ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

২০১৮ সালে ইজতেমার মাঠে সংঘর্ষ

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ, বিচার চায় তাবলীগের দুই পক্ষই 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
পাল্টাপাল্টি দোষারোপ, বিচার চায় তাবলীগের দুই পক্ষই 

ঢাকা: ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর  বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় মাওলানা সাদপন্থী ও মাওলানা জুবায়েরপন্থী দুই গ্রুপই বিচারের দাবি জানিয়েছে।  

জুবায়েরপন্থীদের দাবি, তাদের অন্তত ৫ হাজার সাথী সেদিন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল।

আর এই ঘটনায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার জড়িত ছিল। তারা সাদপন্থীদের বিচারের দাবি জানান।

অপরদিকে সাদপন্থীদের দাবি, মিথ্যাচার করে জুবায়েরপন্থীরা খুনিদের আড়াল করা অপচেষ্টা করছে। জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলায় দুজন মূলধারার সাথীর মৃত্যু হবার পরেও গণমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে সাদপন্থীরা হতবাক ও বিস্মৃত। তারা এও দাবি করেন এই ঘটনায় জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে হেফাজত ইসলাম পরক্ষো মদদ ছিল। সরকার যাতে এবিষয়ে সুষ্ঠু বিচার করে সে দাবিও জানিয়েছেন সাদপন্থীরা।  

রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে সাদপন্থীদের বিচার করার দাবিতে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ এর ব্যানারে জুবায়েরপন্থীরা সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলে অপরদিকে বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাদপন্থীরা দাবি করেন মিথ্যাচার করে যুবায়েরপন্থীরা খুনীদের আড়াল করা অপচেষ্টা করছে।  


২০১৮ সালের ঘটনায় যা বলছে মাওলানা জুবায়ের পন্থীরা :

সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জুবায়েরপন্থীরা সাদপন্থীদের বিচারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনটিতে আল মানহাল মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতউল্লাহ আজহারীর পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ ও হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা লোকমান মাজাহারী, মুফতি মাসুদুল করিম, মুফতি বশিরউল্লাহ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুবায়েরপন্থীরা হুজুর মুফতি আমানুল হক। তিনি বলেন, দিল্লির মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারী তথা সাদপন্থী নেতা ওয়াসিকুল ইসলামের কথায় ময়দানে প্রস্তুতিতে কর্মরত নিরীহ নিরস্ত্র তাবলীগের সাথী ও সাধারণ মুসল্লীদের উপর ধাঁরালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেদিন নৃশংস আক্রমণে আমাদের অন্তত ৫ হাজার সাথী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তারা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাদের থেকে টঙ্গী ময়দানের পশ্চিম উত্তর কোণে অবস্থিত কোমলমতি ছাত্র শিক্ষকদের কেউই রেহাই পায়নি।  

২০১৮ সালের এই ঘটনায় আওয়ামী সরকার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এমন দাবি করে মাওলানা জুবায়েরপন্থী মুফতি আমানুল হক বলেন, আমরা চাই জনগণের এই সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশরে মাধ্যমে অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ এর টঙ্গী ইস্তেমা ময়দানে সাদপন্থীদের নৃশংস হামলা ও হতাহতের ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন করবেন। অপরাধীদের শনাক্ত করবেন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

তিনি বলেন, আজকের বৈষম্যবিরোধী প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি হলো, সারা দেশ থেকে কীভাবে হাজার হাজার সাদপন্থী সন্ত্রাসী ঢাকায় জড়ো হলো? এবং কীভাবে টঙ্গীতে একত্র হলো? তা আপনারা তদন্ত করে খতিয়ে দেখুন, প্রকৃত সত্য জাতির সামনে পেশ করুন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করুন।

২০১৮ সালের ঘটনা নিয়ে যা বলছে মাওলানা সাদপন্থীরা: 

মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগ ও মাদরাসার ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলায় দুজন মূলধারার সাথীকে হত্যা করার পরেও গণমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে আমরা হতবাক ও বিস্মৃত। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে সত্যকে আড়াল করে তারা যে মিথ্যাচার করেছেন তার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সেদিন ১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে টঙ্গীর ময়দানে মাদরাসার ছাত্রদের নৃশংস হামলায় ঘটনাস্থলে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী একজন তাবলীগের সাথী মারা যান। পরবর্তীতে ১মাস পর হাসপাতালে আহত আরেকজনে মূলধারার তাবলীগের সাথীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন সাথী ও মাদরাসার ছাত্র নিহত না হওয়ার পরেও মূলধারার তাবলীগের সাথীদের নিহত হবার ঘটনাকে নিজেদের লোকবলে চালিয়ে দেয়ার লাশের এই রাজনীতি কতোটা ঘৃনীত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু জুবায়েরপন্থীরা বরাবরের মতোই এই দুজনকে তাদের লোক বলে চালিয়ে খুনিদের আড়াল করতে হীন ষড়যন্ত্র করে আসছে। এছাড়া মাঠে ময়দানে ও ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্যা ছাত্র হত্যার কল্পকাহিনি এরা বলে মানুষকে উসকে দিচ্ছে। সেদিন মাঠের পাশের টয়লেটের ছাদ থেকে তাবলীগের সাথীদের উপর মাদ্রাসার ছাত্ররা ইট পাটকেল দিয়ে বৃষ্টির মতো হামলা চালালে হাজারো তাবলীগের সাথী  গুরুতর আহত ও দুজন সাদ কান্ধলভীর অনুসারী নিহিত হন।

