ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আমাদের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে: চীনা প্রেসিডেন্ট

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
আমাদের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে: চীনা প্রেসিডেন্ট

ঢাকা: চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং সহযোগিতা মহামারিকে পরাস্ত করার একমাত্র সঠিক উপায় হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। একে অপরকে পিছনে টেনে ধরা বা দোষারোপ করা এই মহামারি মোকাবিলায় কেবলই অপ্রয়োজনীয় বিলম্বের কারণ হবে এবং সামগ্রিক লক্ষ্যবস্তু থেকে আমাদের মনযোগ ভিন্নমুখী করবে।

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এই ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের অবশ্যই মহামারির ছায়া মুছে ফেলার জন্য এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধার এবং উন্নয়নকে জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে হবে, যাতে আশার সূর্যালোক মানবতার ভবিষ্যতকে আলোকিত করতে পারে।

তিনি বলেন, এক শতাব্দীতে কখনও দেখা যায়নি, বিশ্ব আজ এমন অনেক বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো, একটি নির্দিষ্ট সময়, ঘটনা, দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের সময়ের সুগভীর এবং ব্যাপক পরিবর্তনগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে শতাব্দীতে একবার দেখা দেওয়া মহামারির সঙ্গে একত্রিত হয়, বিশ্ব তাই অস্থিরতা এবং রূপান্তরের একটি নতুন সময়ের মাঝে নিপতিত হয়। কীভাবে মহামারিকে পরাস্ত করা যায় এবং কীভাবে কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব গড়ে তোলা যায়? এগুলো এখন বিশ্বজুড়ে বড় এ ইস্যুগুলো মানুষের সাধারণ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া এগুলো প্রধান ও জরুরি প্রশ্ন, যার উত্তর আমাদের অবশ্যই দিতে হবে। যেমনটি একটি চীনা প্রবাদে বলা হয়, 'পৃথিবীর গতিবেগ হয় বিকাশ লাভ করে বা হ্রাস পায়; বিশ্বের অবস্থা হয় অগ্রগতি লাভ করে অথবা পশ্চাদপসরণ করে। ' বিশ্ব সবসময় বৈপরিত্যের মধ্য দিয়ে বিকশিত হচ্ছে; বৈপরিত্যে ছাড়া, কিছুই থাকবে না। মানবতার ইতিহাস হলো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের এবং বিভিন্ন সংকটকে অতিক্রম করে উন্নয়নের ইতিহাস। ঐতিহাসিক অগ্রগতির যুক্তি অনুসরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং আমাদের সময়ের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে উন্নয়ন করতে হবে।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, সমস্ত উত্থান-পতন সত্ত্বেও, মানবতা এগিয়ে যাবে। আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস চক্রের তুলনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং কোন কিছুর মধ্যে সূক্ষ্ম ও ক্ষুদ্র পরিবর্তনও প্রত্যক্ষ করতে হবে। আমাদের সংকটের মধ্যে নতুন সুযোগ তৈরি করতে হবে, পরিবর্তনশীল দৃশ্যপটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে এবং অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুর্দান্ত শক্তি যোগ করতে হবে।

প্রথমত, আমাদের সহযোগিতার পথে যেতে হবে এবং যৌথভাবে মহামারিকে পরাস্ত করতে হবে। এক শতাব্দীতে একবারের মহামারির মুখোমুখি হয়ে, যা মানবতার ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি দৃঢ় যুদ্ধ করেছে। বাস্তবিক ঘটনাগুলি আবারও প্রমাণ করেছে যে বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের প্রবল স্রোতের মধ্যে, দেশগুলো প্রায় ১৯০টি ছোট নৌকায় আলাদাভাবে উঠছে না, বরং সবগুলোই এক বিশাল জাহাজে রয়েছে যার ওপর আমাদের সমন্বিত ভাগ্য নির্ভর করে। ছোট নৌকাগুলো ঝড় থেকে বাঁচতে পারে না, কিন্তু একটি বিশাল জাহাজ ঝড়কে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।  

