ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানাসহ নানা ইস্যুতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই পক্ষই ওয়াশিংটন ও মস্কোতে দুই দেশের দূতাবাস সচল করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
রিয়াদে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আলোচনার টেবিলে বসেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দেন। অন্যদিকে রুবিওর সঙ্গে ছিলেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ।
ইউক্রেন ইস্যুতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে শীতল যুদ্ধের দুই প্রতিপক্ষ। তিন বছর পর এখন সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে তারা এক টেবিলে বসল। তবে এতে ইউক্রেনকে রাখা হয়নি। ইউরোপে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোও আমন্ত্রণ পায়নি। কিন্তু অস্থির ভৌগোলিক পরিস্থিতিতে দুই পরাশক্তি এক টেবিলে। এত বড় অগ্রগতির কৃতিত্ব কার? ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনীতির?
জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্পের কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল পুরো পৃথিবীর দৃষ্টি কেড়েছে। গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ইস্যুতেও ট্রাম্পের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই যুদ্ধবিরতিতে নিজের কৃতিত্ব অবশ্য ট্রাম্প দাবিই করে বসেছেন। এবার যদি ইউক্রেন যুদ্ধ থেমেই যায়, তাহলে ট্রাম্প তা নিজের কূটনৈতিক সাফল্য বলেও দাবি করতে পারেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের আলোচনায় রাশিয়ারও দাবিদাওয়া আছে। ইউক্রেনের পেছনে থাকা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রতিটি দিনে রাশিয়ার খরচ দাঁড়িয়েছে ৫০০ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন ডলারে। অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে রাশিয়া এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান চায় বলে মস্কো জোর দিয়ে বলেছে। দেশটি আরও চায় যে, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে, নাৎসিবাদ ছাড়তে হবে এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এসব দাবি আদায় করতে পারলে রাশিয়াও লাভবান হবে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কেন সৌদি আরবকে বৈঠকের জন্য বেছে নিল? দুই দেশের আলোচনার জন্য সৌদি আরবকে অনুকূল জায়গা বলে উল্লেখ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এমন মন্তব্যকে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানেরই বিজয় বলা হচ্ছে। এমনিতেই সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো মিত্র।
তবে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক জোরদার করেছে। ট্রাম্প আর পুতিন দুজনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে, মোহাম্মদ বিন সালমান ছাড়া এমন আর কোনো রাষ্ট্রনেতা খুব সম্ভবত নেই। শান্তি আলোচনায় একজন শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার উত্থানের পেছনে ট্রাম্পের সঙ্গে তার মজবুত সম্পর্ক কাজে এসেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়াকে একঘরে করার পশ্চিমা চাপ মেনে নেননি মোহাম্মদ বিন সালমান। পৃথিবীব্যাপী জ্বালানি তেল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে তিনি পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি ২০২২ সালে জ্বালানি তেল উৎপাদন বাড়াতে বাইডেন প্রশাসনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তিনি রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছিলেন। তার বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের ফসল সম্ভবত এবার সৌদি আরব ভোগ করবে। গাজার ভাগ্য নিয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সৌদি যুবরাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, তার পূর্বপ্রস্তুতিও এখনই হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
ডেস্ক নিউজ