অবস্থাটা এমন ছিল, কেউ যাত্রা শুরুর কথাটা নিশ্চিত করে বলতে পারেন। কিন্তু কখন পৌঁছাবে তা বলতে পারেন না।
কিন্তু হঠাৎ যেনো এক তুড়ি মেরে সব দূর করে দিলেন একজন। সব মনোযোগ টেনে নিলেন নিজের কাছে। ঠিক হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো। আন্তরিকতা থাকলে যে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন।
হাতে অস্ত্র ছাড়াও মানুষকে শৃঙ্খলায় আনা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। পুলিশ যে কাজটি অস্ত্রহাতে করতে অনেকখানি ব্যর্থ, ৩শ পোশাকধারী কর্মী বাঁশিতে ফুঁ দিয়েই সেই কাজটি করে দেখাচ্ছে।

যে কাজটির জন্য ব্যাকুল ছিল জনগণ, সেই কাজটি খুব সহজে সমাধা করেছে জাহাঙ্গীর আলম ফাউন্ডেশন। যে পয়েন্টগুলোতে যানজট তৈরি হতো সেখানেই নামানো হলো ৩শ কর্মী। বিজয়ের মাসে মাঠে নামতেই বদলে যেতে থাকলো দৃশ্যপট। হকারের উৎপাত বিদায় হয়েছে অনেক আগেই। এখন চলছে যানবাহনে শৃঙ্খলা আনার কাজ।
রাস্তার উপর দাঁড়াতে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে দিচ্ছে বাঁশিতে ফুঁ। আর তাদের এই তৎপরতায় বাসচালকরাও টাইট হতে বাধ্য হয়েছেন। এতেই দৃশ্যপট বদলে গেছে গাজীপুর এলাকার। যানবাহনে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সিগন্যাল দিয়ে মানুষ পারাপার করে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়।

এ উদ্যোগ যিনি নিয়েছে নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো মনের মানুষ। তার জন্যই আজ লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘোব হয়েছে।
বাস চালক মোজাহিদ রহমান বাংলানিউজকে জানান, কিছু দিন আগে কোনো কারণ ছাড়াই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকতো। এতে ঘণ্টা পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হতো। ফলে গাড়ির অতিরিক্ত তেল-গ্যাস পুড়তো।
এই বাসচালক সরল স্বীকরোক্তিতে বলেন, মহাসড়কের মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এতে পেছনের গাড়ি আটকা পড়ে যানজট সৃষ্টি হতো। একজনের দেখে অন্যজন নষ্ট হতো। ট্রাফিক সহকারীরা মহাসড়কের মাঝে কোনো গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করতে দেয় না। এতে যানজট অনেকাংশে কমে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন জানান, কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ের যানজট অনেক কমে গেছে। নেই আর গাড়ির দীর্ঘ লাইন।
রাজধানীর যানজট নিরসনে এমন উদ্যোগ ভালো ফলদায়ক হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০১৭ সালে ১০ মার্চ জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। ৪শ ৬জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তির মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ফাউন্ডেশন। এরমধ্যে ২শ জনকে এক লাখ টাকা করে, অন্যদের ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ, ৫০ জনকে ল্যাপটপ ও পাঁচজনকে মোটরসাইকেল দিয়ে অবাক করে দেয় স্থানীয়দের।

ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে উঠে আসা এই তরুণ নেতা গাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে প্রার্থী হননি তাতে কি হয়েছে। গাজীপুরের দুর্ভোগ দেখে বসে থাকতে পারেননি। তাই নিজ খরচে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন ৩শ কর্মী। কর্মই তাকে মেয়র পদে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। স্বপ্ন দেখেন আধুনিক গাজীপুরের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
আরএস/এসআই/এএ