ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

চৌদ্দ বছরেও প্রস্তুত হয়নি ট্যানারি শিল্প পার্ক

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৭
চৌদ্দ বছরেও প্রস্তুত হয়নি ট্যানারি শিল্প পার্ক সাভারে নির্মাণাধীন ট্যানারি শিল্প পার্ক। ছবি: শাকিল

ঢাকা: দীর্ঘ ১৪ বছর ধরেও পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়নি চামড়া শিল্পনগরী। ২০০৩ সালে ‍অনুমোদন হওয়া এ প্রকল্প রাজধানীর অদূরে সাভারে ২০০৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কার্যত তা হয়নি। দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় ব্যয়ও বেড়েছে অনেক।

এমন পরিস্থিতিতে এ প্রকল্প শেষ করতে আরো সময় বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চামড়া শিল্প পার্কের কাজে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৫৪ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে মাত্র ৫৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় এখনও ৪৯৪ কোটি ৯৩ লাখ খরচ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি থেকে চামড়া শিল্পের আর্থিক অগ্রগতির রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
 
অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানায়, প্রকল্পের ব্যয় ঠিক রেখে সময় আরও এক বছর বাড়ানো হবে। কারণ জুন ২০১৭ সালের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ সম্পূর্ণ শেষ করা সম্ভব না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকছে জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
 
এ প্রসঙ্গে বিসিকের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. ইফতেখারুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র চার মাস। এ সময়ে প্রকল্পের সব কাজ সম্পূর্ণ হবে না। তাই আরও এক বছর বাড়বে  সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর কাজের মেয়াদ। আশা করা যাচ্ছে বাড়তি সময়ে প্রকল্পের সব কাজ সম্পূর্ণ হবে। তবে বর্তমানে প্রকল্পের কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো সম্পূর্ণ করা হবে বাড়তি সময়ে।
 
প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ না হলে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে বিসিকের পরিচালক বলেন, সাভারে ট্যানারি চালানোর মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু ট্যানারি স্থানান্তরও করা হয়েছে। আগের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) সঠিকভাবে কাজ করেননি। তাই নতুন পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন কাজের গতিও ভালো।
 সাভারে নির্মাণাধীন ট্যানারি শিল্পপার্ক
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাভারে ট্যানারি শিল্পপার্ক প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি কিছু বেশি হয়েছে। কিছু ভৌত কাজ হলেও টাকা অথবা বিল এখনও পরিশোধ করা হয়নি। যে কারণে ভৌত অগ্রগতির থেকে আর্থিক অগ্রগতি কিছুটা কম দেখাচ্ছে বলে জানায় আইএমইডি। প্রকল্পের বিল পরিশোধ করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক মিলে সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।
 
২০০৩ সাল প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিলো ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের মোট  ব্যয় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
 
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে ‍অনুমোদিত 'চামড়া শিল্প নগরী' প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০০৫ সালে। পরে প্রকল্পের সময় ২০০৭ সাল করা হয়। ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫৪৫ কোটি টাকা। পরে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১০ সাল নির্ধারণ করা হয়।
 
এর পরে একধাপে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ে। কিন্তু দ্বিতীয়বার সংশোধনের সময় প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সময়সীমাও বাড়িয়ে করা হয় ২০১৬ সাল। ব্যয় না বাড়িয়ে আবারও জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করা হয়। এই সময়েও সম্পূর্ণ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। ফলে আরও এক বছর  মেয়াদ বাড়ছে বলে জানায় শিল্প মন্ত্রণালয়।
 
প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা 'সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট' বা সিইটিপি এবং ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হচ্ছে না। ১৭ একর জমির উপর এটি চলমান।   এ কাজের বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।   ফলে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি শিল্প ইউনিট নির্মাণ কাজে আবারও বিলম্ব হচ্ছে। এতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ সাভারে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ না হলে ট্যানারি স্থানান্তর করাও কঠিন।

তবে কবে নাগাদ ট্যানারি শিল্পের কাজ শেষ হবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মোহাম্মদ তাসারফ হোসেন ফরাজী। অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাভার চামড়া শিল্প নগরীর কাজ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছে। দুই একটা কাজের আইটেম বাদে অধিকাংশই অগ্রগতি ভালো। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৭
এমআইএস/জেডএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।