ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নগরায়ণে হুমকিতে উপকারী প্রাণী বেজি

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
নগরায়ণে হুমকিতে উপকারী প্রাণী বেজি নগরায়ণে হুমকিতে উপকারী প্রাণী বেজি। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: ক্রমবর্ধমান মানুষের আবাসন এবং খাবারের চাহিদা পূরণ করতে বাড়ছে নগরায়ণ। কমছে ঝোপঝাড়, নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জমির পরিমাণ। সেইসঙ্গে এসব জায়গায় বসবাস করা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীও বিলুপ্ত হচ্ছে ক্রমে। এমনকি বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ এবং আবাসন সংকটের কারণে কমে যাচ্ছে মানুষ এবং প্রকৃতির বহুবিধ উপকারী প্রাণী বেজি।

বেজির বৈজ্ঞানিক নাম ‘Herpestes auropunctatus’। ইংরেজি নাম ‘Small Indian Mongoose’।

এরা Carnivora বর্গের Herpestidae গোত্রের ছোট, মাংসাশী স্তন্যপায়ী এবং শিকারি প্রাণী। লোমশ শরীর, দ্রুত নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে। বেজি খুব ভালো শিকারি প্রাণী। এরা দিনের বেলায় খাবার খায়। রাতে নিজেদের তৈরি করা মাটির গর্তে বসবাস করে। শহরে বা গ্রামে ঝোপঝাড়ে এদের বসবাস।

বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বেজির বসবাস। বড় বেজি, ছোট বেজি এবং কাঁকড়াভুক বেজি। কাঁকড়াভুক বেজি বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায়। বড় বেজি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। তবে দেশের মধ্যাঞ্চলেও এদের দেখা পাওয়া যায়। ছোট বেজি সারাদেশেই কমবেশি বসবাস করতে দেখা যায়।

বেজি ফসলের খেতের ছোট-বড় ইঁদুর, সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শত্রু মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের খেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না। বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে বেজি প্রসঙ্গে বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট বেজি এবং বড় বেজি এখনও মোটামুটি ভালোই আছে। কাঁকড়াভুক বেজি অনেক কম দেখা যায়। তবে সব বেজিই আগের চেয়ে কমে গেছে।

বেজির গায়ের রঙ ধূসর-বাদামি। এরা সাধারণত চার পায়ে চলাফেরা করে। গাছে চড়তেও পারদর্শী। কখনও কখনও দুই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেজি দেখতেও বেশ অদ্ভুত লাগে। এদের পা বেশ খাটো এবং কান ছোট। বিপদের আভাস পেলে নিঃশব্দে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

বেজি সম্পর্কে আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে যে, সাপের কামড়ে বেজির কোনো ক্ষতি হয় না। বেজির কাছে না-কি সাপের বিষের ওষুধ আছে, অনেকেই এমনটা ভাবে। তাই সাপ কামড় দিলে বেজির কিছুই হয় না। এটা একটা ভুল ধারণা। বেজির লোম অনেক মোটা। এরা উত্তেজিত হলে এই লোম বেশি ফোলে যায়। তাই সাপের কামড় বেজির শরীরে ভালো করে লাগতে পারে না। যে কারণে সাপের কামড়ে বেজির তেমন ক্ষতি হয় না।

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেসের (আইইউসিএনএন) বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিকভাবে বন্যপ্রাণীর যে রেড লিস্ট আছে, সে ক্যাটাগরিতে বেজির নাম নেই। তবে সারাদেশেই বেজির অবস্থা খারাপ। আগের তুলনায় শহর এবং গ্রামে বেজি কমে গেছে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নুরজাহান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বেজি মানুষ এবং প্রকৃতির পরম উপকারী একটা প্রাণী। বেজি ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে। সেইসঙ্গে বেজি সাপ খেয়ে সাপের বৃদ্ধি রোধ করতেও বিশেষ অবদান রাখে। কিন্তু নগরায়ণ, আবাস ও খাদ্য সংকটের কারণে বেজি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আমাদের প্রকৃতি থেকে। সেইসঙ্গে কিছু উপজাতিরাও বেজি ধরে খায়। বেজি সংরক্ষণে গণসচেতনতার গুরুত্ব অনেক বেশি বলে তিনি জানান।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা দরকার বলেই বিশেষজ্ঞরা মত দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
আরএকেআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।