ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

দেশে ফিরতে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে আরও ৪শ’ আবেদন

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
দেশে ফিরতে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে আরও ৪শ’ আবেদন

কলকাতা: পুরো ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ প্রাণঘাতী ভাইরাসটির করাল গ্রাস থেকে বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও।

রাজ্যে প্রতিদিন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা ১৬ হাজার পেরিয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭০ জনের বেশি।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত ভারত সীমান্তে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। আর তাতেই শোচনীয় দশায় পড়েছেন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।

এই মুহূর্তে শুধু পশ্চিমবঙ্গে কমবেশি ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী। বাকিরা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে যারা দেশে ফিরবেন তাদের হাইকমিশন থেকে এনওসি সংগ্রহ করতে হবে এবং দেশে ঢুকতে তারা ব্যবহার করবেন পশ্চিমবঙ্গের বেনাপোল-পেট্রাপোল, বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা এবং আগরতলা-আখাউড়া সীমান্ত।

এ কারণে এনওসি নেওয়ার চাপ বেড়েছে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনগুলোতে। বিশেষত চাপ পড়েছে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে আবেদন জমা পড়েছে চারশোর মতো। সোমবার জমা পড়েছে ২৫০ আবেদন।

কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে অর্ধেক লোকবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের। এনওসি দিতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

ডেপুটি হাইকমিশনের যখন এই অবস্থা তখন রোজার মধ্যে ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা মাথায় নিয়ে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা এনওসির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। অপরদিকে আর্থিক অবস্থাও দিন দিন খারাপ হওয়ায় আধপেটা খেয়ে অসুস্থ রোগী নিয়ে পথেই রাত কাটাতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। এরই মধ্যে মাছির মতো একদল দালাল চক্রও কাজ করছে। ফলে লাইনে দাঁড়ানো বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে দুর্ভোগ।

খুলনাবাসী আলমগীর হোসেন বলেন, আমার তিন বছরের বাচ্চার হার্টে দুটো ছিদ্র আছে। ভেলোরে গিয়েছিলাম। তারা জানায় এখানে চিকিৎসা হবে না। যত তাড়াতাড়ি পারো দেশে ফিরে যাও। যখন তখন বিপদ ঘটতে পারে। এ অবস্থায় সোমবার রাত ১১টায় হাওড়া নেমে বর্ডারে চলে যাই। গিয়ে দেখি বর্ডার বন্ধ। কেন বন্ধ আগে থেকে জানতাম না। সেখানে থেকে জানালো হলো হাইকমিশনের পাস ছাড়া যাওয়া যাবে না। এখানে লাইনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। তবে কাগজ জমা দিয়েছি। দুই রাত বাচ্চাটাকে ভালোভাবে খাওয়াতেও পারিনি।

সাত বছরের মেয়ে রিয়া মন্ডলকে নিয়ে বর্ডারে গিয়ে একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে এনওসির জন্য ফিরে কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে ফিরে এসেছেন নড়াইলের এক বাবা।

তিনি বলেন, এখানে এসে বিপদে পড়েছি। হাতে টাকা নেই, থাকার জায়গা নেই, ফুটপাতেই দিন কাটাচ্ছি। ব্যাঙ্গালোরে অপারেশন করে গতকাল বর্ডারে যাই। সেখানকার অথরিটি বলে, বাংলাদেশের সঙ্গ কথা চলছে আমরাও চেষ্টা করছি। সেই আশায় সন্ধ্যা সাতটা অবধি বসেছিলাম বর্ডারে। পরে তারা নিরুপায় হতে চলে আসি এখানে। খুব কষ্টে আছি।

কলকাতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোডে এখন কান পাতলে এরকমই হাহাকার শোনা যাচ্ছে। সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া। কিন্তু উপায় কী? কে বলতে পারে? ডেপুটি হাইকমিশনের ভিসা প্রদানকারী বসিরউদ্দিন বলেন, স্বীকার করছি সমস্যার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশিরা। আমরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সে কারণে রোজার মধ্যেই কম লোকবল নিয়ে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত কাজ করছি। খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে সমস্যা।

আরও পড়ুন: সীমান্ত বন্ধ, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দুর্ভোগ

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।