ইসলামি বিধানে, খাওয়া-পরার খরচ বাদ দিয়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যমানের সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে। সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আরও ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তাদের ধন-সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। ’ -সূরা জারিয়াত: ১৯
জাকাত নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেমন ইসলামে সুস্পষ্ট বিধি বিধান আছে, তেমনি জাকাত বণ্টনের ক্ষেত্রেও ইসলামে নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির খেয়াল-খুশি কিংবা মর্জি চলতে পারে না। বর্তমানে অনেক জায়গায় যেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেকে জাহির করার জন্য লোক দেখানো পদ্ধতিতে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি ও অর্থ দেয়া হচ্ছে তা মোটেও ইসলামসম্মত নয়। জাকাত হলো ধনীর অর্থে গরিব মানুষের হক বা অধিকার। জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কিংবা অবজ্ঞার ভাব প্রদর্শন করা যায় না।
জাকাত দেয়ার পদ্ধতি হলো জাকাতের হিসাব সম্পন্ন করে, দরিদ্র মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কাছে জাকাত দাতা নিজে বা নিজের লোকদের মাধ্যমে প্রাপ্য অর্থ পৌঁছে দেয়া। নিজের বাড়ির সামনে অপমানজনকভাবে কাঙ্গালের মতো লাইনে দাঁড় করিয়ে নিম্নমানের শাড়ি-লুঙ্গির মাধ্যমে জাকাত প্রদানের বিধান ইসলামে নেই।
জাকাত প্রদাতা তো জাকাতের অর্থের মালিক নন। তাহলে তিনি কী করে জাকাতের অর্থ দিয়ে নিম্নমানের শাড়ি-লুঙ্গি কেনার সিদ্ধান্ত নেন? যারা জাকাতের অর্থের মালিক তারাই নির্ধারণ করবেন জাকাতের অর্থ দিয়ে তারা কি কিনবেন?
এমতাবস্থায় পবিত্র কোরআনে বর্ণিত পন্থায় জাকাত আদায় করতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাকাত বোর্ড ও দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। জাকাত বোর্ডের বিবৃতি ও আলেমদের অভিমতে বলা হয়েছে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে গরিবদের দাঁড় করিয়ে শাড়ি-কাপড় বিতরণ করে জাকাত আদায় হবে না।
তাদের অভিমত, ইসলামের বিধান হলো, ডান হাত দান করলে বাম হাতে যেন জানতে না পারে। সেখানে জাকাতের মতো ফরজ ইবাদত এভাবে লোক দেখিয়ে মাইকিং করে দিলে তা আদায় হবে না।

শোলাকিয়ার ঈমাম আরও বলেন, জাকাতের নামে ৫০ হাজার টাকায় ১০০ শাড়ি না কিনে পুরো টাকাটাই একজন দরিদ্রকে দেওয়া উচিত। যাতে সে এই টাকা বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। পরের বছর যেন নিজেই জাকাত দিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী বলেন,

জাকাত দেয়ার বর্তমান প্রবণতা বন্ধ করে একটি স্বাধীন জাকাত বোর্ড গঠন করে তার মাধ্যমে জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের ব্যবস্থা করে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন মাওলানা আইয়্যুবী।
বনানী কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মুফতি মাসুম আহমদ বলেন, জাকাত প্রদানের বর্তমান পদ্ধতি সরাসরি অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড। জাকাত এভাবে দেয়ার বিধান ইসলামি শরিয়তে কখনো ছিল না। কিছু স্বার্থান্বেষী বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্য এমন ব্যবস্থা করে। বলতে পারেন এটা এক ধরনের ভণ্ডামি।
তিনি বলেন, জাকাত দিতে হবে বলা হয়েছে। যেকোনো দান দিতে হবে ডান হাত দেবে বাম হাত জানবে না। আর জাকাত হলো এটা এখরাজুল মাল। জাকাততো আপনাকে বের করে দিয়ে আসতে হবে। নেয়ার জন্যতো লাইন ধরানোর দরকার নেই। প্রত্যেকে যার যার জাকাত নিজস্ব চিন্তা অনুযায়ী বিভিন্ন হকদারের কাছে পৌঁছে দেবে।
মুফতি মাসুম আরও বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের একটা মাধ্যম হলো জাকাত। নিম্নমানের একটা শাড়ি একটা লুঙ্গি এগুলো দিয়েতো দারিদ্র্য বিমোচন হলো না। বরং নির্ধারিত পন্থায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আয়বর্ধক কাজে তাদের জাকাত দেয়া যেতে পারে। বর্তমান জাকাত প্রদানের পদ্ধতি সরাসরি কোরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামি শরিয়তের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহ শহরের মো. শামীম তালুকদারের নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরিতে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ভোর ৫টায় প্রচণ্ড হুড়াহুড়ি ও ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ২৭ জন নিহত এবং অর্ধশত নারী-পুরুষ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনা প্রায় বছরই ঘটে থাকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও অতীতে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘন্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
এমএ/