ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অপূর্ব সৌন্দর্যের পাখি দুর্লভ ‘লালমাথা ট্রোগন’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২১
অপূর্ব সৌন্দর্যের পাখি দুর্লভ ‘লালমাথা ট্রোগন’ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি লালমাথা ট্রোগন। ছবি: শামীম আলী চৌধুরী

মৌলভীবাজার: পাখি আমাদের চিরসুন্দর পরিবেশের প্রাকৃতিক উপহার। নানা রঙের নানা আকৃতির নানা বৈচিত্র্যের পাখি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।

বৃক্ষ সম্প্রসারণ এবং বনায়ন সৃষ্টিতে পাখিদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আর এভাবেই ওরা আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতির চিরকৃতজ্ঞ এক বন্ধু। এদের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

আর সেই পাখিটি যদি ‘অদেখা চিরসুন্দর পাখি’ হয় তাহলে তো কথাই নেই! বিস্ময়ে ভরা পুরো প্রেক্ষাপট। ‘লালমাথা ট্রোগন’ খুবই সুন্দর একটি রঙিন পাখি। যার দেহ থেকে রক্তবর্ণা রঙ চোখর দৃষ্টিকে মুগ্ধ করে তোলে।

এক দেখাতেই যে কেউ এই পাখিটির ভালোলাগায় জড়িয়ে যাবেন। এ অপূর্ব সুন্দর পাখির ছবি নিজ ক্যামেরায় ধারণের বিষয়টি ঘটনা বর্ণনা করেছেন বার্ড-ফটোগ্রাফার শামীম আলী চৌধুরী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বার্ডফটোগ্রাফির শুরু থেকেই এ পাখিটির প্রতি দুর্বল ছিলাম। তখন জানতাম না বাংলাদেশের কোথায় এই পাখিটির দেখা পাওয়া যায়। পরে যখন বান্দরবন শুনলাম তখন পাহাড় বেয়ে ১২শত ফুট উপরে উঠার জন্য আগ্রহ কমে যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেশ কয়েকজন বার্ড-ফটোগ্রাফার পাখিটির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে আবার আগ্রহ বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসে সাতছড়ি বনের একজন গাইডকে সঙ্গে নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে গেলাম। সারাদিন খোঁজাখোঁজি করেও পাখিটির দেখা পেলাম না। অবশেষে মার্চ মাসে আবারো এলাম রেমা-কালেঙ্গায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাখিটির সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। এটা কী যে খুশির ব্যাপার তা বলে শেষ করা যাবে না।

তবে এরা লাজুক পাখি। বনে মানুষের উপস্থিতি টের পেলে নিজেদের গাছের পাতায় আড়াল করে নেয়। নতুবা বনের ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে যায়। এ জন্য এদের ছবি তোলাও কষ্টসাধ্য বলে জানান তিনি।

দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি লালমাথা ট্রোগন।  ছবি: শামীম আলী চৌধুরী

পাখিটির শারীরিক রঙ বিশ্লেষণে তিনি বলেন, এরা ট্রোগনিডি পরিবারের ৩৫ সে.মি দৈর্ঘের ও ৭৫ গ্রাম ওজনের বৃক্ষবাসী নিভৃতচারী আগুন রঙ পাখি। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক সিঁদুরে লাল। পেটের অংশ উজ্জ্বল গোলাপি। বুকের লাল ও গোলাপির মাঝখানে একটি সাদা অর্ধবলয় রয়েছে। থরে থরে সাজানো লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া। পিঠ থেকে লেজ হালকা দারুচিনি বা মরচে-বাদামি রঙের। ডানার ঢাকনি-পালক খুবই মিহি সাদা ও ধূসর রেখা খচিত। ডানা মূলত কালো, তবে পালকের মাঝ বরাবর কিছুটা অংশ সাদাটে। লম্বা লেজের শেষ প্রান্ত কালো। চোখের চারপাশ নীলাভ-বেগুনি। চোখের ঠোঁটের রঙও বেগুনি-নীল। আর মেয়ে পাখির সারা শরীর দারুচিনি রঙের হয়। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশের গঠন ও রঙ একই রকম। শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুক, বগল ও তলপেট পীতাভ-সাদা হয়ে থাকে।

পাখিটির আবাসস্থল এবং খাবার সম্পর্কে তিনি জানান, এরা মিশ্র চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। কখনো একা কখনো জোড়ায় জোড়ায় থাকে। উড়ন্ত প্রজাপতি, মথ ও শুঁয়োপোকা শিকার করে খায়। আর খাবারের অভাব হলে মাটিতে নেমে বুনো রসালো ফল ও বাঁশের কচি পাতা খায়। যার জন্য এদের দ্বিপদ নাম ‘ফলচোর’। এদের প্রজননকাল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। এরা ঘন বনে গাছের কোটরে কিংবা কাঠঠোকরার শূন্য গর্তে বাসা করে। ডিম দেয় ৩ থেকে ৪টি। ডিমগুলো পীতাভ রঙের।

লালমাথা ট্রোগন আমাদের দেশে দুর্লভ আবাসিক পাখি। লালমাথা ট্রোগন ছাড়াও ‘লালশির ট্রোগন’ বা ‘লালমাথা কুচকুচি’ এ বাংলা নামগুলো রয়েছে। অঞ্চল ভেদে এদের ‘কুচকুচ’ বা ‘কুচকুচিয়া’ নামেও ডাকা হয়। পাখিটির ইংরেজী নাম Red-headed Trogon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Harpactes erythrocephalus। শুধু বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়। এর বাইরে এদের দেখা যায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ভুটান, চীনসহ হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পর্যন্ত এদের বিস্তৃত রয়েছে জানান শামীম আলী চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২১
বিবিবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।