ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জঙ্গলের খোঁজে শালবনে…

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৯
জঙ্গলের খোঁজে শালবনে…

লালমনিরহাট: সারি সারি শাল আর ঝাউগাছ। সঙ্গে নানা রকমের পাখির কলকাকলি। যে কারো মন ভরে ওঠবে। বিশাল বনের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মেঠোপথ। এ পথ ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে গভীর অরণ্য। যেনো অন্যরকম অনুভূতি। 

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস এলাকায় প্রাকৃতিক অরণ্য শালবনে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল বনে গাছের নিচে আলাদা করে লাগানো হয়েছে বেতগাছ।

পাখির কিচিরমিচিরের সঙ্গে দিনের বেলাতেও শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকা। নানা রঙের ফড়িং, মাকড়সা, বুনো ফল দেখে অন্য রকম অভিজ্ঞতা দেবে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই শালবন।

তাই একটু অবসর পেলেই প্রশান্তির খোঁজে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে যান এই গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ জঙ্গলে। বাদ যায় না ঈদের ছুটিও। ঈদসহ যেকোনো ছুটিতে এখানে বসে প্রকৃতিপ্রেমী ও বিনোদনপ্রেমীদের মিলন মেলা। দিনভর উপভোগ করেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় অরক্ষিত থাকলেও নিরাপত্তা এবং বনানী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগের ফলে এখানকার প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে প্রাচীর। রয়েছে পর্যটকদের বসার জায়গা, বিশ্রামাগার ও শৌচাগারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা।  

আর মুখরোচক নানা খাবারের দোকানও বসেছে। বনে ঘুরতে আসা একব্যক্তি বলেন, এ বনে ঘুরতে বা প্রবেশ করতে কোনো গেটপাশের প্রয়োজন হয় না। যারা প্রয়োজনীয় খবার সঙ্গে নিয়েই আসেন এখানে। প্রতিদিনই মানুষ আসে। তবে ছুটির দিনগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ে।  

জানা যায়, সীমান্তবর্তী এ জেলার বিনোদন প্রিয় মানুষের জন্য কোনো পর্যটন কেন্দ্র নেই। ফলে মানসিক প্রশান্তির খোঁজে জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ শালবনে ভিড় জমান।  

বনটিকে ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। এজন্য সেভাবে পর্যটকবান্ধব হয়ে এখনও গড়ে ওঠতে পারেনি। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ শালবনটি সংস্কার করে বন্যপ্রাণীর অভায়শ্রম ঘোষণা করে পর্যটন স্পট করতে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।  

স্থানীয় কলেজ ছাত্র নূর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে বিনোদন প্রিয় মানুষের সমাগম ঘটে শালবনে। বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ঘোষণা করে এ বনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।  

স্থানীয় নওদাবাস ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অশ্বিনী কুমার বসুনিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক একর আয়তনের এ শালবনটি রক্ষায় বনবিভাগের এই বিটে জনবল সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত বনরক্ষী না থাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।  

‘বনটি সংস্কার করে পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম করলে এখানে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে পর্যটনসেবা বঞ্চিত বিনোদন প্রিয় জেলাবাসীর চিত্ত-বিনোদনেরও একমাত্র স্পট হতে পারে এই শালবন। ’

এ জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

যেভাবে যাবেন:
লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এই বনের অবস্থান। সেখানে যাওয়া যায় সড়ক ও রেলপথে। রাজধানী ঢাকা থেকে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন অথবা সড়ক পথে বাস যোগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহরে পৌঁছতে হবে। এরপর প্রাইভেট কার, বাস, মিনিবাস, রিক্সা, ভ্যান ভাড়া করে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন শালবনে।  

শালবনে রাতযাপনের ব্যবস্থা নেই। তবে হাতীবান্ধা শহরে সুলভ মূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ডাকবাংলো ও ব্যক্তিমালিকানাধীন রেস্ট হাউস বা আবাসিক হোটেলে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯ 
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।