ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাওর-বিলের চিরচেনা ‘জাত পুঁটি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২১
হাওর-বিলের চিরচেনা ‘জাত পুঁটি’ প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ের দেশিমাছ ‘জাতপুঁটি’। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: প্রাকৃতিক জলাশয়ে জাল ফেলা মাত্রই যে মাছটি অন্যান্য মাছের সঙ্গে উঠে আসতো তার নাম ‘জাতপুঁটি’। অনেকগুলো ছোট ছোট মাছ জেলের জালে লাফালাফির করার সময় চোখে পড়তো সেই পুঁটি।

কিন্তু নানাপ্রকার দূষণের ফলে দেশের প্রাকৃতিক হাওর-বিল থেকে এসব দেশি প্রজাতির মাছেরা হারিয়ে যেতে বসেছিল।
 
জেলের জালে অনেক মাছের সঙ্গে আর ঘন ঘন উঠে আসছিলো না এই প্রজাতির মাছ। সংশ্লিষ্ট মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ নেওয়ার ফলে পুনরায় হাওর-বিলগুলোতে ফিরে এসেছে জাতপুঁটিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। এমনটাই দাবি মৎস্য অধিদপ্তরের।
 
এ মাছটিকে সবাই ‘পুঁটি’ হিসেবেই চিনে থাকেন। ছোট আকারের এই ‘জাতপুঁটি’ নামটি গবেষক এবং মৎস্য সংশ্লিষ্টদের কাছে সুপরিচিত।
 
এ মাছের মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানসায় রয়েছে এক ধরণের হালকা কমলা বর্ণের রঙ। যা সহজেই দৃষ্টিকাড়ে। সেইসঙ্গে মাছটি লেজের উপরের অংশে রয়েছে হালকা কালো রঙের ছোট গোলবৃত্ত। আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ আইইউসিএন, বাংলাদেশ এই জাতপুঁটি মাছটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
 
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদের বিরাট একটি অংশজুড়ে রয়েছে ছোটমাছ। মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোটমাছ রয়েছে। এগুলো হলো- মলা, ঢেলা, পুঁটি, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি, চান্দা প্রভৃতি। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতিমাত্রায় আহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র বিনষ্ট হয়ে পড়ে। এ কারণেই এ সব প্রাকৃতিক দেশি প্রজাতির ছোট মাছের সহজপ্রাপ্ততা হ্রাস পেতে শুরু করে।
 
তবে দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর গবেষণা কার্যক্রমসহ মৎস্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায়।
 
স্থানীয় সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, দেশের মুক্ত জলাশয়ে বিচরণকারী কয়েক জাতের পুঁটির মাঝে একটি প্রজাতি হলো ‘জাতপুঁটি’। এরা স্বাদুপানির ছোট আকৃতির মাছ এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Puntius sophore. প্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে ১৩ সেন্টিমিটারের মতো। জাতপুঁটি ছাড়াও এ মাছটিকে ‘পুঁটি’, ‘সফরিপুঁটি’, ‘ভাদিপুঁটি’ বলা হয়ে থাকে। মাছটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
 
দেশি প্রজাতির মাছে এক সময় ভরা ছিল আমাদের হাওর-বিলগুলো। নানা কারণে সেই দেশি প্রজাতির মাছ কম যেতে শুরু করে। তারপর মৎস্যবিভাগের নানান ধরনের উদ্যোগের ফলে এই কয়েক বছরে পুঁটিসহ নানা জাতের মাছ ফিরে এসেছে। যা আমাদের প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহসহ মানবদেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, প্রোটিনের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানান ফারাজুল কবির।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২১
বিবিবি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।