ঢাকা: বাংলাদেশের আবহাওয়া, রাস্তার অবস্থানসহ নানা দিক গবেষণা ও পর্যালোচনা করার পরই এ দেশের গ্রাহকদের জন্য জাপানে সুজুকি মোটরসাইকেল তৈরি শুরু হয়। ফলে সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী এ মোটরবাইকের স্থায়িত্ব ও গুণগত মান অটুট থাকে।
কেনো গ্রাহকরা সুজুকি মোটরসাইকেল ব্যবহার করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে র্যাংগস গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও সুজুকি মোটরসাইকেলের একমাত্র বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান র্যানকন মোটরবাইকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওন হাকিম বাংলানিউজকে এসব কথা জানান।
তরুণ এ উদ্যোক্তা জানান, শুধু মোটরসাইকেল বিক্রি নয়, প্রশিক্ষণ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে চালকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগও নিয়েছেন তারা।
এ লক্ষ্যে এ বছরের শেষের দিকে গড়ে তোলা হবে রোড সেফটি ইনস্টিটিউশন। দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে শিক্ষার্থীসহ মোটরবাইকপ্রেমিদের দেওয়া হবে রোড সেফটির ওপর প্রশিক্ষণ। যেন নিরাপদে মোটরবাইক চালকরা ঘরে ফিরতে পারেন।

দেশের বাজারে সুজুকি মোটরসাইকেল নিয়ে আসার প্রসঙ্গে শওন হাকিম বলেন, ‘একদিন কথা হচ্ছিল রোমো রউফ চৌধুরীর (র্যাংগস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সঙ্গে। তিনি বলছিলেন যে, আমরা এমন একটি পণ্য নিয়ে আসি যে পণ্য সব শ্রেণীর গ্রাহকরা ব্যবহার করতে পারবেন। তখন মোটরবাইক নির্বাচন করি’।
‘শুরুতে চীনে গিয়ে কিছু পণ্য নিয়ে আসি। কিন্তু চীনের পণ্যের সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠান একেবারেই যায় না। কেননা, র্যাংগস গ্রুপের তো গাড়ির ব্যবসায় প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা ও সুনাম রয়েছে। আস্থার জায়গায় দেশের গ্রাহকদের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি’।
‘ঠিক সেই সময়ে জাপানে সুজুকি ডিলারশিপ খুঁজছিল। খবর পেয়ে সেখানে যাই। তাদের সঙ্গে সভা হয়। আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাই। আমাদের প্যাশন বোঝাতে পেরেছি এবং তারা বুঝতে পেরেছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্য আমরা একটা টিম তৈরি করে বাজারে নামি। এভাবেই ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু’।
সুজুকি কেনো পছন্দ হলো- এমন প্রশ্নে শওন হাকিম চলে যান ছেলেবেলায়। বলেন, ‘১৮তম জন্মদিনে উপহার হিসেবে বাবা আমার ও তার নিজের জন্য দু’টি সুজুকি মোটরবাইক নিয়ে আসেন। আমি আর বাবা ১২০০ মাইল চালিয়েছিলাম। তখন বুঝেছিলাম, সুজুকির বাইকগুলো কতো আরামদায়ক ও ফাস্ট’।

উদাহরণ দিয়ে শওন বলেন, ‘ঢাকা শহরে তিন কিলোমিটার যেতে সময় লাগছে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। অথচ মোটরসাইকেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময়ে যেতে পারছেন। সুতারাং, মোটরবাইককে অবশ্যই সমর্থন করা উচিত’।
মোটরবাইকে দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে শওন হাকিম তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা। বলেন, ‘আমরা মোটরবাইকের চালকদের নিরাপত্তার জন্য রোড সেফটি ইনস্টিটিউশন করতে যাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন করবো। নিরাপদে মোটরবাইক চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ দেবো’।
হেলমেটের প্রয়োজন কেন, নিরাপদে মোটরবাইক চালানোর কলাকৌশল, বৃষ্টির মধ্যে কোন কৌশলে চালাতে হবে, মোটরসাইকেলের মেইনটেন্স, টাইমভ্যালু চেকআপ- এগুলোর কেন প্রয়োজন আছে এরকম নানা বিষয় থাকবে প্রশিক্ষণে। পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা ও মোটরবাইকের জ্ঞান অর্জন করে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

