ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১০ জনের মৃত্যুর খবর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৮
ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১০ জনের মৃত্যুর খবর তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। ছবি: বিবিসি

ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করা হয়েছে খোদ রাষ্ট্রীয় টিভিতেই। তবে কোথায় বা কখন ঘটেছে, তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

এর আগে ছয়জনের মৃত্যুর রিপোর্ট করা হয়েছিল, যার মধ্যে রোববার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে আইজেহ শহরে গুলিতে নিহত দু’জনের কথাও ছিল।

তেহরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীও (আইআরজিসি) ৪০০ জনকে গ্রেফতারের খবর স্বীকার করেছে, যার মধ্যে শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে তেহরানে সহিংসতার গ্রেফতারকৃত ২০০ জনও রয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শান্তির আহ্বান সত্ত্বেও সোমবার (০১ জানুয়ারি) পঞ্চমদিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তার প্রথম হস্তক্ষেপে প্রেসিডেন্ট রুহানি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, প্রতিবাদে সহিংসতা সহ্য করা হবে না।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তেহরানের এনগেহেলেব স্কয়ারের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ দমনে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। পশ্চিমের কেরমানশাহ ও খোরামাবাদ, উত্তর-পশ্চিমের শাহীনশাহর এবং উত্তরের শহর জানজানেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

একটি প্রধান বিক্ষোভস্থলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে  রোববার পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে- এমন ভিডিওচিত্র প্রচার করেছে বিবিসিও।

হাজার হাজার মানুষ ইরানের অধিকাংশ এলাকায় সরকারবিরোধী এ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন এবং দেশটির নতুন নতুন শহরে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাপক বেকারত্বের প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ইরানের দ্বিতীয় শহর মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করায় দ্রুতই সেটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। একই দিন বিক্ষোভকারীরা গ্রিন মুভমেন্টের বিশাল সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরে সহিংসতায় রুপ নেয়।

রাজধানী তেহরানশহ দেশটির বড় বড় শহর ছাড়াও বেশকিছু স্থানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের পদত্যাগ ও তাদের ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে খামেনির ছবিও  পুড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মূলত তরুণ ও পুরুষ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও চাইছেন তারা।

রাষ্ট্রীয় টিভির আগের রিপোর্টে ছয়জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হলেও শনিবার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর দুরদে দু’জনের মৃত্যুর জন্য সুন্নি মুসলিম চরমপন্থী ও বিদেশি শক্তিকে দায়ী করা হয়। একই শহরের অন্য দু’জনকে হত্যার ঘটনাকেও যখন দাঙ্গা হিসাবে বলা হয়। স্থানীয় একজন আইন প্রণেতা রাতের অন্ধকারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আইজেহ শহরে বাকি দু’জনকে গুলি করে হত্যার খবর জানান রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে।

বিক্ষোভ সংগঠিত করার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও নিষিদ্ধ করেছে কঠোরভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত দেশটির সরকার। তবে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমটি এখন বিক্ষোভের কিছু ফুটেজ সম্প্রচার শুরু করেছে। যদিও সেগুলোতে তরুণদের হামলা করতে এবং বিভিন্ন যানবাহনসহ ইরানের পতাকা পোড়াতে দেখা যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে এএফপি।

বিপ্লবী বাহিনী আইআরজিসি’র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়সারি আন্দোলনকারীদের ‘কঠিন হাতে’ দমনের হুশিয়ারি দিলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে সরাসরি রাজপথে দেখা যাচ্ছে না। দেশটির সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ নেতার সমর্থক নেতাকর্মীদের এ শক্তিশালী বাহিনীটি ৩৮ বছর আগে বিপ্লবে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যবস্থার সংরক্ষণে নিবেদিত। পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, তারা যদি বিক্ষোভ দমনে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িত হয়, তবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে দাড়াবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এএসআর
**
ইরানে বিক্ষোভ দমনে এবার সামাজিক নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।