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টাগুলোকে ধন্যবাদ, মহামারির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে বড় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, এটি একটি প্রলম্বিত মহামারি হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে, আরও ভিন্ন ভিন্ন ধরন নিয়ে পুনরুত্থিত হচ্ছে এবং আগের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি মানুষের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশগুলিকে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, ওষুধের গবেষণা ও উন্নয়নে সক্রিয় সহযোগিতা চালাতে হবে, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যৌথভাবে বহুবিধ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যের একটি বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। বিশেষ গুরুত্বের বিষয় হলো টিকাগুলোকে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা, তাদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, দ্রুত টিকা প্রদান করা এবং বিশ্বব্যাপী টিকাদানের ব্যবধান দূর করা, যাতে সত্যিকার অর্থে মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য এবং জীবিকা রক্ষা করা যায়।

তিনি বলেন, চীন এমন একটি দেশ যে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। চীন ইতিমধ্যে ১২০টিরও বেশি দেশে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় দুই বিলিয়ন ডোজ টিকা পাঠিয়েছে। এর পরেও, চীন আফ্রিকান দেশগুলোকে আরও এক বিলিয়ন ডোজ দেবে, যার মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন ডোজ দেওয়া হবে অনুদান হিসাবে। এছাড়া চীন ১৫০ মিলিয়ন ডোজ টিকা আসিয়ান দেশগুলিকে দান করবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের বিভিন্ন ঝুঁকির সমাধান করতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারকে উৎসাহিত করতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতি খাদ থেকে উঠে আসছে, তবুও এটি এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। জ্বালানি সরবরাহ টানটান রয়েছে। এই ঝুঁকিগুলি একটি অন্যটিকে জটিল করে তোলে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা বাড়ায়। বিশ্বব্যাপী নিম্ন মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং একাধিক কারণে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। বৃহৎ অর্থনীতিগুলো যদি তাদের মুদ্রানীতি কঠোর করে কিংবা উল্টো পথে চলে তাহলে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এর আসল অভিঘাত বহন করবে। চলমান কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালক, সামাজিক জীবনের নতুন পদ্ধতি এবং মানুষে-মানুষে বিনিময়ে নতুন পথগুলো অন্বেষণ করতে হবে, যাতে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সহজতর করা যায়, শিল্প ও সরবরাহ চেইন সুরক্ষিত এবং মসৃণ রাখা যায় এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের স্থির এবং দৃঢ় অগ্রগতি বৃদ্ধি করা যায়।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন সময়ের প্রবণতা। যদিও নদীতে বিপরীত স্রোতের অস্তিত্ব নিশ্চিত, তবে কেউই এটিকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হতে বাধা দিতে পারেনি। চালিকা শক্তিগুলো নদীর গতিকে শক্তিশালী করে, আর অন্যদিকে প্রতিরোধ এর প্রবাহকে বাড়িয়েও তুলতে পারে। ঠিক নদীর মতোই পথের বিপরীত স্রোত এবং বিপজ্জনক মাছের ঝাঁক সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন কখনোই পথভ্রষ্ট হয়নি এবং হবেও না। বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর উচিত সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদকে বহাল রাখা। আমাদের বাধাগুলি অপসারণ করা উচিত, দেয়াল খাড়া করা নয়। আমাদের উচিত উন্মুক্ত করা, বন্ধ করা নয়। আমাদের চাওয়া উচিত সংহতি, বিচ্ছেদ নয়। এটি একটি উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলার উপায়। আমাদের উচিত বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার সংস্কারকে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের নীতিতে পরিচালিত করা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কেন্দ্রে রেখে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখা। আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য পূর্ণ পরামর্শের ভিত্তিতে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকর নিয়ম তৈরি করা উচিত এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য একটি উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ তৈরি করা উচিত। এটি অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে আরও উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সবার জন্য কল্যাণকর করার এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণশক্তিকে সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করার উপায়।

আমাদের মধ্যে একটি সাধারণ বোঝাপড়া হলো, বিশ্ব অর্থনীতিকে সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যেতে, সামষ্টিক-নীতি সমন্বয় জোরদার করা অপরিহার্য। প্রধান অর্থনীতিগুলোর উচিত বিশ্বকে এক সম্প্রদায় হিসাবে দেখা, আরও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চিন্তা করা, নীতির স্বচ্ছতা এবং তথ্য আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক ও মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য, তীব্রতা এবং গতির সমন্বয় করা, যাতে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরায় ধস রোধ করা যায়। প্রধান উন্নত দেশগুলোর উচিত হবে দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা, নীতির প্রসারণ পরিচালনা করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব এড়ানো। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে বৈশ্বিক ঐকমত্য তৈরি করতে, নীতিগত সমন্বয় বাড়াতে এবং পদ্ধতিগত ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে।

