ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ভুল নামকরণে ‘বিষহীন’ সাপের প্রতি মিথ্যাচার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২১
ভুল নামকরণে ‘বিষহীন’ সাপের প্রতি মিথ্যাচার ভাড়াউড়া চা বাগানের বাঙলোতে আগত ‘দুধরাজ’ সাপ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: নামকরণ উপযুক্ত বা যথার্থ না হলে দেখা দেয় জনমনে বিড়ম্বনা। চারিত্রিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা সাধারণ জীববৈচিত্র্যের নানান প্রজাতির নামকরণ ইংরেজি ভাষায় করে থাকেন।

যা অনেক ক্ষেত্রেই অর্থবহ।

তবে বাংলাভাষায় কিছু কিছু প্রজাতির নাম বিভ্রান্তকর এবং প্রজাতিটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে জনমনে তৈরি হয় এক প্রকার সম্মিলিত ভীতি এবং প্রজাতিটিকে দেখা মাত্রই হত্যা করার মানসিকতা। ভুল নামকরণে এভাবেই বিষহীন সাপের প্রতি তৈরি হচ্ছে বিদ্বেষ ও মিথ্যাচার।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোতে (বাসভবন) একটি ‘পাতি দুধরাজ’ সাপ প্রবেশ করে। বাংলোর প্রসারিত বারান্দার এককোণ ঘেঁসে সাপটিকে অবস্থান করতে দেখা যায়। বারান্দাটি মসৃণ থাকার কারণে সাপটি সেখানে এঁকেবেঁকে এগিয়ে যেতে কিছুটা সমস্যায় পড়ে।

পরবর্তীতে ওই চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক গৌতম দেব এই সাপটিকে পার্শ্ববর্তী টিলাময় পাহাড়ি এলাকার দিকে ছেড়ে দেন। প্রাণে বেঁচে যায় প্রকৃতির এই উপকারী প্রাণীটি।

এ প্রঙ্গঙ্গে তিনি বলেন, আমার চা বাগানের বাংলোতে বিষাক্ত বা নির্বিষ নানা জাতের সাপ মাঝে মাঝে চলে আসে। আমাদের বাসস্থানটি পাহাড়ি টিলার পার্শ্ববর্তী স্থানে হওয়ায় এদের আগমন আমাদের সহ্য করতে হয়। তবে আমরা কোনো সাপকেই আজ পর্যন্ত মারিনি। ভুল করে আমাদের বাংলোতে চলে আসা প্রতিটি সাপকেই আমি বা আমার স্ত্রী আমরা পুনরায় জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দেই। এই ‘পাতি দুধরাজ’ সাপটিকেও তাই করেছি। পাহাড়ি এলাকায় চলে যেতে তাকে সহায়তা করি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এই সাপটির ইংরেজি নাম Common Trinket Snake এবং এর বাংলা নাম ‘পাতি দুধরাজ’ (Coelognathus helenus) সাপ। এটি সম্পূর্ণ নির্বিষ বা বিষমুক্ত সাপ। এই প্রজাতির সাপগুলো আমাদের ফরেস্টের (পাহাড়ি বন) আশেপাশে পাওয়া যায়। এরা গাছে উঠতে পারে। যার ফলে ছোটপাখি, ব্যাঙ, ইঁদুর প্রভৃতি খেতে পারে।

এই সাপটির ভুল নামকরণের বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুধরাজ’ নামকরণ নিয়ে মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে এরা গাভীর দুধ খায়। পুরোটাই ভ্রান্তধারণা। কারণ কোনো সাপই গাভীর দুধ খেতে পারে না কখনো। চুষে খাওয়া মতো মুখের কাঠামো এদের নেই। তাদের জিহ্বাটা চিকন এবং ঠোঁট নাই যার ফলে সাপ চুষতে পারে না। প্রচলিত ভ্রান্তধারণা রয়েছে যে, গাভীর স্তনের বোটা সাপ দুধ খেয়ে কামড়ে চলে গেছে। আসলে তা একেবারেই নয়। এটা গাভীর স্তনের একপ্রকারের ব্যাকটেরিয়াল ডিজিস (ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ)। এই রোগ হলে স্তনের অংশগুলো ফেটে যায়। তখন গাভীর প্রচণ্ড ব্যথা হয়, ধরতে দেয় না।

সাপে দুধ খেয়ে গাভীর বোটায় দাঁত বসিয়ে এরকম করেছে বলে এমন একটি প্রচলিত কুসংস্কার রয়েছে। যা সাপটির বাংলা নামকরণ থেকে এসেছে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান।   

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২১
বিবিবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।