এতে আরও বলা হয়েছে, পরের দিন ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার তাবলীগের মূলধারার মুরুব্বিরা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিটে সংবাদ সম্মেলন করে নিহিত ঈসমাইল মণ্ডলের পরিচয় তুলে ধরেন। সে সময় শহীদ ঈসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ আহমদ মণ্ডলও সেখানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সামনে নিজের পিতার হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন। ঈসমাঈল মণ্ডল ও শহীদ শামছুদ্দীন বেলাল নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের সাথী ছিলেন। নিহিত ইসমাইল মণ্ডল এর ছেলে জাহিদ হাসান বাদী হয়ে জুবায়েরপন্থীদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মূল খুনিদের আড়াল করতেই মূলত ৬বছর ধরে গণমাধ্যম, ওয়াজমাহফিলে, মিম্বরে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে আসছে একটি চিহ্নত মহল। সম্প্রতি তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আড়াল করতে রাজধানীতে ভুয়া পোস্টার সাটানো ও পুরো সংবাদ সম্মেলনে চরম ও জঘন্য মিথ্যাচার ও বানেয়াট নির্লজ্জ কাহিনী বর্ননা করে নিজেদের জুলুম নির্যাতন হত্যা আড়াল করার হীন চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই ৫ দিনের জোড় ও ইজতেমার আগে তারা এসব মিথ্যাচারের পথ বেঁচে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আমরা প্রসাশন ও মিডিয়াকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সত্য প্রকাশের অনুরোধ করছি।

এতে আরও বলা হয়েছে,  বিগত পতিত সরকারের সহযোগিতায় সারাদেশে ৫জন মূলধারার সাথীদের জুবায়েরপন্থীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। মসজিদে মসজিদে মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাবহার করে জুলুম নির্যাতন করে, তাবলীগের ইজতেমা, টঙ্গীর ময়দান, কাকরাইল মারকাজ ও বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিগত সরকারের দোষর হয়ে বৈষম্য করে একপক্ষকে কোণটাসা করে এবং তাবলীগে বিশ্ব আমীর সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসতে বাঁধা প্রদান করে। ফ্যাসিবাদ সরকারের দীর্ঘ ৬ বছর একচাটিয়া বৈষম্যে শিকার হয়ে তাবলীগের মূলধারার সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা বিগত ইজতেমার মায়দানে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবী করেন।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মূলধারার দাওয়াতের কাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সেদিন পহেলা ডিসেম্বর মূলত তাদের চূড়ান্ত মহড়া ছিল। এর পূর্বে হেফাজতে ইসলাম এর সরাসরি হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকবার কাকরাইলের মুরুব্বিদের মারধর ও প্রকাশ্যে তাবলীগের মূলধারার সকল কার্যক্রম গায়ের জোরে বাঁধা দেয়া হয় । হেফাজতের বয়োবৃদ্ধ আমীর মরহুম আহমদ শফী সাহেবকে মাঠে নামিয়ে সারাদেশে ওজাহাতি সম্মেলন করে বিগত সরকারের মদদে বিভিন্ন জেলা ইজতেমাসহ দফায় দফায় একপক্ষের সকল কাজ নিষিদ্ধ করণ ও বাঁধা দেয়া হয়। দেশের সকল মসজিদের মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাবহার করে মূলধারার সাথীদের উপর আক্রমণ  ও সর্বিশেষ টঙ্গির ময়দানে মূলধারার পূর্ব ঘোষিত ৫দিনের জোড় টেকাতে মাদরাসার ছাত্রদের মাঠে নামানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেদিন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগীতায় সরকার টঙ্গীর ময়দান বুঝে নিলেও একমাস পরেই স্থানীয় সাবেক এমপি জাহিদ হাসান রাসেলের প্রতক্ষ মদদে জুবায়েরপন্থীদের এককভাবে টঙ্গীর ময়দান বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ ও সকল জুলুম নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি আমরা। পাশাপাশি এই চিহ্নিত মহলের বিষয়ে সরকার ও প্রসাশনকে সজাগ থাকার অনুরোধ করে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ গত ৫নভেম্বর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের ঠিক ৩মাসের মাথায় মহাসমাবেশ করে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছিল। মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে ১লা ডিসেম্বর এর খুনিদের আড়াল করার পাশাপাশি কেন তারা বারবার দেশকে অস্তিতিশীল করার চেষ্টা করছে তা খাতিয়ে দেখার জোড় দাবি জানাচ্ছি।

আপনারা জানেন, আমরা বিশ্বের দু'জন শীর্ষ আলেম পাকিস্তানের মুফতি তকী উসমানী ও ভারতের দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানীর মধ্যস্থতায় তাদের সকল মিথ্যাচার এর উপর সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালঞ্জ করেছি। ধর্মীয় সংঘাত উসকে না দিয়ে বসে আলোচনা ও মিমাংসার প্রস্তাব করে দেশের পরিবেশকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা বরাবরের মতোই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিবপশকে অস্থিতিশীল কপন করতে চায় তা খাতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৪
ইএসএস/এমএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।