কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে অস্ত্রধারীদের হামলার ঘটনায় সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে দেশটির ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত।
পরমাণু শক্তিধর চিরবৈরী দুই দেশের এই সংঘাতে জড়ানো দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে যুদ্ধাবস্থার ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ না এলে এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ভারতের পদক্ষেপের সমালোচনা করে পাকিস্তানি টেলিভিশন জিও টিভির সিনিয়র বিশ্লেষক মজহার আব্বাস বলেন, পহেলগাঁও হামলার ব্যাপারে ভারত এখনো পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ দেয়নি। বরং না প্রমাণ দিয়েই আবার নতুন হামলা চালিয়েছে।
তিনি ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বলেন, ওরা সিনেমা বানিয়েছে, আমরা শুধু ট্রেলার দেখিয়েছি। ওরা যদি যুদ্ধ চায়, আমরা প্রস্তুত। ৭ মে পাকিস্তানের জন্য গর্বের দিন। ভারতকে আমরা শুধু যুদ্ধের ময়দানে নয়, কূটনৈতিক ও মিডিয়া যুদ্ধেও পরাজিত করেছি।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া একাধিক পোস্টে লিখেছেন, ভারতের একাধিক হামলা প্রমাণ করে, দেশটি আন্তর্জাতিক আইনকে তোয়াক্কা করছে না।
তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের শুধু প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকারই নয়, তার সক্ষমতাও রয়েছে। আর এখন আমরা সেটাই করছি।
পাকিস্তানি সিনিয়র সাংবাদিক হামিদ মীর মন্তব্য করেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৌশল বুমেরাং হয়েছে। ভারত দাবি করেছে তারা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেছে, কিন্তু ভিডিও প্রমাণ বলছে, সাধারণ নাগরিকরাই নিহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব বুঝে গেছে পাকিস্তান এই সংঘাত শুরু করেনি। ভারত সাধারণ মানুষকে টার্গেট করেছে, আর পাকিস্তান জবাবে ভারতীয় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। নৈতিক অবস্থানে পাকিস্তান এগিয়ে আছে।
হামিদ মীর আরও বলেন, ভারতের সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ‘সিমলা চুক্তি’ বাতিলের কথা ভাবা উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক আমেরিকান বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ভারতের এবারের হামলা ২০১৯ সালের চেয়েও বড় পরিসরে হয়েছে। পাকিস্তানের জবাব— ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা— সেটিও ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি বিস্তৃত।
তিনি সতর্ক করে বলেন, উত্তেজনা এখন এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে যা ২০১৯ সালের সংকটকেও ছাড়িয়ে গেছে।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দুই দেশেরই শক্তিশালী সেনাবাহিনী আছে, যারা পরমাণু অস্ত্র ছাড়াও সাধারণ সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পিছপা নয়। তাই উত্তেজনা আরও বাড়ার ঝুঁকি বাস্তব এবং তা দ্রুত আরও বাড়তে পারে।
সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি কূটনৈতিক ও মিডিয়া লড়াইতেও দুই পক্ষ সক্রিয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ না আসে, তাহলে এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এমএম