ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর শুরুর কথা (প্রথম পর্ব)

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৫
জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর শুরুর কথা (প্রথম পর্ব)

ঢাকা: প্রায়ই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে সংগঠনটির নৃশংসতার খবর। পশ্চিমা দেশগুলোসহ পুরো বিশ্বের মাথাব্যাথায় পরিণত হয়েছে এখন এই সংগঠন।



পৃথিবী জুড়ে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে এর নেটওয়ার্ক। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নামে সংগঠনটি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাসের জাল। বলছি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এর কথা।

সিরিয়া এবং ইরাকের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলই দখল নিয়ে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে স্থানীয় বাহিনী সেখানে ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছে নিজ মাটি এবং জনগণকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে।

সারা দুনিয়ার কপাল ভাঁজ ফেলেছে যে সংগঠন, তার গোড়ার দিতে তাকানো যাক এবার।

পুরো নাম ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য ল্যাভেন্ট (আইএসআইএল)। এটি ইসলামিক ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) বা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড আল-শাম নামেও পরিচিত।

আরবিতে এটি আদ-দাওলাহ আল-ইসলামিয়াহ ফি আল-ইরাক ওয়াশ শাম (দা’ইশ বা দায়েশ) নামে পরিচিত।

২০১৪ সালের ২৯ জুন সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে নিজ নামকরণ করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

তবে শেষ নামটির ব্যাপারে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। অনেক দেশ এবং সংগঠনের মতেই ইসলামিক স্টেট আসলে প্রকৃত ইসলামের বাহক কোনো সংগঠন নয়।

সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল বাগদাদি। তাকে মুসলিম জাহানের ‘খলিফা’ বলে মানে সংগঠনটি। ইসলামিক স্টেটের জন্মের কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম জানা প্রয়োজন জামা’আত আল-তাওহিত ওয়াল-জিহাদ সংগঠনটি সম্পর্কে।

কারণ এর থেকেই বর্তমান আইএস এর জন্ম। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসি’র বর্ণনা অনুযায়ী, আবু মুসাব আল-জারকাওই জর্দান এবং অন্যান্য সুন্নি জিহাদিদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলেন জামা’আত আল-তাওহিত ওয়াল-জিহাদ।

ওই সময় ওসামা বিন লাদেনের সামান্য অর্থায়নে এই সংগঠন আফগানিস্তানের হেরাতে তার প্রথম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলে। জর্দানের নাগরিক আল-জারকাওই আফগানিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন দেশটির হয়ে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে লড়তে।

তবে ততো দিনে সোভিয়েত বাহিনী দেশটি ছেড়ে চলে গেছে। ফলে যুদ্ধ না করেই দেশে ফিরতে হয় জারকাওইকে। এরপর তিনি আবার আফগানিস্তান যান হেরাতে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করতে।

পরবর্তীতে আল-জারকাওই’র প্রতিষ্ঠিত জামা’আত আল-তাওহিদ ওয়াল জিহাদ ইরাকে তার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় দেশটিতে শিয়া মসজিদ, সরকারি ভবন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর স্থাপনা এবং ইরাকি জনসাধারণের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে বেশ কুখ্যাত হয়ে ওঠে সংগঠনটি।

২০০৪ সালে আল জারকাওই আনুষ্ঠানিকভাবে ওসামা বিন লাদেনের আনুগত্য স্বীকার করেন এবং সংগঠনের নামকরণ করেন তানজিম কায়দাত আল-জিহাদ ফি বিলাদ আল-রাফিদায়িন বা মেসোপটেমিয় অঞ্চলে জিহাদি সংগঠন।
তখন এটি ইরাকের আল-কায়দা (একিউআই) নামেও বেশ পরিচিতি পায়। ২০০৫ সালের জুলাইতে আল-জারকাওইকে চিঠি লেখেন আল-কায়দার তৎকালীন উপপ্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি।
 
চিঠিতে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় ইরাক যুদ্ধে চার স্তরের পরিকল্পনা দেন তিনি। এগুলো হল- ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কার, সেখানে ইসলামি শাসন কায়েম, ইরাকের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতেও সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়া এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা।

ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় এই চার স্তরকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করা হয় জাওয়াহিরির চিঠিতে।

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে এই সংগঠন আরও কিছু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি  মুজাহিদিন সুরা কাউন্সিল বা নীতি নির্ধারনী কমিটি গঠর করে। একই বছর অক্টোবরে নিজ নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক (আইএসআই) নামধারণ করে।

এরপরই ইরাকের আল আনবার, দিয়ালা এবং বাগদাদে এর কার্যক্রম বেশ গতি পায়।

২০০৬ সালের ৭ জুন মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন আল-জারকাওই। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন মিশরীয় চরমপন্থী আইয়ূব আল-মাসরি।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।