ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৯
হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পদ্মা, মহানন্দা, পূর্ণভবা ও পাগলা নদী বিধৌত এলাকা ছাড়াও রয়েছে মরিচা বিল, বিল ভাতিয়াসহ বিভিন্ন খাল-বিল। কিন্তু এতগুলো নদী ও বিল-খাল থাকার পরও জেলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল এ ৪টি উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেও আশানুরূপ দেশি প্রজাতির মাছ মিলছে না।

মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে আগের বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে চলতি মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী।

মৎস্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, মা মাছ নিধন, অভয়াশ্রমের অভাব ও সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন এ জেলায় দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ প্রায় নির্বিকার।

স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করে। চলতি মৌসুমে আশানূরুপ বৃষ্টি হয়েছে। অথচ বর্ষা প্রায় শেষ প্রান্তে এলেও বাজারে দেশীয় মাছ উঠছে না। জলাশয়গুলোতে একসময় শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, বাঘাইড়, টাকি, গুঁচি, চ্যাং, শোউল, গজার, বোয়াল, বালিয়া, বাইম, পুঁটি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। এখন এসব প্রজাতির মাছ পাওয়াই দুষ্কর। বিলুপ্তপ্রায় এই মাছগুলো একসময় চিরচেনা হলেও এখন তা এলাকাবাসীর কাছে খুবই অপরিচিত। জেলার সচেতন মহলের শঙ্কা, এসব মাছকে সচেতনতার মাধ্যমে ধরে রাখতে না পারলে হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে। আর এসব মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে জনসাধারণ।

এছাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মাঝে মধ্যে বাজারে কিছু আমদানি হলেও তার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাট, মহানন্দা নদীকুলবর্তী বারোঘরিয়া বাজার, শিবগঞ্জ উপজেলার রানিহাটী, পদ্মা নিকটবর্তী মনাকষা হাট, বিনোদপুর হাট, পাগলা নিকটবর্তী পাগলা, গোমস্তাপুর উপজেলার পূর্ণভবা নদী তীরবর্তী রহনপুর হাট, ভোলাহাট ও নাচোলে কয়েকটি হাটবাজারেও একই অবস্থা। রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিদেশি মাগুর, পাঙ্গাশ, বিদেশি কৈ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পুকুরে চাষ করা মাছ বিক্রি হলেও দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কম। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আবার ক্রেতাদের প্রতারিত করে বিদেশি চাষকরা তেলাপিয়া ও কৈ দেশীয় মাছের সমপরিমাণ মূল্যে বিক্রি করলেও দেখার কেউ নেই।

শিবগঞ্জ বাজারের মাছ ক্রেতা বারিউল ইসলাম বুলবুল জানান, আগে বাজারে দেশি মাছ সরবরাহ বেশি থাকায় বর্ষাকালে প্রচুর মাছ কিনতেন। কিন্তু এখন দেশি মাছ পাননা। ২-৩ জন জেলে দেশি মাছ আনলেও ৬শ-৮শ টাকার নিচে কোন দেশি ছোটমাছ এখন কিনতে পাওয়া যায়না। তাই সীমিত আয়ের কারণে বিদেশি জাতের মাছ এখন তার ভরসা।  

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত খাল-বিল, নদীনালা ও জলাশয়ে দেশি প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে। এ সময় একশ্রেণীর অসাধু জেলেরা নির্বিচারে ছোট মাছ শিকার করায় তারা বংশবিস্তার করতে পারছেনা। এছাড়াও নদী-খাল-বিল গুলো আশানূরুপ পানি না থাকাও একটি অন্যতম কারণ। ফলে দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে এই দেশি প্রজাতির মিষ্টি মাছ।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন- বাঁধ নির্মাণ না করা, ডোবাগুলোয় মাটি ভরাট না করা, কৃষিকাজে অপরিমিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না করা, ডিমওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা, জলাশয় দূষণ না করা, কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং মৎস্য-বিভাগ সরেজমিন তদারকির ব্যবস্থা করলে মাছের উৎপাদন পুরোপুরি না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক করা সম্ভব।

এই বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আমিমুল এহ্সান বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোটমাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমানে বিদেশি প্রজাতির কিছু মাছ স্বল্প সময়ে বৃদ্ধি ও লাভজনক হওয়ায় অনেক মৎস্য চাষি এদিকে ঝুঁকে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর এরজন্য নদী জলাশয়গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্তকরণ, ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও জানান, সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।