ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হরেক গুণের ফল চালতা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২০
হরেক গুণের ফল চালতা প্রকৃতিতে বিপন্ন হয়ে পড়ছে চালতা গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ‘আমি চলে যাবো বলে, চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে– নরম গন্ধের ঢেউয়ে?’ অদেখা চালতা ফুলকে ঘিরে জীবনানন্দ দাশের এমন আক্ষেপ এই বর্ণমালাকে প্রতিধ্বনিত করে রেখেছে।

বর্ষায় তার দেখা মেলে। দৃষ্টিনন্দন এই ফুলটি গাছের শাখায় ফুটে প্রকৃতির শুদ্ধতার জানান দেয়।

বিস্মিত করে সৌন্দর্যপিপাসু পথিকের এ হঠাৎ দেখা। ফুলের দিকে ভালো করে তাকালে দেখা যায় মৌমাছিসহ নানা কীট পরাগায়নের জন্য এক ফুল থেকে অপর ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চালতার ইংরেজি নাম ‘Elephant Apple’; মানে হাতির আপেল। আর বৈজ্ঞানিক নামটি হলো Dillenia indica। হাতি এটি খায় এবং তার বিষ্ঠার মাধ্যমেই এই গাছটি বিস্তার লাভ করে। হাতি এই চালতা ফল খেয়ে যখন টয়লেট করে তখনই সেই বীজ উপযুক্ত স্থানে পড়ে চারা গজায়। এটা শক্ত ধরনের ফল; তাই হাতি ছাড়া অন্য প্রাণীরা এটি খেতে পারবে না। তবে বানররাও এ ফল খেয়ে থাকে।

এর ওষুধিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কফ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে চালতার রস অনেক কার্যকরী। স্টোমাকে ডিজঅর্ডার (পাকস্থলিতে পীড়া) হলে এটি খাওয়া হয়। পরিপাকতন্ত্র যখন ঠিকমতো কাজ করছে না তখন এর রস সেবন করা হলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও চালতা দিয়ে চাটনি, জ্যাম-জেলি প্রভৃতি বানানো হয়। মানুষ রান্নায় বিভিন্ন উপকরণের এটি তৈরি করে খায়। এটি যেহেতু একটু টক জাতীয় তাই রান্নায় একটি অন্য তরকারির সঙ্গে খেতে ভালোই লাগে।

চালতা ফুল।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
 
চালতার বিস্তার সম্পর্কে এ উদ্ভিদ গবেষক বলেন, এটি হচ্ছে সাউথইস্ট এশিয়ান গাছ। ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, সাউথ চায়না, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে এর বিস্তৃতি। এগুলো উচ্চতায় প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা সরল এবং বড়। পাতার কিনারা হলো খাজকাটা। পাতার শিরাগুলো খুব স্পষ্ট। চালতা গাছের পাতা দেখলে সহজেই চেনা যায়।  

সব দিকে বিবেচনায় চালতা গাছ ফরেস্টের (বনের) গুরুত্বপূর্ণ কম্পনেন্ট (উপাদান) বলে জানান ড. জসীম উদ্দিন।

ফুল সম্পর্কে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, চালতার ফুল অনেক বড় এবং সিঙ্গেল (একক হয়ে থাকে)। এ ফুলগুলো গাছের শাখার শীর্ষে হয়। তবে এ ফুলগুলো নিম্নমুখী অর্থাৎ নিচের দিকে মুখ করে ঝুলে থাকে। এর মাঝে পাঁচটা স্থায়ী বৃতি থাকে। যেগুলো ফুলের শরীরকে চেপে ধরে রাখে। এই ফুলে পাঁচটি সাদা পাপড়ি রয়েছে। এগুলো ঝরে যায়। ফুলের চারদিকে প্রচুর পুংকেশর বা পুষ্পরেণু দুটো সারিতে বিন্যস্ত থাকে। এর গর্ভপত্র বা গর্ভকেশর রয়েছে পনেরোটি। প্রতিটা গর্ভপত্রে ৫টি করে বীজ হয়। এ বীজগুলো পাল্পের (রসালো অংশ) ভেতরে থাকে। এখন কোনো প্রাণী যখন এই ফলটি চিবিয়ে খায়, তখন বীজ আর হজম হয় না। প্রাণির বিষ্ঠার মাধ্যমে সেগুলো মাটিতে পড়ে অপেক্ষা করতে থাকে; অনুকূল পরিবেশ পেলেই সে বীজ থেকে কুঁড়ি উঁকি দেয়। ‘এই চালতা উদ্ভিদ আমাদের দেশে এখন বিপন্ন। এখন তো এ উদ্ভিদটি দেখাই যায় না। আমাদের ঢাকা শহরে দু-একটা গাছ আছে। আমার গার্ডেনে একটা গাছ রয়েছে। আসলে আমরা বনের মূল কম্পোনেন্ট যে টিম্বারের দিকে নজর দিতে গিয়ে প্রাকৃতিক বনের এসব উপকারী গাছগুলোর প্রতি অবহেলা করেছি।

ফলে ওরা বিপন্ন এবং কোনো কোনো গাছ তো দুস্প্রাপ্য কিংবা বিলুপ্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। যেহেতু এ গাছ ওষুধি গুণাগুণসম্পন্ন, এর ফুল দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, ফুলে সুগন্ধ আছে, পরিবেশবান্ধব এবং বিপন্ন তাই এই উদ্ভিদটিকে আমাদের প্রকৃতিতে রক্ষা করা করা উচিত। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
বিবিবি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।