ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

চামড়া শিল্পনগরীর বেহালদশা, দুর্ভোগে ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
চামড়া শিল্পনগরীর বেহালদশা, দুর্ভোগে ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাট বেহালদশা। ছবি: বাংলানিউজ 

ঢাকা (সাভার): কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ঈদের দিন বিকেল থেকেই কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের পাইকারি আড়ত ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া নিয়ে আসছেন। কিন্তু সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দূর-দুরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা। 

ঈদ মৌসুমে বিভিন্ন ট্যানারিতে চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরও দুর্ভোগের কমতি নেই। এখানে নেই পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রামের সুযোগ।

শ্রমিকরা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে।  

শুক্রবার (২৪ আগস্ট) চামড়া শিল্পনগরী ঘুরে দেখা যায়, এখানকার রাস্তা-ঘাট পুরোটাই ভাঙাচুরা এবং খানাখন্দে ভরা। এর উপর বিভিন্ন ট্যানারির ময়লা ও কেমিক্যালযুক্ত পানি ড্রেন ভরে রাস্তায় উঠে তলিয়ে গেছে পুরো এলাকা। এসব পানির উপর দিয়েই চলাচল করতে হয় শ্রমিকদের। ফলে খেয়ে না খেয়ে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন মৌসুমী শ্রমিকরা।
ট্যানারির কেমিক্যালযুক্ত পানি ড্রেন ভরে উঠছে।  ছবি: বাংলানিউজছাইদুর রহমান নামে এক শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, ঈদের দিন বিকেল থেকে তাদের ২২ জনের একটি দল ট্যানারিতে এসেছেন। যখন যে ট্যানারিকে চামড়া আসছে সেখানেই ডাক পড়ছে তাদের। চামড়া প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা চুক্তিতে তারা গাড়ি থেকে নামিয়ে সেই চামড়ায় লবণ লাগিয়ে দেয়। এভাবে গত কয়েকদিনে তারা ভালই কাজ করেছেন সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে। তাদের মতো এমন আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক প্রতিদিন এভাবেই কাজ করছেন এখানে। এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হলেও পয়সার জন্য তা মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, থাকা-খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। এখানে প্রাথমিক কোনো চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা না থাকায় বিষয়টি তাদের কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো মনে হচ্ছে।
ট্যানারির কেমিক্যালযুক্ত পানি ড্রেন ভরে উঠছে।  ছবি: বাংলানিউজ
এর আগে বার বার ট্যানারি শ্রমিকরা শ্রম আইন অনুযায়ী স্বল্পমূল্যে ক্যান্টিন চালু, আবাসন সমস্যার সমাধান ও হাসপাতাল স্থাপন, শিল্প নগরীর রাস্তায় পর্যাপ্ত বাতি, রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা দূর করাসহ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে এলেও সে অনুযায়ী বিসিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।  

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অংশগ্রহণ থাকলেও চামড়া শিল্পনগরীতে শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, হাজারীবাগের ৬০ একর জমিতে অবস্থিত ট্যানারিটি সাভারে দু’শ একর জমিতে স্থানান্তর করা হলেও এখানকার রাস্তা-ঘাটের বেহলাদশা, শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার সমস্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ট্যানারি শ্রমিকরা। এছাড়াও ট্যানারি শিল্পে কমপ্লায়েন্স না থাকায় বিদেশি ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ট্যানারির কেমিক্যালযুক্ত পানি ড্রেন ভরে উঠছে।  ছবি: বাংলানিউজঅন্যদিকে পুরো ট্যানারি এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার এমন নাজুক পরিস্থিতি পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় তা রাস্তায় উঠে আসছে। ফলে রাস্তা ও পরিবেশ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। ট্যানারি বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় পানি দূষিত হয়ে মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে।  

সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৫টি প্লট থাকলেও এখন পর্যন্ত ১১৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই মধ্যে রাস্তা-ঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সূচনীয় অবস্থা।  

এছাড়া কর্তৃপক্ষ সিইটিপির চারটি মডিউল দিয়ে পুরো ট্যানারি পরিচালনার কথা জানালেও এখনই তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ওভারফ্লো করে পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে চালু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।  

চামড়া শিল্পনগরীর টেকনিক্যাল কর্মকর্তা (ইলেকট্রিক্যাল) মীর মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, বিসিকের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাট সাময়িক ভোগান্তির কারণ হলেও এরই মধ্যে তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ঈদের মধ্যে রেডিমিক্স কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে অগ্রিম টাকা দিয়ে ভাঙাচুরা রাস্তা নতুন করে ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কিছু রাস্তায় ইট ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।