ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

৬৮ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চকবাজারের মুখরোচক ইফতার

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
৬৮ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চকবাজারের মুখরোচক ইফতার রমজানে পুরান ঢাকার চকবাজারে হরেক রকমের ইফতারসামগ্রী। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: রমজান মাসে সারা দিন সিয়াম সাধনার পর মুখরোচক ও নানান ধরনের ইফতারের স্বাদ নিতে মুখিয়ে থাকেন ভোজনরসিকরা।  আর সেই ভোজনরসিকদের চাহিদা মেটায় রাজধানীর চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বাজার।

প্রায় ৬৮ বছর ধরেই এই ধারা বজায় রেখে চলেছে চকবাজারের ইফতার বাজার।

সেখানকার শাহী মসজিদের সামনে সার্কুলার রোডের দুই পাশে মুখরোচক নানা পদের ইফতার সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এ রমজানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

পবিত্র রমজান উপলক্ষে জমে ওঠে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারের বাজার। চকবাজারের এ ইফতারের কদর শুধু ঐতিহ্যগত কারণেই নয়, গুণগতমান ও স্বাদও একটি বড় কারণ।  

ঐতিহ্যবাহী খানদানি ইফতারি শুধু রাজধানীতেই নয়, সারা দেশে এর সুনাম রয়েছে। রমজান মাসের প্রথম রোজা থেকেই ক্রেতাদের ভিড় থাকে একেবারে শেষ রোজা পর্যন্ত। হাঁকডাকে মুখরিত থাকে ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।

ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ খাবারের দোকানে।  

স্থানীয় একজন প্রবীণ জানান, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ এটি একটি বিশেষ ইফতারের নাম।

৬৮ বছর আগে ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বাণিজ্যিকভাবে এ খাবার বিক্রি শুরু করেন একজন বিক্রেতা।  

এখন বংশ পরম্পরায় তার ছেলেসহ অনেকে বিক্রি করছেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’।

ইফতারের এই আইটেমটি বানাতে কী কী উপকরণ লাগে জানালেন বিক্রেতারা।  

তারা জানান, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডালসহ নানা পদের খাবার আইটেম ও হরেক ধরনের মসলা দিয়ে ইফতার আইটেমটা বানানো হয়।  

ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

তারা বলেন, একটি বড় গামলায় এসব আইটেম নিয়ে দুই হাতে ভালোভাবে মাখিয়ে তারপর ঠোঙায় করে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে মূল্য প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। আর এটা আমাদের চকবাজার ইফতার বাজারের বড় আকর্ষণ।

ঐতিহ্যবাহী আইটেমটি ছাড়াও চকবাজারে রয়েছে, খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত চীনা হাঁস রোস্ট, আস্ত চিকেন গ্রিল, আস্ত পাতি হাঁস ও গরুর সুতি কাবাব, চিকেন পরোটা, বিফ পরোটা, চিকেন রোল, গরুর কাবাব, খাসির জালি কাবাব, ডিম চপ,  চিকেন মোমো, বাকনাবা, কিমা পরোটা, টান পরোটা, চিকেন সাসলিক, অ্যারাবিয়ান কাবাব, মুঠি কাবাব, হালিম, বটি কাবাব, দই বড়া, শাহী জিলাপি, সাধারণ জিলাপি, চিকেন চাপ, কোয়েল পাখির রোস্ট, টিক্কা, জালি টিক্কা, চিকেন কারি, বিফ কারি, শাহী পরটা, সাদা পরোটা, সুতি কাবাব, কবুতর রোস্ট, চিকেন বটি কাবাব, চিকেন তন্দুরি, চিকেন লেগ, আলু পরোটা, ঘুগনি, ঘিয়ে ভাজা লুচি, কাশ্মীরি বটি কাবাব, চিকেন আচারী, শাহী তন্দুরি, কেশোয়ারিসহ অন্যান্য খাবার।

এছাড়া পানীয়ের দিক দিয়ে রয়েছে, শরবত-ই মোহাব্বত, মাঠা, ঘোল, লাবাং, বোরহানি, পেস্তা বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে মালপোয়া, পাটিসাপটা, ফালুদা, ফিরনি জর্দা (বক্স) ইত্যাদি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে  আলামিনসহ কয়েকজন বন্ধু চকবাজারে ছুটে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী ও খানদানি ইফতার কিনতে। তারা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র।  

ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

তারা বলেন, প্রতি বছরই চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা হয়। রোজার আগে থেকেই আমাদের প্ল্যান থাকে যে বন্ধু মহলের ইফতার পার্টির ইফতার আমরা চকবাজার থেকেই কিনব। আমরা বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়, চিকেন ঝাল ফ্রাই, চিকেন গ্রিল, ডিম চপ, কবুতর রোস্টসহ বিভিন্ন আইটেম খাবার কিনেছি। এছাড়া আমরা এখানকার মাঠা অনেক মজা করে খাই। রাজধানীর কোথাও একসঙ্গে এত ইফতার পাওয়া যায় না। কোনটা রেখে কোনটা কিনবো মাথা গুলিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এসজেএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।