দেশের রাস্তার পরিস্থিতি অনুযায়ী সুজুকি মোটরবাইকের স্থায়িত্ব কেমন- এ প্রশ্নের উত্তরে শওন হাকিম বলেন, ‘খুবই ভালো। কারণ, জাপানিরা প্রথমে কিন্তু পরীক্ষা করেছেন যে, এ রাস্তার জন্য কোন মানের মোটরসাইকেল উপযোগী। তারা তো কোয়ালিটিতে কম্প্রোমাইজ করেন না’।
‘সত্যি কথা বলতে আমরা কনভেন্স করতে চাই না। আপনি একবার চালালে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এখনো কিন্তু রাস্তায় ৩০ থেকে ৩৫ বছরের জাপানি মোটরবাইক দেখা যায়। কারণ, এগুলো সত্যিই নষ্ট হয় না বললেই চলে। এক বছর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেশের রাস্তার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি’।
কেমন চলছে দেশের বাজারে সুজুকি মোটরসাইকেল?- প্রশ্ন ছুড়তেই স্মিত হাসি দিয়ে শওন হাকিম বলেন, ‘শুরু করেছি বেশ ভালো। বর্তমানে আমরা একটা স্ট্যাবল জায়গায় আছি। এই অল্প সময়ে চার নম্বর অবস্থানে পৌঁছেছি’।

‘মানুষকে সেবা দেওয়ার স্বপ্ন ভেতর থেকে কাজ করে। আমাদের জন্য মানুষের কর্মসংস্থান সুযোগ হচ্ছে, অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। তাছাড়া কাজ করতে আমার কোনো বিরক্তি বা আলস্য লাগে না’।
দেশের বাজারে টপ থ্রি’র মধ্য নিজেদের নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন ছোটবেলা থেকে বাইকের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠা বিনয়ী এ কর্মকর্তার। তবে অল্পতে সন্তুষ্ট হতে রাজি নন তিনি। বললেন, ‘আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করার আছে। এখনও তো কিছুই করতে পারিনি। বলা যায়, এখনও শুরুই করিনি’।
ছোটবেলা থেকেই দেশের বাইরে বেড়ে ওঠা এ উদ্যোক্তা দেশে এসে কাজ করতে পেরেও অনেক খুশি। বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জানটা অনেক শক্ত, কাজ করার ক্ষমতা আছে। অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমরা বাঙালিরা কাজ করি’।

ব্যবসার মাধ্যমে সমাজসেবার সুযোগ থাকে বলে এ পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন উল্লেখ করে শওন হাকিম বলেন, ‘আমাদের কিন্তু একটা দায়িত্ব আছে। প্রোফিট করলে মানুষকে তো ফেরতও দিতে হবে। আমি সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছি, নিজের ভেতর থেকে কাজ করেছি। এটাই ভালো লাগার বিষয়’।
তরুণ উদ্যেক্তাদের কাজ করার সুযোগের বিষয়ে এ তরুণ বলেন, ‘আমাদের দেশে কাজ করার অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। সরকার, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ সবাই কিন্তু উৎসাহ দিচ্ছে। অনেক দেশ ঘুরেছি, বিদেশে কাজ করার সুযোগও ছিল। কিন্তু আমি মনে করি, দেশেই অনেক কিছু করার আছে’।
কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে কি-না- প্রশ্নের উত্তরে বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন শওন হাকিম। বললেন, ‘নতুন জায়গায় কাজ শুরু করতে গেলে চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শ ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় কোনো সমস্যাও হয়নি। আমার নেটওয়ার্ক আছে বেশ ভালো। আমরা সব সময়ই মানুষের জন্য চিন্তা করি। ভালো কিছু করার চিন্তা মাথায় কাজ করে’।

সরকারি প্রতিষ্ঠানেও সুজুকির বেশকিছু বাইক ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর গার্ড সুজুকি’র আড়াইশ’ সিসি মোটরবাইক ব্যবহার করেন। পুলিশ ফোর্সে ছয় গেয়ারের মোটরবাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা খুবই খুশি। কারণ, এ বাইকগুলো খুবই ভালো। স্পেয়ার পার্টস লাগে না বললেই চলে।
সুজুকি’র গ্রাহকদের উন্নত সেবার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি অ্যাপসও চালু করেছেন তারা। যার মাধ্যমে সুজুকি মোটরবাইকের সেবার যাবতীয় তথ্য মিলবে।
আট বছর বয়স থেকেই মোটরসাইকেলের সঙ্গে গড়ে ওঠা এ তরুণ কর্মকর্তার বাসায় ১৭টি মোটরসাইকেল রয়েছে। নিজেও সব সময়ই মোটরসাইকেল চালান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
একে/এএসআর