলভীবাজার: ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’-এ প্রবাদটি যেন ক্রমেই মিথ্যে হতে চলেছে। আজ থেকে দশ বা বিশ বছর আগে যেসব মাছ পাওয়া যেতো সেগুলোর অনেকগুলোই আজ অতীত। দেশের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো মারাত্মকভাবে দখল আর দূষণের শিকার। ফলে প্রাকৃতিক মাছের জীবনও বিপন্ন। 

মাছ আর ভাতের সঙ্গে বাঙালিদের প্রজন্মগত সুসম্পর্ক বিরাজমান। খেতে বসলে মনে পড়ে যায় সেই শৈশবের কথা! মায়ের বকুনি! খাবার শেষ করে ওঠার প্রতি বাবার কঠোর নির্দেশ।

সবই খাবার ঘিরে। আমাদের শৈশবের স্মৃতিপটে তাই আজও চিরস্মরণীয়- বাড়ির সবাই মিলে দুপুর বা রাতে একসঙ্গে খেতে বসার পর্বটি।

সেই শৈশবের প্রিয় মাছেরা আজ অমিল। হারিয়ে গেছে বা হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমন একটি শৈশবের প্রিয় মাছের নাম ‘আইড়’। এর ইংরেজি নাম Long-whiskered Catfish এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sperata aor। মাছটির গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ সেন্টিমিটার।       

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ও মৎস্য গবেষক মো. শহীদুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, আইড় সুস্বাদু একটি মাছ। মাছটি পানির নিম্নস্তরের বসবাস করে। নদী-নালা, খাল-বিল, প্রাকৃতিক হাওর-জলাভূমিসহ পুকুর-ডোবাতে পাওয়া যেতো। তবে এখন এ মাছটি একেবারে বিলুপ্তির পথে। তবে বাজারে এই আইড় মাছের চাহিদা প্রচুর।  

শ্রীমঙ্গল শাহজালাল ফিস সাপ্লাইয়ার্স এর মৎস্য ব্যবসায়ী মনসুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, আইড় মাছগুলোকে এখন আর তেমন দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে যদিওবা খুব অল্পসংখ্যক বাজারে ওঠে সেগুলোর দাম অনেক বেশি। গত দশ বছর আগে আমাদের হাইল হাওর বা বাইক্কা বিলে যেসব প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো সেগুলো এখন আর নেই। এখন অধিকাংশই চাষ করা মাছ।  

এ মাছটিকে ‘শংকটাপন্ন’ উল্লেখ করে মৎস্য গবেষক শহীদুর বলেন, আড়ই মাছসহ আরো দু-চারটি শংকটাপন্ন দেশি প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করার উদ্যোগ আমি নিয়েছি। যাতে আমাদের দেশের এই সুস্বাদু মাছগুলো টিকে থাকতে পারে। এলাকার সফল খামারিদের মধ্যে সেই বিপন্ন মাছগুলোর পোনা বিতরণের মাধ্যমে এ প্রজাতিগুলোকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।

আগের মতো নদী, খাল-বিল, পুকুর-হাওরসহ প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো না থাকা, পাইল ফিসিং ২-৩ বছর নির্দিষ্ট স্থানে মাছসংরক্ষণ করে না রাখা এবং নদী ও খালবিলে নতুন পানি আসার সময় শুকনো জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার কারণে আড়ই মাছসহ দেশি প্রজাতির অনেক মাছ আজ বিলুপ্তির পথে চলে গেছে বলে জানান শ্রীমঙ্গল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান সিদ্দিকী।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।