ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

গোল্ডেন বল

মেসি-ইনিয়েস্তা-ওজিল নাকি ডি মারিয়া

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪
মেসি-ইনিয়েস্তা-ওজিল নাকি ডি মারিয়া ছবি : লিওনেল মেসি / ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো / নেইমার

আর কয়েকঘণ্টা পর সাম্বার তালে তালে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পর্দা উন্মোচন হবে ‘গ্রেটেস্ট শো অব দি আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের।

বিশ্বের বর্তমান সময়ের সব ফুটবল নক্ষত্ররা প্রতিযোগিতায় নামবে নিজ নিজ দলকে শিরোপা পাইয়ে দিতে।

সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত লড়াইও চলবে। ফুটবলের এ মহা আসরের সেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াই। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি গোল্ডেন বল।

একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগটি ভালভাবেই কাজে লাগাতে চাইবেন মেসি, নেইমার, পিরলো, ইনিয়েস্তা, জাভি, ডি-মারিয়ার মত নক্ষত্র ফুটবলাররা। আর কেনই বা তাদের গোল্ডেন বল পাওয়ার দাবিদার ভাবা হচ্ছে তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা
বার্সেলোনার হৃদপিণ্ড হিসেবে বিবেচিত স্পেনের মধ্যমাঠের কারিগর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ইনিয়েস্তার একমাত্র গোলেই স্পেন প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া টানা দু’বার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে তার অবদান অতুলনীয়। এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার রাখতে ইনিয়েস্তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর স্পেন। মিডফিল্ড থেকে বল বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও গোল করেন। অসাধারণ ড্রিবলিং, নিখুত পাস এবং গোল করার সামর্থ্য সব মিলিয়ে গোল্ডেন বল পাওয়ার অন্যতম দাবিদার ইনিয়েস্তা ।

লিওনেল মেসি
২৬ বছর বয়সী ক্ষুদে জাদুকর মেসি গোল্ডেন বুটের পাশাপাশি গোল্ডেন বলেরও অন্যতম দাবিদার। এ ফরোয়ার্ড নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও নিয়মিত গোল করান। যা স্প্যানিশ লীগ ও জাতীয় দলের হয়ে অনেকবার দেখিয়েছেন। নিজ পজিশন থেকে নেমে মাঝ মাঠ থেকে আক্রমন ও নিখুঁত পাসের  অবিশ্বাস্য জাদুতে সারা বিশ্বকে মোহনীয় করে রেখেছেন এ গ্রহের সেরা খেলোয়াড় মেসি। আর্জেন্টিনার তৃতীয় শিরোপা পাওয়ার রূপরেখা এ মেসিকেই ঘিরে। নিজে গোল করা এবং সর্তীথদের দিয়ে গোল করানোর সামর্থ্যই মেসিকে গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবিদার ভাবা হচ্ছে।
 
আন্দ্রেয়া পিরলো
ইতালির মধ্যমাঠের মূল সেনাপতি আন্দ্রেয়া পিরলো। বয়স ৩৫ এ প্রবেশ করলেও খেলার ধার এখনো কমেনি। ফ্রি-কিক মাস্টার খ্যাত পিরলো মধ্যমাঠ থেকে বল বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও গোল করতে ওস্তাদ। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে সারা বিশ্বকে চমক দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছেন এই প্লে-মেকার। আর এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে গোল্ডেন বল হয়তো পিরলোর হাতেই ধরা দেবে।


ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
রোনালদো খেলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। তাই গোল করাটা তিনি ভালোই জানেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না তিনি একজন প্লে-মেকারও। নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও গোল করাতে সমান পারদর্শী এই ফরোয়ার্ড। যে গুণাবলী তাকে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের আসনে বসিয়ে দিতে পারে। দুর্দান্ত গতি, অসাধারণ ড্রিবলিং আর চোখ ধাধানো ফ্রি-কিক নৈপুণ্য দিয়ে পর্তুগালকে অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিতে পারলে গোল্ডেন বল তার হাতে শোভা পেতেই পারে।
 
মেসুট ওজিল
লৌহমানব হিসেবে খ্যাত জার্মানির মধ্যমাঠের মূল ভরসা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মেসুট ওজিল। গোলের উৎস তৈরির পাশাপাশি নিজেও নিয়মিত গোল করে যাচ্ছেন। মিডফিল্ডের এই পরিশ্রমী প্লে-মেকার তার কারিশমা দেখিয়ে গোল্ডেন বল নিজের করে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
 

