ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বাহেলা খাতুন মসজিদে তারাবি পড়তে আসছেন দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৩
বাহেলা খাতুন মসজিদে তারাবি পড়তে আসছেন দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা দৃষ্টিনন্দন বেলকুচির আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

সিরাজগঞ্জ: পবিত্র রমজান মাসে জুমা আর রাতের তারাবি পড়তে দূর-দূরান্ত থেকেও সিরাজগঞ্জ বেলকুচির আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে ছুটে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মসজিদটির কারুকার্য ও নান্দনিক সৌন্দর্য ইতোমধ্যে দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।


 
৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ মসজিদের নির্মাণশৈলী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন।

বেলকুচি পৌর এলাকার মুকুন্দগাঁতীতে সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কের পশ্চিমে আড়াই বিঘা জমির উপর আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। প্রয়াত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার নিজের অর্থায়নে ছেলে আমানুল্লাহ সরকার ও মা বাহেলা খাতুনের নামে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।  

কিন্তু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে ২০২০ সালের আগস্টে তিনি মারা যান । এরপর তার ছেলে আমান উল্লাহ সরকার মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে দৈনিক অর্ধশত শ্রমিক কাজ করে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছে।

নয়নাভিরাম দ্বিতল এ মসজিদের ওপরে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজের পাশাপাশি ছোট-ছোট আরও আটটি গম্বুজ রয়েছে। দু’পাশে রয়েছে ১১তলা সমতুল্য (১১০ ফিট) উচু মিনার। মসজিদের ভেতরে মার্বেল পাথর ও গ্রানাইড পাথর দিয়ে মোড়ানো দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ, যা নজর কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।

চারপাশে সাদা রঙের পিলার, সুউচ্চ জানালা, সাদাটে রঙের টাইলস। চত্বরে পরিকল্পিতভাবে লাগানো সবুজ ঘাস, ফুলের বাগান। সবকিছুই যেন অনন্য সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে দেয়।

মসজিদের পাশেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের থাকার জন্য কোয়াটার নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে পাঠাগার ও শৌচাগার। সেইসঙ্গে মসজিদের প্রবেশ পথের দুই সিঁড়ির পাশে কাঁচেঘেরা অটোফিল্টার করা পানি দিয়ে ওজুর ব্যবস্থা। এছাড়া ইতালি ও ইন্ডিয়া থেকে আনা উন্নতমানের মার্বেল পাথরসহ কাঠের কারুকাজে মসজিদের বিভিন্ন স্থানকে আকর্ষণীয় করতে নান্দনিক নকশার কাজ করা হয়েছে।

পবিত্র রমজান মাসে এ মসজিদে নামাজ পড়তে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। বিশেষ করে শুক্রবার জুমার নামাজের দিন মসজিদের বাইরে পর্যন্তও মুসল্লিদের নামাজ পড়তে হয়। তারাবি নামাজেও বিপুলসংখ্যক মুসল্লি আসেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আব্দুস সোবহান, শিমুল, শাহজাদপুর থেকে আসা হামিদুল্লাহ, এনায়েতপুরের আব্দুস ছালামসহ একাধিক মুসল্লি বলেন, এখানে নামাজ পড়তে মনটা তৃপ্ত হয়। তাই মাঝে মাঝেই নামাজ পড়তে আসি। মসজিদের বাইরের অংশটা খুব সুন্দর। ভেতরের কারুকার্যও অত্যন্ত সুন্দর। এ মসজিদে নামাজ পড়তে শান্তি লাগে।

আলহাজ রসুলদি নামে স্থানীয় এক মুসল্লী বলেন, মোহাম্মদ আলী সরকারের পরিকল্পনা ছিল দেখার মতো একটি মসজিদ করবেন। তিনি সেটা করেছেন। দু:খের বিষয় তিনি মসজিদটা উদ্বোধন করে যেতে পারেন নাই। এমন একটি মসজিদ পেয়ে আমরা গর্বিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মসজিদ দেখতে লোকজন আসে।

সাগর বিশ্বাস বলেন, শুক্রবার জুমা ও রমজানে তারাবিতে আমরা নামাজ পড়তে আসি। এ দুই সময় মুসল্লির সংখ্যা অনেক বাড়ে। জুমার নামাজে মসজিদের বাইরেও চলে যায় মুসল্লিদের কাতার। দূর-দূরান্তের মানুষের এমন জমায়েত দেখে আমাদেরও ভালো লাগে।

মসজিদের খাদেম মেজবাহ সরকার বলেন, এ মসজিদ উদ্বোধন হওয়ার পর এবার তৃতীয় রমজান চলছে। মালিকপক্ষ রমজান মাসে সুন্দরভাবে দেখভাল করেন। জুমার দিনে পূর্ণাঙ্গ মুসল্লি পাই।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মওলানা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মানুষেরা এ মসজিদের বিষয় জানে। এখানে শুধু নামাজই নয়, বয়স্কদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া হয়। রমজান মাসে খতম তারাবি চলছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি মসজিদ যেখানে খুব সুন্দরভাবে তারাবি পড়ানো হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় তিনশো রোজাদারকে ইফতার করানো হয়। তারাবির ১২ রাকাত শেষে হলে মেহমানদারির ব্যবস্থা রাখি। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদে নামাজ পড়ে মুসল্লিরা আত্মতৃপ্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।