ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হারিয়ে যাচ্ছে চা বাগানের ‘প্রাকৃতিক অর্কিড’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
হারিয়ে যাচ্ছে চা বাগানের ‘প্রাকৃতিক অর্কিড’ চা বাগানের শিরিষ গাছের প্রাকৃতিক অর্কিড। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: পরিবেশের এক আশ্চর্য সুন্দর সৃষ্টি ‘প্রাকৃতিক অর্কিড’। ফুলের বৈচিত্র্যে অর্কিড ফুলপ্রেমীদের যুগ যুগ ধরে সহজেই আকৃষ্ট করে আসছে। তবে প্রাকৃতিক বা বুনো অর্কিডেরে এখন চলছে দুঃসময়। 

চা বাগানের পুরাতন ছায়াদানকারী (শেডট্রি) গাছের মধ্যে জন্ম নেওয়া ‘প্রাকৃতিক অর্কিড’ গাছগুলো আজ ধ্বংসের পথে। বাগানের শেডট্রিগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা গাছ থেকে উপড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে তাদের অর্কিড গাছের অস্তিত্ব।

ফলে তারা চা বাগানের সেকশনের (নির্দিষ্ট এলাকা) পুরাতন গাছগুলো হতে হারিয়ে যাচ্ছে ‘প্রাকৃতিক অর্কিড’।   

চা বাগানের ছায়াদানকারী বৃক্ষগুলো একসময় বুড়ো হয়ে যায়। ঘনিয়ে আসে তার পৃথিবী থেকে বিদায়ের দিনক্ষণ। এই বুড়ো হওয়ার পর্যায়ে কোনো কোনো গাছে তার শারীরিক অবয়বের মধ্যে বিভিন্ন আকৃতির গর্ত দেখা দেয়। সেখানেই জমে বৃষ্টির পানি। সেই পানিতে বীজ পতিত হয়ে অঙ্কুরিত হয় গাছ। তখন গাছের গায়েই জন্মে নতুন প্রাণ। গাযের শরীরকে ভর করে জন্ম নেওয়া এমন উদ্ভিদকে ‘পরগাছা’ বলা হয়। অর্কিড তেমনি এক প্রজাতির পরগাছা।  

সম্প্রতি জাগছড়া চা বাগানের একটি সেকশনে একটি পুরাতন শিরিষ গাছে খুঁজে পাওয়া গেছে প্রাকৃতিক অর্কিডের অস্তিত্ব। দূর থেকে দেখলে মনে হয় আস্ত একটি ছায়াদানকারী শিরিষগাছ। কিন্তু টিলার উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে কাছে গেলেই দেখা যায় শিরিষ গাছের বুকে পরগাছা প্রাকৃতিক অর্কিডের বুনো সৌন্দর্য। এখন সে রয়েছে ফুল ফুটার অপেক্ষায়। দূর থেকে প্রাকৃতিক অর্কিডযুক্ত শিরিষ গাছটি।  ছবি: বাংলানিউজ
অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার এবং বারোমাসিয়া চা বাগানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হক ইবাদুল বাংলানিউজকে বলেন, এই অর্কিডের বৈজ্ঞানিক নাম Aerides multiflora। এটা প্রাকৃতিক অর্কিড। হাইব্রিড জাতের নয়। এই ফুলটির রং হয় থাকে হালকা বেগুনি। ইংরেজিতে এ ফুলটির নাম ‘ড্যান্সিং ডল’। অর্থাৎ বঙ্গানুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘নৃত্য পুতুল’। এ ফুলটাকে ভালো করে দেখলে মনে হয় যেন একটা মেয়ে নাচছে।

তিনি অর্কিড সম্পর্কে আরও বলেন, অর্কিডরা চা বাগানের নতুন কোনো গাছে হয় না। কারণ নতুন গাছে কোনো গর্ত থাকে না। অর্কিডের এই প্রজাতিটি চা বাগানের পুরাতন গর্তযুক্ত গাছের ছায়াপূর্ণ স্থান বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় অপেক্ষাকৃত বেশি জন্মে এবং এরা খুব ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। ছবিতে দেখানো অর্কিড গাছের বয়স সাত থেকে আট বছর।  

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিকভাবে এই অর্কিডের বীজ কোনো গাছের কোটরে পতিত হলে সেখান থেকেই অনায়াসে সে অংকুরিত হয়। ধীরে ধীরে পাতা, ডালপালা ছড়িয়ে জানান দেয় তার অস্তিত্ব। ওই গাছ থেকে শিকড়ে মাধ্যমে রস শোষণ করে সে দিব্বি বেঁচে থাকে। বাজারে যেসব অর্কিড পাওয়া যায় সেগুলো টিস্যু-কালচারের এবং হাইব্রিড জাতের।  

এখন চা বাগানে প্রাকৃতিক অর্কিডওয়ালা গাছ দেখাই যায় না। আগে চা বাগানে প্রচুর অর্কিড থাকতো, এখন থাকে না। এর কারণ হলো- চা বাগানের ম্যানেজারা এই প্রাকৃতিক অর্কিডযুক্ত গাছগুলোকে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ শ্রমিকদের দিয়ে রেখেছেন বলে জানান চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক হক ইবাদুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।