ডি-মারিয়া

রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের প্রাণ ভোমরা অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া আর্জেন্টিনার মাঝমাঠেরও ভরসার মূর্ত প্রতীক। মাঝমাঠ থেকে চিতার মত ক্ষীপ্র গতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে এক মুহূর্তেই চুরমার করে দিতে অভ্যস্ত ডি মারিয়া গোল্ডেন বলের মূল দাবিদার। আর্জেন্টিনা যদি ফাইনাল

পর্যন্ত পৌঁছতে পারে তাহলে মারিয়ার জন্য সুযোগটি সহজ হবে বলেই মনে হচ্ছে।

থমাস মুলার
২৫ বছর বয়সী থমাস মুলার খেলেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। জার্মানির বিশ্বকাপ স্বপ্নের পরিকল্পনায় কোচ জোয়াকিম লোর অন্যতম হাতিয়ার থমাস মুলার। ২০১০ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের পাশাপাশি বেস্ট ইয়াং প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ডটি পেয়েছেন থমাস মুলার। শারিরীক সামর্থ্য আর গোল করার পারদর্শীতা আবার সময়ে সময়ে মূল প্লে-মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মুলার গোল্ডেন বলের রেসে থাকবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।  

নেইমার
২২ বছর বয়সী তরুণ নেইমার, যাকে অনেকে বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটাও দিয়ে দিয়েছেন। হালকা পাতলা গড়নের নেইমার মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে যার অবাধ বিচরণ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মাথা-ব্যথার কারণ। ব্রাজিলের হেক্সা মিশনের সব রণকৌশল তাকে ঘিরেই। ড্রিবলিং, গতি আর শুটিং সব ধরনের ক্ষমতাই রয়েছে এ তরুণের। ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চুরমার করতে পারদর্শী নেইমার গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবিদার।
 
অস্কার
২৩ বছর বয়সী চেলসির অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অস্কার ব্রাজিলের কোচ সোলারির তুরুপের তাস। ব্রাজিলের হয়ে ২৯ ম্যাচে ৯ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের গোলে সহায়তা করেছেন নিয়মিত। ঠাণ্ডা মাথার বুদ্ধিদীপ্ত এ প্লে-মেকার গোল্ডেন বলের রেসে অনাসায়ে থাকবেন এটা নিশ্চিত।
 
ওয়েসলি স্লেইডার
গোল্ডেন বলের রেসে রয়েছেন নেদারল্যান্ডের মিডফিল্ডার ওয়েসলি স্লেইডার। বাছাইপর্বে ৬ ম্যাচে করেছেন ১ গোল। গোল দিয়ে স্লেইডারকে বিচার করা যাবে না। তিনি নেদারল্যান্ডের মাঝমাঠের মূল ভরসা। গত বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছিলেন রৌপ্য বল।

কিভাবে নির্বাচিত হয় সেরা খেলোয়াড়
গোল্ডেন বল অ্যাওয়ার্ডটি দেওয়া হয় প্রত্যেক বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়কে। ফিফা টেকনিক্যাল কমিটি এবং মিডিয়া প্রতিনিধিদের ভোটে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়। সেরা খেলোয়াড় হতে হলে তার দলটিকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত কমপক্ষে যেতে হবে। গোল্ডেন বলের পাশাপাশি ২য় স্থান অর্জনকারীকে রৌপ্য বল এবং তৃতীয় সেরা খেলোয়াড়কে ব্রোঞ্জ বল দেওয়া হয়।
 
বিগত বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল প্রাপ্তরা
১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে উরুগুয়ের জোসে নাসাজ্জি গোল্ডেন বল, আজেন্টিনার গুইলারমো স্টাবিল রৌপ্য বল ও উরুগুয়ের জোসে লিয়ানড্রো আনড্রেইড ব্রোঞ্জ বল পেয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ইতালির জিউসিপ্পে মিয়েজ্জা, ১৯৩৮ সালে ব্রাজিলের লিওনেডাস, ১৯৫০ সালে ব্রাজিলের জিজিনহো, ১৯৫৪ সালে ফ্রেনক পুসকাস, ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের ডিডা, ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের গারিঞ্চা, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের ববি চার্লটন, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের পেলে, ১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডের জোয়ান ক্রুইফ, ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার মারিও ক্যাম্পেস, ১৯৮২ সালে ইতালির পাওলো রসি, ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার ডিয়েগো ম্যারাডোনা, ১৯৯০ সালে ইতালির সালভাদর শিলাচী, ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের রোমারিও, ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের রোনালদো, ২০০২ সালে পশ্চিম জার্মানির গোলরক্ষক অলিভার কান, ২০০৬ সালে ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান এবং ২০১০ সালে উরুগুয়ের ডিয়েগো ফোরলান গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।