ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পর্যটকদের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো হাতিটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
পর্যটকদের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো হাতিটি সবার সামনে ঢলে পড়ে কানাকোটা। ছবি: সংগৃহীত

মাথাও উপর গনগনে সূর্য, নিচে উত্তপ্ত পিচঢালা পথ আর পিঠে পর্যটক। এভাবেই বিরতিহীন ‘রাইড’ দিতে দিতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তরুণ হাতিটি। কিন্তু, অর্থলোভী মালিক তাতে পাত্তা দেননি। টানা চতুর্থ রাইডের জন্য পর্যটক পিঠে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এবার আর পা নড়লো না, সবার সামনেই ধপাস করে পড়ে যায় হাতিটি। আর উঠে দাঁড়ানো হয়নি, সেখানেই মারা যায় সে।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার সিগিরিয়ায় ঘটেছে এমন অমানবিক ঘটনা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ১৮ বছর বয়সী হাতিটির নাম কানাকোটা।

সারাক্ষণ ভারী শিকলে বাঁধা থাকতো তার পা। ধারালো বর্শার ভয় দেখিয়ে একের পর এক রাইড দিতে বাধ্য করা হতো তাকে। এভাবে গত চার বছর ধরে পর্যটক বহনের কাজ করছিল হাতিটি। ঘণ্টাব্যাপী একেকটি ট্রিপে পর্যটকদের পিঠে করে প্রাচীন পাথুরে দুর্গে (রক অব সিগিরিয়া) পৌঁছে দিত সে। বিনিময়ে মালিক পেতেন জনপ্রতি ৩০ ডলার (২৫০০ টাকা প্রায়) করে।

রক অব সিগিরিয়ায় পর্যটক নিয়ে যাচ্ছে একটি হাতি।  ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন কোনো ধরনের বিশ্রাম ছাড়াই টানা তিনটি রাইড দিয়েছিল হাতিটি। এর আগের রাতেই লম্বা কুচকাওয়াজেও যোগ দিয়েছিল সে। গত ১৬ অক্টোবর চতুর্থ রাইডের জন্য পিঠে পর্যটকরা উঠলেও নড়তে চাচ্ছিল না কানাকোটা। পরে, বাধ্য হয়েই পর্যটকদের নামিয়ে আনা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই দড়াম করে পড়ে যায় হাতিটি। আর সেখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।

স্বাভাবিকভাবে হাতিরা ৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। সেখানে কানাকোটা মাত্র ১৮ বছর বয়সেই মারা যাওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকায় পশুপ্রেমীদের দাবি, সে মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্তির কারণেই মারা গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।  

শ্রীলঙ্কায় হাতিদের জোরপূর্বক কাজ করানোর অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। গত আগস্টে ক্যান্ডিতে ঐতিহ্যবাহী পেরাহেরা উৎসবে জোর করে প্যারেড করানো হয়েছিল ৭০ বছরের রুগ্ন ও শীর্ণকায় হাতি তিকিরিকে। ওই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেয় বৃদ্ধ হাতিটি।

মারা গেছে রুগ্ন হাতি তিকিরি।  ছবি: সংগৃহীত

জানা যায়, শ্রীলঙ্কার প্রাণী কল্যাণ আইন সবশেষ সংশোধন করা হয়েছিল ১৯০৭ সালে, যখন তারা ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। এরপর আর ওই আইনে হাত দেওয়া হয়নি। এই আইন অনুসারে, কেউ প্রাণীদের ওপর বর্বর আচরণ করলে তার শাস্তি হয় মাত্র ১০০ রুপি জরিমানা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।