ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সাগরে ২৭ ঘণ্টা সাঁতার কেটে অবিশ্বাস্য ফিরে আসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
সাগরে ২৭ ঘণ্টা সাঁতার কেটে অবিশ্বাস্য ফিরে আসা

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং সুনামির ঘটনায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ টোঙ্গা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সে দেশের এক ব্যক্তি বলেছেন, একদিনেরও বেশি সময় গাছের গুঁড়ি ধরে সাগরে ভেসেছিলেন তিনি।

গত শনিবার (১৫ জানুয়ারি) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং সুনামি দ্বীপদেশটিতে আঘাত হানে। টোঙ্গার আতাতা দ্বীপের বাসিন্দা লিসালা ফোলাউ (৫৭) ওই সময় সাগরে ভেসে যান।  আংশিক বিকলাঙ্গ হওয়ায় ঠিকমত হাঁটতে পারেন না তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান, প্রায় ২৭ ঘণ্টা গাছের গুঁড়ি ধরে সাগরে ভেসেছিলেন। কীভাবে বেঁচে ফিরেছেন তাও বর্ণনা দেন তিনি।

সুনামির পর টোঙ্গার রাজধানী নুকু’আলোফার সমুদ্র সৈকত

ফোলাউ বলেন, ঢেউয়ের পর ঢেউ আসতে দেখে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। জানতাম, তিনিই আমাকে রক্ষা করবেন। যখন পানিতে ছিলাম, মনে আছে আটবার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলাম। আমার পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। ঠিকমতো নাড়াতে পারছিলাম না। সমুদ্র আমাকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে পানির নিচে নিয়ে যাচ্ছিল।

ঠিক ওই সময় তিনি গাছের একটি গুঁড়ি খুঁজে পান। ফোলাউ বলেন, তীর থেকে আমার ছেলের ডাক শুনতে পাই। তবে আমি তার ডাকে কিছু বলতে চাইনি। কারণ, আমি চাইনি সে আমাকে খোঁজার জন্য সাগরে সাঁতার কাটুক।

তিনি বলেন, আমার ধারণা সমুদ্রে জীবন ও মৃত্যু আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তীরে পৌঁছাতে না পারছেন, ততক্ষণ আপনি জানেন না বেঁচে থাকবেন নাকি মারা যাবেন।

ফোলাউ জানান, ১৫ জানুয়ারি আতাতা দ্বীপে নিজের বাড়ি রঙ করছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার ভাই সুনামি আসছে বলে তাকে সতর্ক করেন। এরপর ছয় মিটারেরও বেশি উঁচু ঢেউয়ে ভেসে যান ফোলাউ ও তার ভাগনি। দুজনই একে অপরকে ডাকাডাকি করছিলেন। তবে কিছুক্ষণ পর ভাগনির ডাক শুনতে পাননি তিনি।

প্রথম ধেয়ে আসা ঢেউ থেকে বাঁচতে ফোলাউ একটি গাছে চড়েছিলেন। কিন্তু গাছ থেকে নামার পর আরেকটি ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরপর বড় বড় ঢেউয়ের মধ্যে ভেসে ছিলেন সারারাত। ভোরের দিকে তিনি পুলিশের একটি নৌকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তবে তারা ফোলাউকে দেখতে পায়নি।

ফোলাউ বলেন, যখন আটবারের মতো আমি পানির নিচে তলিয়ে যাই, ভেবেছিলাম পরের বার আর উঠতে পারব না। কারণ, আমি বাহুর ওপর ভর করে ভেসে ছিলাম। এরপর একটি কাঠের গুঁড়ি পেয়ে সেটি শক্ত করে ধরে ফেলি। ধীরে ধীরে সাত দশমিক পাঁচ কিলোমিটার সাঁতার কেটে মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে পৌঁছান ফোলাউ।

টোঙ্গায় প্রথম বিদেশি ত্রাণবাহী বিমানের অবতরণ

টোঙ্গায় এখন পর্যন্ত তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। অগ্নুৎপাতের কারণে সৃষ্ট সুনামি আঘাত হানার পর মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশ করে টোঙ্গা সরকার।

এতে বলা হয়, নজিরবিহীন দুর্যোগে দুই স্থানীয় এবং এক ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক অ্যাঞ্জেলা গ্লোভার (৫০) তার প্রিয় কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে ভেসে যান। তবে সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো অজানা। অগ্নুৎপাতের কারণে সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন কেবল কেটে যাওয়ায় বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপদেশটি। এতে ধ্বংসযজ্ঞের পুরো চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।  

বিদেশি সাহায্যকারী প্রথম জাহাজ হিসেবে টোঙ্গায় প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের একটি জাহাজ শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) পৌঁছায়। ওই জাহাজে আড়াই লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া নেওয়া হয়েছে দৈনিক ৭০ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করার মেশিন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটির জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাই প্রথম অগ্রাধিকার।

আরও পড়ুন:
টোঙ্গায় পৌঁছেছে প্রথম ত্রাণবাহী প্লেন
ছাইয়ের স্তূপ, টোঙ্গায় নামতে পারছে না ত্রাণবাহী বিমান

বাংলাদেশ সময় ১৫৪৪, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।