ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মহাকাশে শারীরিক-মানসিক প্রভাব জানতে নাসার বছরব্যাপী মিশন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫
মহাকাশে শারীরিক-মানসিক প্রভাব জানতে নাসার বছরব্যাপী মিশন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দীর্ঘদিন মহাকাশে অবস্থান করার কারণে কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়বে তা জানতে ‘এক বছর মেয়াদী মহাকাশ’ মিশন হাতে নিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’। এ মিশনের অংশ হিসেবে ৩শ’ ৫০ দিন মহাকাশে অবস্থান করবেন নাসার দুই মহাকাশচারী।



শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে কাজাখস্তানের বেইকানুর কসমোড্রোম থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এ মিশনে অংশ নেওয়া মহাকাশচারীরা।  

শুক্রবার স্থানীয় সময় ৩টা ৪২ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আমেরিকান মহাকাশচারী স্কট কেলি এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী মিখাইল করনিয়েনকো।

নাসা জানায়, এ মিশনে মহাকাশচারীরা ৩শ’৫০দিন পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করবেন। দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার কারণে মানবদেহে কী ধরনের বায়োমেডিকেল প্রভাব পড়ে, সে বিষয়ে গবেষণায় মহাকাশ সংস্থাকে সহযোগিতা করতেই এ মিশন হাতে নিয়েছে নাসা। মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠাতে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।

তবে এটাই মহাকাশে সবচেয়ে বেশি সময় অবস্থান করার রেকর্ড হবে না। এর আগে  রাশিয়ান মহাকাশচারী ভ্যালেরি পোলিয়াকভ ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করেছেন। অর্থাৎ একাধারে তিনি চারশ ৩৮ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করেন।   

সাধারণত আইএসএস’র মিশন চার থেকে ছয় মাস স্থায়ী হয়। তবে এক বছর মেয়াদী এই মিশনে কক্ষপথে অবস্থান করার সময় মহাকাশচারীরা নতুন ধারণা অর্জন করবেন বলে ধারণা নাসা কর্তৃপক্ষের।       

স্কট কেলি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যখন আমি ছয় মাসের জন্য মহাকাশে অবস্থান করতে যাচ্ছি, আমার মনকে সেভাবেই তৈরি করেছি। আমি সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাচ্ছি। সময় শেষে আমি সেখান থেকে আবার বাড়ি ফিরে আসবো।

কিন্তু যখন এটা বছরব্যাপী হবে তখন মানসিক প্রস্তুতি আলাদা হবে। আমার মনে হচ্ছে আমি সেখানে যাচ্ছি কিন্তু আর কখনো ফিরবো না। অথবা এমন মনে হতে পারে যে আমি সেখানে জীবিত নাও থাকতে পারি।

বিজ্ঞানীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে শূন্য মধ্যাকর্ষণ শক্তিতে অবস্থান করার ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া এ কারণে পেশীর অবক্ষয় ও হাড়ের ক্ষয়ও হতে পারে।

এ গবেষণার অংশ হিসেবে স্কট কেলি ও তার মতো একইরকম স্বাস্থ্যের অধিকারী তার জমজ ভাই অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশচারী মার্ক কেলির স্বাস্থ্যের সঙ্গে তুলনা করবেন গবেষকরা।   

একটি লিখিত ‍বিবৃতিতে নাসার উপ-প্রধান বিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ কনড্রট বলেন, জন্মগতভাবে একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দুই জমজ ভাইকে এ গবেষণার জন্য পাওয়া একটি অনন্য সুযোগ। ‍একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দুজন মানুষকে এক বছর ধরে আলাদা আলাদা পরিবেশে রেখে তাদের শারিরিক পরিবর্তন বা প্রভাব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।   

এ গবেষণায় দুই ভাইয়ের রক্তের নমুনা নিয়ে তুলনা করা হবে। একই সঙ্গে তাদের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন বিষয়ে তুলনা করা হবে। এছাড়া মহাকাশে অবস্থানের আগের, অবস্থানকালীন এবং পরের সময়ের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক কী ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে তা নিয়ে গবেষণা করা হবে।

তবে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, ওই দুই ভাইয়ের খাবার খাওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একইরকম নয়।

এদিকে মার্ক কেলি জানিয়েছেন, আইএসএস’র খাবার খাওয়ার এবং একটি যন্ত্রের ওপর দিনে দুই ঘণ্টা দৌড়ানোর কোনো ইচ্ছা তার নেই। যেমনটি তার ভাই কেলিকে করতে হবে।

সিবিএস নিউজকে স্কট কেলি বলেন, যেহেতু মঙ্গলগ্রহের মিশনটি তিন বছরব্যাপী, সেহেতু দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ফলে কী ধরনের শারিরিক ও মানসিক প্রভাব পড়ে তা খুব ভালোভাবে জানা দরকার। আর সেটা জানা সম্ভব হবে এ বিষয়ে গবেষণা বা অনুসন্ধানের পরই।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।