ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী ফারজানা

রাজীন চৌধুরী, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী ফারজানা

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরে স্ব-পরিবারে বসবাস করেন ফারজানা আক্তার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মেজো ফারজানা পড়াশুনা করছেন তিতুমীর কলেজে স্নাতক ৩য় বর্ষে।

তিনি চাকরি করতেন গ্রামীণফোনে। ২০২০ সালে করোনার প্রথম ধাপে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তারপর নিজ উদ্যোগে চালু করেছেন একটি ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার। এ  সেন্টারে ৩’শ বেশি নারীকে মোটরসাইকেল ও স্কুটি চালানো শিখিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।  

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এই পেশায় জড়িত হওয়ার পেছনের গল্প নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয়  ফারজানা।  

ফারজানা বলেন, ২০১৯ সালের দিকে আমি নিজে স্কুটি কিনি। অফিসে যাওয়ার জন্য। মিরপুর থেকে কুড়িল এলাকায় আসা-যাওয়া করতে হতো আমাকে। সে থেকে স্কুটি কেনার প্ল্যান। স্যোশাল সাইটে আমার একটা প্ল্যাটফর্ম আছে। প্রথমে আমি স্যোশাল মিডিয়ায় নিজের ছবিতে লিখে পোস্ট করতাম, ড্রাইভিং শেখাতে চাই জানিয়ে। এরপর এটা যখন আস্তে-আস্তে আমার পেশা হয়ে গেলো, তখন আমি চিন্তা করলাম এটার জন্য আলাদা ফেসবুক পেজ খোলা দরকার, বা অন্য কোনো ফ্ল্যাটফর্মে আলাদা পরিচয় দরকার। এরপর আমি আলাদা পেজ খুলি, সেটাকে প্রমোট করার চেষ্টা করি বিভিন্নভাবে। তারপর এক সময় সবার সহযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ পেইজটা ভাল রিচ হয়। এরপর ইন্সটাগ্রামেও আমি একাউন্ট ওপেন করি। সেখানেই প্রচার-প্রচারণা চালাই।

ফারজানা আরও বলেন, এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৩০০ জনকে ড্রাইভিং শিখিয়েছি। নারীদের ড্রাইভিং শেখার আগ্রহের মূল কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এছাড়া অন্যান্য গণপরিবহণে ভাড়া অনেক বেশি। যে কারণে, অনেকে মনে করেন স্কুটি চালানো শিখলে তাদের যাতায়াতের ব্যয় কমে যাবে। নিজের একটা ট্রান্সপোর্ট থাকলে যাতায়তও সহজ হবে। আমি মনে করি এজন্যই তারা মূলত আগ্রহী হচ্ছেন।  

তিনি জানান, মূলত ২০-৩২ বছর বয়সেরই অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থী। যাদের মধ্যে সংখ্যায় বেশি চাকরিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  

কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঢাকার কথা যদি বলি, এখানে ড্রাইভিং শেখানোর জন্য ভাল জায়গা পাওয়াটা সমস্যা। এটা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

 ক্লাস শিডিউল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোট ৭ দিনের একটা কোর্স। প্রতিদিন একঘণ্টা করে। তবে, বিষয়টি এরকম না যে কেউ ৭ দিনে পারল না, আমি তাকে চিনলাম না। সবার একইরকম স্বক্ষমতা থাকে না। কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ে শিখতে না পারে, তার জন্য আমি অতিরিক্ত ক্লাস নেই। মূলত, অনেকের মধ্যে একটু ভয় কাজ করে। সেক্ষেত্রে একটু দেরি হয়।  

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একই প্রফেশনের কয়েকজন মিলে একটি প্রতিষ্ঠান করার চেষ্টা করছি। নাম হবে এমএসএসএস। কাল এ উপলক্ষে একটি ছোট ইভেন্টও আছে। আমরা ইভেন্টের মাধ্যমে মানুষের স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা করব, প্রফেশনাল সেক্টরে যারা কাজ করছেন, তাদের ট্রেনিং করাবো। মানে, একটা বড় প্রজেক্ট নেওয়ার চেষ্টা করছি।  

ফারজানা বলেন, আমি আসলে চাকরি করতে চাই না, আমার কাজটাকে সত্যি বলতে আমি গুছিয়ে এনেছি। অনেকেই শিখতে চায়, আমার একার পক্ষে তো শেখানো সম্ভব না। কাজেই আমি চাই আরও কিছু মেয়েকে শেখাতে যারা আমার মতোই মানুষকে শেখাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
আরসি/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।