তৃতীয়ত, আমাদের উন্নয়ন বিভাজন দূর করতে হবে এবং বৈশ্বিক উন্নয়নকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে, উত্তর-দক্ষিণ ব্যবধান বাড়ছে, পুনরুদ্ধারের গতিপথ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, উন্নয়ন চুত্যি-রেখা এবং প্রযুক্তিগত বিভাজনের মতো আরও অভিনব সমস্যা তৈরি করছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মানব উন্নয়ন সূচক কমেছে। বিশ্বের দরিদ্র জনসংখ্যা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি বেড়েছে। প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে। খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ওষুধ, স্বাস্থ্য এবং জনগণের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ক্ষেত্রে অসুবিধা বাড়ছে। কিছু উন্নয়নশীল দেশ মহামারির কারণে দারিদ্র্য ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে পতিত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও অনেকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, পথে যত বাধাই আসুক না কেন, আমাদের অবশ্যই একটি জন-কেন্দ্রিক উন্নয়নের দর্শনকে মেনে চলতে হবে, বিশ্বব্যাপী সামষ্টিক-নীতিতে উন্নয়ন এবং জীবিকাকে সামনে ও কেন্দ্রে রাখতে হবে, টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বিশ্বব্যাপী ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের জন্য আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতার বিদ্যমান প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সাধারণ কিন্তু ভিন্নধর্মী দায়িত্বের নীতিকে সমুন্নত রাখতে হবে, উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উন্নীত করতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে কপ-২৬ এর ফলাফল বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নত অর্থনীতিগুলোর উচিত তাদের নির্গমণ হ্রাসের দায়িত্ব পালনে নেতৃত্ব দেওয়া, তাদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা।

গত বছর, আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ পেশ করেছিলাম যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো যে জরুরি চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি তার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। উদ্যোগটি সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর যা সমগ্র বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত, যার লক্ষ্য হলো টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডার সাথে সমন্বয় সাধন করা এবং সারা বিশ্বে সাধারণ উন্নয়নকে জোরদার করা। চীন সকল অংশীদারের সাথে যৌথভাবে উদ্যোগকে বাস্তব রূপ দিতে এবং এ প্রক্রিয়ায় কোনো দেশ যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছে।

চতুর্থত, আমাদের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য লাভজনক ফলাফল অনুসন্ধান করতে হবে। আমাদের পৃথিবী আজ শান্তিপূর্ণ হওয়া থেকে অনেক দূরে; বিদ্বেষ ও পক্ষপাত উদ্রেককারী আড়ম্বরপূর্ণ ভাষার ব্যবহার প্রচুর। নিয়ন্ত্রণ, দমন বা সংঘাতের মতো কাজগুলো বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বৈব ক্ষতি বয়ে আনে, যা সামান্যতম কল্যাণকর নয়। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে সংঘর্ষ সমস্যার সমাধান করে না; এটা কেবলমাত্র বিপর্যয়কর পরিণতিকে আমন্ত্রণ জানায়। সুরক্ষাবাদ এবং একতরফাবাদ কাউকে রক্ষা করতে পারে না; তারা শেষ পর্যন্ত অন্যদের পাশাপাশি নিজের স্বার্থকেও আঘাত করে। আধিপত্য এবং উৎপীড়নের অনুশীলনগুলো আরও খারাপ, যা ইতিহাসের গতিধারার বিপরীতে চলে।  

মানবতার জন্য এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ হল শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য সমানভাবে লাভজনক সহযোগিতা। বিভিন্ন দেশ এবং সভ্যতা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একসাথে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং পার্থক্যগুলিকে দূরে সরিয়ে রেখে সাধারণ ভিত্তি এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য সমানভাবে ফলাফলের সন্ধান করতে পারে।

আমাদের উচিত ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করা, একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করা, মানবতার সাধারণ মূল্যবোধগুলোকে সমর্থন করা এবং মানবজাতির সমন্বিত ভবিষ্যতের জন্য একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলা। আমাদের উচিত সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপ বেছে নেওয়া, বাদ দেওয়ার   পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তি, এবং সব ধরনের একতরফাবাদ, সুরক্ষাবাদ, আধিপত্য বা ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
টিআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।